Wednesday 13 April 2011

ভ্রমণ- তপ্তপানী-গোপালপুর

তপ্তপানী-গোপালপুর

             লেখক- মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী


- কংকডা, কংকডা.. অছি কংকডা....
হাঁক শুনে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে, একে টপকে তাকে ডিঙিয়ে একবারে দৌড়ে এলাম ট্রেনের দরজায়। মনে-মনে যা ভাবছি- তাই কি? ঠিক। দেখি বেশ কটা সামুদ্রিক কাঁকড়া জালিকাটা ঝুলিতে নিয়ে হেঁকে যাচ্ছে একজন মেছো গন্ধের মানুষ। ওদিকে ইকড়ি-বিকড়ি কাঁকড়াগুলো হাঁচড়-পাঁচড় একে অন্যের গা বেয়ে উঠছে-নামছ-বাইছে...... ব্যস, আপাততঃ আমার এটুকুই ঢের। ইতিপূর্বে না দেখা দৃশ্য, অচেনা কংকডা হাঁক আর পিচকালো মানুষটা আমায় এক পলকে উড়িষ্যার কোলে তুলে নিল। রাতে ঘুমতে-ঘুমতে কখন যে পা রেখেছি এদেশে তার জানান দিল এই ভোরবেলা। গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে বালুগাঁও স্টেশনে। আমি কিছু ভেবে ওঠবার আগেই দেখি নুনেপোড়া চেহারাটা আমার মন ধুয়ে দিয়ে সরে যাচ্ছে দূরে।

কোথাও একটা যাব স্থির করার পর থেকেই আমার ঘুম নেই দুচোখে, ওদিকে ভয়ও ভরপুর। মনের মধ্যে বাজি-বারুদের চুলবুলী মানেই আমার কাছে তা প্রশ্ন চিহ্নের মত!!!!! কিছু অঘটন ঘটতে যাচ্ছে অন্যদিকে, এমন বিশ্বাস বসে গেছে ভিতরে। জীবনভর এতই ঠকঠকঠক ঠকানি..... তবু অগ্রাহ্য করলাম  সেই কু-ডাক। রোদরঙা বালুমাখা ঠেউ খুব যে আমায় টানছিল তা নয়, আসলে যাবই এমন চাওয়া ছিল আর দুদিনের ছুটি। ব্যস্, চালাও পানসী বেলঘরিয়া। অনেকে মিলে যাচ্ছি-যাব-র বিস্তর ঘোটালা সামলে, টিকিট কাটতে গিয়ে দেখলাম আপনি আর কোপনিতেই যাত্রি সংখ্যা শেষ। অগত্যা.... যাব যখন ভেবেছি তখন দুজনে-দুজনে একলাই নাহয়....

একলা মানে একলাই। স্বামী-স্ত্রী আবার একান্ত কবে হল? এজন উত্তরে গেল তো ও দক্ষিণে, ও-জন পূবে তো এ পশ্চিমে। আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াই, জেদের, ভিন্ন মতের লড়াই লড়তে-লড়তে যে ক্ষণটুকু একান্তের, তাকে হয় সার্চ লাইটের আলোয় ফেলে অণ্বেষণ, নয় এমনিতর প্রকৃতির মধ্যে নিয়ে ফেলে েলফেলফপপপপআঁতিপাঁতি খোঁজা। আশায় বাঁচে চাষা প্রবাদে আস্থা রেখে দুজনেই স্থির করেছি যাওয়ার। সোজা চলে গেলাম উল্টোডাঙা স্টেশন, তারপর কাল বাদে পরশু বেরহামপুরের টিকিট কেটে গদাম করে চড়ে বসলাম চেন্নাই মেল। হুট বলতে যচ্ছি মানেই ভুলের একশো সম্ভাবনা। ফেরার টিকিটও পেতে হবে। মনে আশঙ্কা- যদি না পাই? কাউন্টারের জানলায় নাক লাগিয়ে গলার শিরা ফুলিয়ে তাই চেঁচালাম-
- ফার্স্ট মার্চের ফেরার টিকিট যদি থাকে, তবেই দাদা ছাব্বিশেরটা........
- আরে চেঁচাচ্ছেন কেন, আস্তে বলুন.... আছে। এমনিতেই মেছো বাজার তায়.....
- ঠিক আছে, ঠিক আছে....
বাব্বা, অবশেষে যাচ্ছি.... ভাবটা মনে ঢোকা মাত্র সব ক্ষমা হয়ে গেল। টিপনী কাটা মানুষটার বকুনী কানে পৌঁছলই না। আমি তখন মাদার টেরিসা- ক্ষমার অন্য নাম। ভেবেই রেখেছিলাম, 27 আর 28-শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিন থাকবো তপ্তপানী, দ্বিতীয় দিন গোপালপুর, ও তৃতীয় দিনের সন্ধ্যায় চেন্নাই মেল ধরে মিঞা-বিবি ফিরব চেনা ছন্দের ঘর পানে।

টিকিট কেটে থেকে আহা কি ফুর্তি মনে। একদিন বাদ দিয়ে ট্রেন অথচ তর আর সয় না। যেন কখনো কোত্থাও যাইনি.... এই প্রথম ট্রেনে উঠব, এই প্রথম সাগর দেখব, এই প্রথম রেঁধে নিয়ে যাওয়া খাবার খেতে-খেতে দৃষ্টি অগম্য জানলার কাচে গাল পেতে তারা খুঁজব..... এক্কেবারে গ্যাদগ্যাদে অবস্থা যাকে বলে। বেড়ানোর কথায় এই চেহারার সঙ্গে সাক্ষাত্ আমার প্রায় প্রতিবার ঘটে। বদলাতে পারিনি নিজেকে, চাইওনা। এ্যাড্রোনালিন গ্রন্থির এই ক্ষরণে আমি তাজা হতে থাকি বরং দিন-প্রতিদিন। এবার তোড়জোড়। বেশী বেশী গোছগাছ করতে চাইলেই বা হবেটা কি, মোটে দুজন যাচ্ছি- দুদিনের জন্য। দু-এক সেট জামা-পত্তর নিতে না নিতেই গোছানো শেষ। এবার পড়লাম খাবার নিয়ে। ঘরে খাই রুটি-চচ্চড়ি অথচ ট্রেনে চাই মেথি পরাঠা, চিকেন কষা, মিষ্টি.... আমি সত্যিই আদেখলে। আসলে মনের মধ্যে গুটিসুটি বসে থাকা ছুটিটাকেই আমি যে চাটুপুটু দিই, তা জানি। জানি, জানি, এর সবটা আমি জানি- তবু করি। যাকে বলে একদম ছেলেমানুষীর ছত্রিশভাজা। এজন্যই বেড়াবার ভাবনা মাথায় এলে আমি এত উত্তেজিত হই। এই কেজো কলকাতায় কি করে সম্ভব ঐ ছত্রিশভাজা হওয়া? 

ট্রেন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায়, আমরা বেরিয়ে পড়লাম সময় হাতে নিয়ে। কতজন আসছে-যাচ্ছে এটা দেখতেও বেশ লাগে। পর্যটকের মুখ, সঙ্গী, ভঙ্গী, লাগেজ, অপেক্ষার ধরণ.... এই সবটার মধ্যে দিয়ে আমি মানুষগুলোকে খুঁজি।

বেরিয়ে প্রথমেই বাগবাজারের ফেরীঘাটে, তারপর লঞ্চ পেরিয়ে সাড়ে ছটায় স্টেশন। দুজনের কাঁধেই ছোটখাট সাইড-ব্যাগ, তার মধ্যেই বিশ্ব। ভারহীন নির্ঝঞ্ঝাট পৌঁছে গেলাম নতুন প্ল্যাটফর্ম। যতক্ষণ অবধি নির্দিষ্ট কামরার নির্দিষ্ট সীটে বসে নির্দিষ্ট টিকিটটাকে নিরীক্ষণ না করছে, ততক্ষণ অবধি আমার সঙ্গীজনের শান্তি নেই। তার আগে অবধি ব্যাজার, সবেতেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা তেএঁটে ভাব। এই এনকোয়্যারিতে খোঁজ, পর মূহুর্তেই ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্মে আসছে গবেষণা, লিস্ট টাঙানোর গাফিলতি অনুমানে রেলঅলাদের বাপান্ত....  এ চেহারা আমার চিরচেনা। তাই ওতে মন না দিয়ে মেতে গেলাম নিজের সঙ্গে নিজে। দেখতে থাকলাম ব্যস্তসমস্ত আসা-যাওয়া, অভিব্যক্তি, মানুষজনের আলাপ। কেউ বেড়াতে যাচ্ছে, তার মুখ-চোখের চেহারার সঙ্গে কতই অমিল যে ইন্টারভ্যু দিতে যাচ্ছে তার। কেউ যাচ্ছে ছেলেপুলের কাছে হয়তো অনেকদিনের যাচ্ছি-যাব’-র বাহানা সামলে। কেউ বহুদিন কাটিয়েছে এই প্রবাসে, তারপর চেষ্টা-চরিত্রের গুছানো ছুটিতে নিচ্ছে বাড়ির পথে উড়াল। প্রত্যেকটা মুখের আয়নায় তাদের আকাঙ্খার ছায়া দুলছে টুলটুল। এই দেখাটা, এই চেনাটাও আমার কাছে বেড়ানো.... অন্যভাবের বেড়ানো। কি যে ভাল লাগে আমার ছায়া তিরতির মুখগুলোর ওপর ঐ ঝুঁকে পড়া রামধনুকে ছুঁতে। পড়তে ইচ্ছে করে তাদের ভিতরের ভাষা, যা আপাত অন্যমনস্কতার হাত ধরে আপাততঃ বসে আছে প্রতীক্ষায়। হঠাতই আচম্বিতের চল-চল...ট্রেন দিয়েছে...শুনে ঘোর কাটল ও শেষ হল পরিভ্রমণ। তেঁনার সমস্ত রকম এনকোয়ারি শেষ, মুখের ভাবে এখন ভোম্বলনাথ ত্রিকোনোমিতির আঁক। এবার সীট-পত্রর খুঁজে বসা গেল কোনমতে। হ্যাঁ, কোনমতেই, কেননা ট্রেন যতক্ষণ না রওনা দেয়, ততক্ষণ মানুষজনের উত্তেজনার শেষ থাকেনা। স্থিতু হবে কি- দেশি-বিদেশী ব্যাগ, ছেলের ক্যারাম, টেনিস রাকেট, কোলেরটির সফ্টটয় সব ঠিকঠাক সান্টিং করতে হবে না। গলদঘর্ম হয়ে, চশমার ডাঁটি খুলে, একে গুঁতিয়ে, তাকে খেঁকিয়ে সেসবের গতি করার সময়কালটা সত্যি ভয়াবহ। সঙ্গে গোটা সংসার, খেলাধূলো, রোজের অভ্যাসকে এভাবে বয়ে বেড়ানো... উফ, কোথায় মজা? বলে লাভ নেই, খাবারের স্বাদ নেবার মতই বেড়ানোর স্বাদও অন্য অন্য স্বাদ-মুকুলে অন্য অন্য মজায় থাকে এটা বুঝেছি বেশ। ট্রেন নড়ে উঠতেই শরীরও নড়েচড়ে যেই ডিসব্যালান্স, সেই গোছানিপত্র বন্ধ। দম ধরে বাকীদের অপেক্ষা শুধু সেই সময়টুকুর। তারপর তো-
- পুরী?
- না, তপ্তপানী।
- ধুর, একটা চৌবাচ্চায় খানিকটা গরমজল.... কি দেখবেন?
- কত কিছু... জঙ্গল, নির্জনতা, গাছের ফাঁক দিয়ে পথে পড়ে থাকা আলোর আঁকিবুকি?
- সে তো অফ সিজনে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেলেও...
ঐ যে বললাম, ভিন্ন অনুভবের ভিন্নজন কথা ভিন্নতর স্বাদমুকুলের। হাতে গরম তার প্রমাণ দাখিল হতেই আমি জানলা দিয়ে বাইরে তাকাই আর তারা ব্যাগের থেকে শশা, পেয়ারা, চকলেট.....

এবার মন গেল এক মুসলমান দম্পতির দিকে। ট্রেনের সাইড বাঙ্কের উপর-নীচে তাদের বার্থ.... নামবে বেরহামপুর। কলকাতার পার্ক সার্কাসে বাড়ি, যাচ্ছে ছেলের কাছে। এর আগেও গেছে কবার কিন্তু এবার ছেলে-বৌমা নিয়ে চিল্কা যাবার প্ল্যান। যদিও বেরহামপুর আমাদের সকাল সাড়ে সাতটায় পৌঁছনোর কথা, তবু ওঁদের গন্তব্য জেনে নামতে হবে-নামতে হবে-র টেনশান কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেল। আস্বস্ত মনে সীটের ওপর কাগজ বিছিয়ে নিয়ে- কপোত-কপোতী মোরা মুখোমুখি বসিলাম ও আহারাদি সাঙ্গ করতঃ যাইলাম নিশ্চিন্তির শয়ন আয়োজনে।

আমি শুয়েছিলাম লোয়ার বাঙ্কে আর আমার তিনি মাঝে। সবে ঘড়ির কাঁটা টেনে টুনে দশের ঘরে, উল্টোদিকের বার্থ থেকে তখনই নাক ডাকার বিপুল নির্ঘোষ। কিছুক্ষণ শুয়েছিলাম অথচ ঘুম তো দূর শান্তি নেই একটুকুও। এদিকে ফিরলে কুটুস ওদিকে ফিরলে কাটুস.... কি জানি কিসের কামড়ে একদম ছটফটিয়ে মলাম। তায় সহযাত্রীর নাসিকা বাদ্যে মনে ঈর্ষা মেঘেরও ঘনঘটা। কি যে কামড়াচ্ছে বুঝেই পাচ্ছি না। চলন্ত ট্রেনে মশা? একটু যে হাত-পা মেলে টান টান হবো, তারও কি উপায় আছে? আমার ওপরেই মাঝের বার্থের লোয়ার পার্টটা দেখি বিলকুল ছাল-চামড়া ছাড়ানো। হাত তুললেই কাঁটা-স্প্রিং-ছোবড়ার তীব্র জেহাদি আক্রমণ। প্যাঁট-প্যাঁট করে শরীরের কোথাও না কোথাও ফুটে চলেছে, সারা শরীর চুলকুনী সহ জ্বলুনির জ্বালায় জেরবার। নির্ঘুম ঐ মধ্যরাতে শুরু হল আজব চিন্তার আনাগোনা। ঐ ছোবড়া থেকে ঝুরঝুর করে পড়ছে না কি ছারপোকা? নিশ্চই তারা আমাকে পেয়ে রক্তের উত্সবে মেতেছে, অপরিচিত স্বাদ পেতে-পেতে খুনী নেশায় পেয়েছে.... যদি ম্যালেরিয়া হয়, ফাইলেরিয়াও তো হতে পারে, ডেঙ্গু! কোথায় শুনেছিলাম যেন ওসব মশাবাহিত রোগ। কি জানি... ছারপোকাদের ওপর খুব একটা গবেষণা কর্ম কি দেখেছি? নাঃ, শুয়ে থাকা গেল না। মনের মধ্যে হাজারটা খুশী-খুশী ভাবনা আনলাম, খাসাডিহায় ক্যাম্প ফায়ারের চুলবুলী স্মৃতিতে গেলাম, তবু বাস্তব ঝক্কি কি এড়ানো যায়? গেলনা। বসবই বা কোথায়? সব সিটিং বার্থ এখন স্লিপিং চেহারায় কনভার্টেড। বসলাম ঘাড় গুঁজে নিজের বার্থেই, বাইরের অন্ধকারে চেয়ে... ঢুলেঢুলে....  অস্বস্তি শুধু গায়ে নয়, শুরু হয়েছে পেটেও। লোভীদের যা হয় আর কি। শরীরের খাদ্যযন্ত্র শক্ত-পোক্ত খাবার পেয়েছে, সঙ্গে অনিদ্রার অত্যাচার। এইবার সে বেচারীর হজম করাবার প্রচেষ্টার কাছে আমার চুপচাপ থাকা তো দায় হয়ে দাঁডাবেই। পেটের মধ্যে নানান গোলযোগ, বাদ্যি-কাঁসির নানান ধানাই-পানাই নিয়ে ভোরবেলার অপেক্ষায় উদগ্রীব রইলাম। যুদ্ধ করতে-করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তা ভাঙল শেষে কংকডা হাঁকে। এবার মানুষটা দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যেতেই বাঃ, বাইরে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। একটা শান্ত স্টেশনের ওপর ভোরবেলাকার রোদ, আলাভোলা দিশপাশ, মনে হেঁকে যাওয়া শাব্দিক উচাটন, মানুষজনের মুখে নির্লিপ্তির ওড়না.... ঝিম ধরে যাচ্ছিল আমার। দেখতে-দেখতে গাড়ি ছেড়ে দিল, এসে বসলাম নিজের জায়গায়। প্রায় সবারই ঘুম ভেঙেছে ও বার্থগুলো সিটিং পজিশনে কনভার্টেড.... ফের। আমার উঠে যাওয়ার ফাঁকে এক ওড়িয়া দম্পতি দেখি দিব্যি দখল নিয়েছে আমার সীটের। ওদের দেশে এসে ওদেরই সঙ্গে তর্কে.... না বাবা না, বসুক, এসেই যখন গেছি। ইচ্ছে করলে উঠিয়ে দেওয়াই যায়, কিন্তু কি হবে সারাক্ষণ ঔচিত্যের লড়াই লড়ে? ফাঁক গলে যে মণিমুক্তো কত গড়িয়ে যায়- সেদিকে দেখিনা।

এই দম্পতি মনে হল সদ্য বিবাহিত। ওদের পাশে আমি একটু পশ্চাত্ ঠেকাতে পেরেই ধন্য। মানুষ পড়ার জার্নীটাও আমার খুব পছন্দের এক জার্নী কিনা, সুতরাং.... তারা পচর-পচর করে আপনমনের কচকচিতে, আমি বুঝছি কচুপোড়া। অল্পস্বল্প কোথাও যেখানে বাংলার সঙ্গে মিল, সেই ফাঁকটুকুর মধ্যে দিয়েই চুরি করে শুনছিলাম। মনে হল মেয়েটি বাপের বাড়ি যাচ্ছে আর ছেলেটি যাচ্ছে তাকে রাখতে। বৌকে ছেড়ে আসতে হবে অথচ ইচ্ছে নেই হলে যেমন দুঃখী-দুঃখী লাগে, তেমনই তার ভাষা, হাব-ভাব। আর মেয়েটি? ভরপুর এনজয় করছে বরের কাতরতা। ওড়িয়ারা খুব পান খায়, মেয়েটিও খাচ্ছিল। লাল টুকটুক ঠোঁটে, লাল শাড়ি লাল সিঁদুরে মাখামাখি মেয়েকে বেশ লাগছিল দেখতে। আমাদের পৌঁছনোর জন্য পড়েছিল আরো দুঘন্টার পথ। এই সময়টুকু ওদের আহ্লাদী বিরহ-বিলাস দেখতে-দেখতেই কেটে গেল। দুম করে কখন যেন এসে গেল বেরহামপুর, আমি তখনো তাদের নয়া সুরের গানে.... অন্যমনে। 





নামো, নামো... এক্ষুনি ট্রেন ছেড়ে যাবে। বাস্তবের পথ-বিলাসী সঙ্গীজনের হাঁকপাকানীতে হঠাত্ করেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি.... ট্রেন মিলিলে যাচ্ছে দুরে। ওভারব্রীজ ক্রশ করে বাইরে এলাম। ফেব্রুয়ারীতেই রোদে বেশ তেজ, স্টান্ডে এসে দাঁড়াতে সব ছেঁকে ধরল। অটোঅলারা কেউ বলে তপ্তপানী যাবেন? দুশো টাকা। গোপালপুর যিব্ব? একশো কুড়ি টঙ্কা। এরই মধ্যে আবার গোটা কয়েক সাইকেল রিক্সাও প্যাঁকোর-পোঁকর ভেঁপু বাজিয়ে হাজির। কেউ বলে- বসিস্টান্ড যিব্ব?কেউ বলে- টিক্কে দূর অছি, কেউ বলে- পঁচিশ টঙ্কা লাগিব। আমাকে আর কেউ বলতে দেয়না, ভাবতেও দেয়না। বুঝেই পাচ্ছিনা বাসে যাব না অটোয়। ঠিক এই রকম জায়গাগুলোয় এসেই আমার সঙ্গীজনের খেল খতম। তার অপার আনন্দ বরং এ্যাংজাইটি আর টেনশনে। কি করব ভাবতে যেই একটু সময় নিয়েছি, সেই দেখি এক করিতকর্মা চালক হাত থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে গুছিয়ে ফেলেছে রিক্সায় আর ঠেলেঠুলে আমাদের উঠিয়ে নিল তাতে। দ্বিধাগ্রস্থতা থেকে মুক্তি পেয়ে আমিও বাঁচলাম। পর্যটকের দোনামনার ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়াই যে বুদ্ধিমানের কাজ, এতকাল সওয়ারী টেনে-টেনে রিক্সাওলার এই বোঝাটা ভালই হয়েছে দেখলাম। বেশ চডবড়ে রোদ উঠেছে। রিক্সা চালাতে গিয়ে কষ্ট হবে জেনেও রিক্সাওয়ালা মাথার ওপরের হুডটা তুলে দিল। যেই সে আমার কথা ভাবল অমনি অজান্তে আমার মধ্যেও সে জায়গা করে নিল দিব্যি। ভাড়া মেটাতে গিয়ে খুশী-খুশী বাড়তি দিলাম যখন, তখন নিজের মধ্যের আর্দ্র মানুষটাকে খুঁজে দেবার জন্য প্রণত হলাম তার প্রতি। বেরহামপুর জায়গাটা কেমন, তার একটা হাল্কা আন্দাজ পেলাম স্ট্যান্ডে আসার পথে। রিক্সায় উঠতেই মন গিয়েছিল আশে পাশে। জায়গাটা একেবারেই একটা মফস্বলী শহর। একটু এগিয়ে চওড়া রাস্তা ছেড়ে রিক্সা সরু গলি পথে গেল। কখনো আবার বাস রাস্তাতেও ফিরছিল তবে বেশীটাই সরু গলির সমাহার। জানিনা ওটা শর্টকাটের হিসেব ছিল কিনা, তবে কিছুক্ষণের যাত্রায় মনে হল চওড়া-সরু মিলিয়ে বেরহামপুরের এটাই মূল চেহারা। মিনিট পনেরোর যাত্রাশেষে এসে পৌঁছলাম বাস আড্ডায়। রিক্সাওয়ালা আমাদের টিকিট কাউন্টারের সামনে নামিয়ে দিয়ে ঘাম মুছতে-মুছতে গেল। দেখি বিচ্ছিন্নভাবে কাছে দূরে দাঁড়নো কিছু বাস, মিনিবাস। মাথা ফাটা রোদের কেরামতিতে প্রাণ যায় যায়। একটা সেড খুঁজে নিয়ে আগে দাঁড়ান গেল, তারপর মুখে জলের ঝাপ্টা দিয়ে, দু ঢোঁক গলায় ঢেলে গুটিগুটি গেলাম কাউন্টারে। ভিতরের লোকটি নীচু মুখে টাকা গুনতে-গুনতে, ঝুলে থাকা চশমার ওপর দিয়ে তাকিয়ে বলল-
- কোথায়?
- তপ্তপানী।
- জন?
- দুজন।
- একশো কুড়ি।
ব্যাগ থেকে টাকা বার করতে-করতে জিজ্ঞেস করলাম-
- কটায় ছাড়বে?
- দুটোয়।
এ্যাঁ? এখন সবে সাড়ে নটা.... গরমে দুটো অবধি এই হতশ্রী জায়গায় কি করব? হাঁকপাঁক করে বললাম-
- দাঁড়ান দাদা দাঁড়ান, আমরা এখুনি যেতে চাই।
- ঠিক নটায় একটা ছেড়ে গেল, আপনারা কোথায় ছিলেন?
- ইস্, জানিনা যে... কলকাতা থেকে আসছি। আর কি কোনোভাবেই....
- এটা পুরোন বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে দিনে মোট দুবারই তপ্তপানীর গাড়ি ছাড়ে।
- এখন উপায়?
- এক কাজ করুন, আরেকটা রিক্সা নিয়ে চলে যান নতুন বাস স্ট্যান্ড। ওখান থেকে বেসরকারী বাস ছাড়ে, গাড়ি পেয়ে যেতেও পারেন।
পেয়ে যেতেও পারেন মানে এখানেও সেই ভবিতব্য ভরসা। এতো ভ্যালা অনিশ্চয়ের রাজ্যে এলাম....
বিপাকের মাশুল দিয়ে রিক্সা ধরে ফের নতুন বাস আড্ডায় এলাম। এবার রিক্সাতে শুধু চাপলাম আর নামলাম। হাঁটা রাস্তার মধ্যেই ছিল জায়গাটা। তা যা হোক্, এখানে দেখি বাস, মিনিবাস, ট্রেকারের ছড়াছড়ি।

কলকাতা থেকে আসার সময় একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করে এসেছিলাম, যে হাজার অসুবিধেতেও ট্যাক্সি কিংবা ট্রেকার নেব না। বাসে না ঘুরলে সেই জায়গার চরিত্রকে ঠিকঠাক ছোঁয়া যায় না। ট্রেন থেকে নেমেই ব্যক্তিগত বাহন বুক করে নিয়ে আলগোছের বেড়ানোয় আমার তীব্র অনীহা। উপায় না থাকলে আলাদা, কিন্তু একশো অপশন যখন আছে। সুতরাং নিরুপায় তিনিও আপাততঃ আমার পিছুপিছু.....

এবার নতুন বাস স্ট্যান্ডের কাউন্টারে শুনলাম- এখন কোন গাড়ি নেই, তবে একটা বাস ছাড়ছে যেটা দিগপন্ডী অবধি যাবে। দিগপন্ডী থেকে ঘনঘন তপ্তপানীর বাস.....

ওফ্, এই হয়তো, নাকি-র চক্কর মুক্তি যে কখন মিলবে কেজানে। তেড়েফুড়ে রোদ উঠেছে বলেই যা বিরক্তি। নাহলে বেড়াতে বেড়িয়েছি নতুন-নতুন কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে চাই বলেই তো। তপ্তপানী মনে হল খুব জরুরী জায়গা নয়। পুরনো বাসস্ট্যান্ডে দুটোয় একটা বাস তবু ছিল, আর এখানে আড়াইটের আগে কিছু নেই। পাগল নাকি, এই চড়বড়ে রোদে কত ভাজা হব? বাস আড্ডার যা হাল... মানুষজনের চরিত্র পড়ার বাতিক আমার মাথায় উঠল। কেউ ঝগড়া করছে, কেউ খৈনি ডলছে, কেউ গাড়ির পিছনে ছুটছে.... আর আমি ওদিকে নেই। মন এখন নিজের সঙ্গে জুড়ে গেছে চেপ্পে। পৌঁছতে হবেই এবং তা খুব তাড়াতাড়ি। নাহলে দুটো দিনের প্রথম দিনটা ঝরাপাতার মতন খসে পড়লে কি চলে? উঠে পড়লাম দিগপন্ডীর বাসে। কন্ডাক্টর ভালই, আমাদের দেখে ট্যুরিস্ট-ট্যুরিস্ট লাগছিল বোধহয়, নাহলে ভিড়ের মধ্যে ব্যাবস্থাপত্র করে সামনের সীটে বসতে দিল কেন? এমনও হতে পারে যে একঘেয়ে সওয়ারী দেখতে-দেখতে ক্লান্ত চোখ বেড়ুয়া পাবলিক পেয়ে উত্তেজিত। তা যাই হোক্, আমরা সুবিধে পেলাম। যাদের তুলে আমাদের বসাল তাদের কোন দ্বিরুক্তি নেই। নির্বিবাদে পিছনের দিকে চলে গেল। আমার খারাপই লাগল- আহা, গরীব বলে কি বসবার হকদারীটাও নেই? পরে ভেবে দেখলাম নেই, সত্যিই নেই। হকের গদি আঁকড়ে থাকার বুঝদারীটা নেই যেহেতু, অশিক্ষার ফাঁক গলে হকদারীটাও হাওয়া। হেনস্থাকেও চিনে নিতে জানতে হয় শিক্ষা দিয়ে। তা নেই যেই, অসম্মানকে চিনল না আর আমরা দিব্যি বসে-বসে প্রকৃতি বিভোরতা নিয়ে চললাম। মানবিকতা বা চেতনার রোদকে আপাততঃ আড়াল করা ছাড়া রাস্তা নেই.... বেড়ানোটাই নাহলে মাটি হবে যে। অশিক্ষার চোরাবালী মনে যত প্রশ্ন তুলবে, ফুরফুরে মন তত দূরে সরবে। না বাবা, রিং-রিং করে ভিতর সারাক্ষণ গাইছে- হাতে মোটে দুটো দিন। জোর করে ভাবনা এড়িয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম। মিনিট পনেরো যেতে না যেতেই তৃষিত চোখ ভরপুর সবুজে গেল। বাস গিয়ে পড়ল শষ্য-শ্যামল ধরণীর কোল ঘেঁষা রাস্তায়। কাছে দূরে পাহাড়ের ছবি- শাড়ির পাড়ের মতন ঘিরে আছে নদী, ধানক্ষেত, খড়ের ঘরকে জাপ্টে মাঝে নিয়ে। কিছু পরে পরেই সেসব হারিয়েও যাচ্ছে ও আবার হাজির হচ্ছে দুচোখের আঙিনায়। হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধাঁ ধাঁ ছুটছে বাস, ভিতরে ওলটপালট, হল্লা... সুবিধা আমাদেরই, যত তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায়। এক-একটা গাঁ-গঞ্জ আসছে, গাড়ি থামছে, কোলে-কাঁখালে ছেলেপুলে, বোঁচকা, কোদাল, আরো কত কি জিনিস-পত্র নিয়ে মানুষ উঠছে নামছে- গাড়ি আবার ছুটছে। ছুটতে-ছুটতে একসময় গাড়ি হাঁপ ছাড়ল এসে দিগপন্ডী-তে। ব্যাগপত্র তেমন কিছু নেই, তাই হুট বলতেই নেমে পড়লাম ও কাছে-পিঠে কোথাও কোনো বাসের টিকিও নেই। এও এক মফস্বলী গাঁ। পানের দোকান, মিষ্টির দোকান, গাড়ির ব্যাটারী, জুতো, চা, ফল মায় সর্ষে খোলের দোকান সুদ্ধু নিয়ে এলাকা নিতান্তই সাদামাটার দৈনন্দিন চেহারা। পুরো যাত্রাপথে মনে মনে ভাবছিলাম কোনো বাস-স্ট্যান্ডে যাচ্ছি। কিন্তু কোথায় কি? নামার পরই আশাহত আমি লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে গিয়ে ধরলাম কন্ডাক্টরকে।
- এটা বাসস্ট্যান্ড তো নয় ভাই।
- নয় তো কি, একটু দাঁড়ান।
- কিন্তু বেরহামপুরে যে আমায় বলল-
- কি বলল? মনে করে দেখুন, বলল দিগপন্ডী থেকে বাস পাবেন। আপনি নিজেই যদি... 
- বলেছিল অনেক বাস পাবেন।
- মহা ব্যস্ত-বাগীশ তো আপনি.. এইমাত্র নামলেন, একটু অপেক্ষা করুন।
- আরে আপনি তো বাস নিয়ে চলে যাচ্ছেন, তারপর এই দিগশূ্ন্যপুরে দাঁড়াব কতক্ষণ....
- রসুলপুর থেকে যে বাস আসছে তা দিগপন্ডী হয়ে তপ্তপানী দিয়ে যাবে... বাসে যাবেন, আবার ধৈর্য্যও ধরবেন না.... ছটফট করলে হবে?

যে কন্ডাক্টর বাসে অমন ভালবেসে বসিয়ে ছিল, ওমা, নামানোর পরই কেমন যেন পর-পর....
ধুস্। ধমক খেয়ে একদম ফুস হযে গেলুম আমি। কোথায় স্ট্যান্ড থেকে আগেভাগে উঠে জানলার ধারে বসব স্বপ্নে ছিলাম, সেই কিনা এখন সর্ষে খোলের গন্ধগেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি....
কেজানে কতক্ষণ? রোদের দহন অসহ্য হচ্ছে, ব্যাজার মুখে এলাম একটা মিষ্টির দোকানে। দোকানী বলল এইমাত্র নাকি তপ্তপানীর বাস বেড়িয়ে গেছে, পরেরটা আধঘন্টা বাদে। এ তো বেশ ভাল খেলা দেখছি, যেখানেই যাচ্ছি শুনি এইমাত্র বেড়িয়ে গেছে.... এই কথাতে চিড়বিড়ানিটা আরো বাড়ে জানে বলেই কি মানুষ এমন খেলা খেলে, না উল্টোদিকের অসহায় মুখচ্ছবিটা দেখে ভিতরে খুব আরাম বোধ হয়? জানিনা। কি আর উপায়, চলে যেখন গেছে তখন অপেক্ষাই সই। টুকটুক করে ভিতরে ঢুকলাম ও বিখ্যাত ছানাপোড়া অর্ডার করে টুকিয়ে-টুকিয়ে তাই নিয়ে সময় কাটাতে থাকলাম। এভাবেই বা কতক্ষণ? পনেরো, কুড়ি, তিরিশ মিনিট? নাঃ, বাসের দেখা নেই। ইতিমধ্যে সারাঅঙ্গে ওড়িয়ায় লেখা নাম নিয়ে অন্ততঃ সাত-আটটা বাস এসেছে-গেছে আর তাঁতের মাকুর মত আমিও দৌড়াদৌড়ি সেরে ফেলেছি। শেষে মিষ্টান্ন ভান্ডার এর লাগোয়া পানওয়ালার প্রাণে দয়ার উদয় হল। ডেকে বলল- ততোপানী যিব্ব? ক্লান্ত আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলায় সে আপন ভাষায় গড়াগ্গড় কি সব বলে গেল। ভাষা না বুঝলেও তার সহযোগী মনোভাবের সুর বুঝতে অসুবিধে হল না। ঠান্ডা হয়ে বসতে বলল ও বাস এলে ডেকে দেবে যে, এটাই তার কথা। আমি এবার খুশী-খুশী কৃতজ্ঞতার প্রকাশ স্বরূপ একটা পানই কিনে ফেললাম। বাঃ, বেশ সেজেছে। এখানে জলবায়ুর কারণে পানের এই স্বাদ না মশলা ব্যবহারের পদ্ধতিতে- মনে মনে এই সংক্রান্ত গবেষণা চালাতে-চালাতে একসময় মুখের পানও ফুকুত্। এবার? বাজল প্রায় সাড়ে এগারোটা। রাস্তার উল্টোদিকে মুদিখানার দোকান। এবার কি ওইখানে.... ভাবতে-ভাবতেই হৈহৈ রৈরৈ করে পানওয়ালার চীত্কার। অদূরে দাঁড়ানো বাস থেকে তখন মাথায় বোঁচকা, কোলে বাচ্চা, কাঁখালে মুরগী নিয়ে মানুষ নামছে তো নামছেই। বাপরে, ভিতরে এত ছিল? এটাই তাহলে তপ্তপানীর বাস। তা বেশ, ছুটতে-ছুটতে ওঠা গেল। সব বাসের কন্ডাক্টার তো আর এক রকম হবে না... এও নয়। ভরাভর্তি বাসে উঠে ইতি-উতি নজর চালাতে লাগলাম, সীট-ফীট যদি মেলে.... দেখি বেশীর ভাগ বাইরের দিকের সীটে লোক বসে অথচ জানলার দিকটা ফাঁকা। ওরে বাবা, মনে ফুর্তি নিয়ে হাঁকুপাঁকু আমি এগোতে থাকলাম। হায়, কাছে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। সীটের পায়ের কাছে এক বোঝা কাঁঠাল পাতার মাঝখানে একটি হুমদোপানা রামছাগল গুছিয়ে বসে পাতা চিবোচ্ছে আর বাইরের দিকের সীটে বসা যে লোকটি জিম্মাদার, তার হাতে ঘন্টি বাঁধা দড়ি। মানুষটি নির্বিকার... নিস্পৃহতায় অর্ধলোচন। রীতিমত দু দুটো সীটের টিকিট কেটে সে উঠেছে ও ছাগলের জন্য দিয়েছে আরো কিছু বাড়তি। সুতরাং.....   সুতরাং এই জানা ও দেখাটা একদম অন্য হয়ে এলো আমার কাছে। বাসে করে না গেলে এ জিনিস কি কখনো পাওয়া হত? ভাল লাগা ফের ফিরছে মনে। ইতিমধ্যে বসার জায়গা পেয়ে গিয়েছি, চোখ ফেলেছি জানলা দিয়ে বাইরে। সেই একই রকম গাঁ-গঞ্জ পেরিয়ে যাচ্ছি- দূরের পাহাড় ঘন্টা খানেকের মধ্যেই নিকট হল। গাড়ি গোঁ-গোঁ শব্দে উঠছে, এই ডানে বাঁক নেয় তো পরক্ষণেই বাঁয়ে- থামাথামির বিশেষ বালাই নেই। সামনের দিকে দেখতে-দেখতে একটা অদ্ভুত ভাল লাগায় জড়িয়ে যাচ্ছি। হঠাত্ই এক জঙ্গুলে বাঁকে ঘ্যাচাং করে গাড়ি দাঁড়াল.... কানে কন্ডাক্টরের ততোপানী-ততোপানী হাঁক নিয়ে এসে পড়লাম তপ্তপানী। নেমে দেখি কোথাও কিচ্ছু নেই, সামনে কিশোরীর সিঁথির মত আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে দূরে আর উলোঝুলো মেয়ের না আঁচড়ানো চুলের মতন কালচে সবুজ থৈথৈ জঙ্গল চারদিকে। পথ ধরে এগোতে থাকলাম, এগোতে থাকলাম, দেখি একবোঝা কাঠকুটো মাথায় নিয়ে একজন কাঠুরে জঙ্গল থেকে বেরোচ্ছে। দৌড়ে তাকে ধরলাম-
- ও.টি.ডি.সি-র পান্থনিবাস যিব্ব।   
ব্যস, এটুকুতেই আমার ওড়িয়ার দৌড় শেষ। ভাগ্যিস সে বুঝল। হাত তুলে দেখিয়ে দিল রাস্তাটা। সামনে কিছুটা এগিয়ে ডানহাতে আরো সরু একটা রাস্তা গেছে ভিতরদিকে যার শেষ প্রান্তে পান্থনিবাস। পাহাড়ি ঢালে ছোট ছোট বিছিন্ন কিছু দোতলা-তিনতলা ঘরদোর। এরই একটায় জায়গা হল আমাদের। হয় অফ-সিজন নয় আজ ভোট বলেই বোধহয়, মানুষজন প্রায় নেই। ডবল বেডের রেন্টে ম্যানেজার মশাই আমাদের দিলেন একটা ফোর বেডেড রুম। কোনমতে স্নান সেরে বিকেল ছোঁয়া দুপুরে ছুটলাম ডাইনিং হল-এ। বেচারীদের রাতের রান্নার তোড়জোড় তখন, তারই মধ্যে কোনমতে....

আমার আর তর সইছিল না, আবার বেরোলাম পথে। হরিণঘরে গেলাম- যেটা একটা পার্ক। ছুঁয়ে দিলেই ঝুঁকে পড়ছে এমন লজ্জাবতী লতা, বিশাল গাছ আর বন্য পারিপার্শ্বিকতার মাঝখানে হরিণদের ঘিরে রাখা এলাকা। সব মিলিয়ে বেশ একটা কেয়ারলেস কেয়ারফুল বিউটি। পিছনে পাহাড়, চোখের সামনে হরিণ, প্রায় নাকের ওপরে উইঢিবি নিয়ে একটা আলতো অনাদর, এক অন্যমনস্ক গোছানোপনা। সন্ধ্যা নামার আগেই এবার তপ্তপানী-র দিকে গেলাম। সত্যি বটে..... ছোট্ট একটা ডোবার মত ধোঁয়া ওঠা জায়গা, জলের রং সবুজ। স্থানীয় মানুষজন ধাঁই-ধপাধপ কাপড় কাচছে, দুই বিদেশি মেয়ে-পুরুষ হেলান দিয়ে বসে গাছের গোড়ায়। ঘাটের সিঁড়ি পিছল, জুতো খুলে শুধু পা-টুকুনিই ডোবালাম। কুন্ডে যাবার প্রবেশমুখে দুই থাবাপাতা সিংহ আছে (যা ওড়িষ্যার সব মণ্দিরেই থাকে) বরং এর আকর্ষণ বেশী। যার নামে জায়গার নাম, সে হতাশ করলে কি হয় তপ্তপানীর প্রকৃতি ভরে আছে তার আশালতায় জড়ানো জংলী বৈভবে। বিকেল পাঁচটা বাজল, শালপাতার ছাউনী ঘেরা একটা দোকানে বসে এবার মৌজ করে লিকার চায়ে বিকেল ভিজালাম। তখনো আকাশে আলো, বাতাসে দূরের গন্ধ। এড়াই কি করে!!!!! টুকটুক করে এগোতে থাকলাম... একাই। ক্রমশঃ রাস্তার দুধার থেকে বন-জঙ্গল সরে যাচ্ছে, ধীরে কাছিয়ে আসছে সবুজ মেঠো জমি, হাওয়ায় দুলছে আবাদী ফসল, কাছে-দূরে স্লেটরঙা পাহাড়। আবিষ্টতা চেতনায়। হাঁটতে-হাঁটতে এতটাই দূরে এসেছি যে অন্ধকারে অচেনা পথে ফিরব কিভাবে চিন্তা হল। তবু পিছু ফিরতে মন চায়না। নিজেকে বোঝালাম, পথ যখন আছে, সওয়ারী আছে, তখন সওয়ারও আছে ঠিক। বাস আসবেই, একটু যা সময়ের অপেক্ষা। একটা কালভার্টের ওপর বসলাম, গলা ছেড়ে গাইলাম- আমারে আজি জাগালে যদি নাথ, ফিরো না তবে ফিরো না.....শুনলো শুধু ফুটি-ফুটি তারায় ভরা আকাশ। হঠাত্ দেখি দূরের ঢাল বেয়ে কি যেন একটা নামছে.... কাছে আসতে বুঝলাম ওটা বাস ও আমাকে তুলে নিয়ে ঠিক পাঁচ মিনিটে নামিয়ে দিল পান্থনিবাস। নিরালা নির্জনতার হল এই এক মুস্কিল। আমি আনমনা যতক্ষণ ততক্ষণ বেশ, কিন্তু জ্ঞানগম্যি সহকারে আমি একা বোধ মনে একবার জাপ্টে ধরলেই গেল। যা হোক্, সে বোধে যাবার আগেই পান্থনিবাসের কেয়ারটেকারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। নির্জনতার এটাও ধরণ যে সন্ধ্যার পর থেকে বাকী সময়টা বড় লম্বা লাগে। প্রলম্বিত সে সময়কে নিয়ে যে তখন কিভাবে ব্যয় করি.... একবার ডাইনিং রুম, একবার জ্যোছনা ভাসা বাগান, একবার বারান্দা করেও সময় আর ফুরোয় না। কলকাতায় এসময় আমি কি করতাম? বাব্বা, ভাবার চেষ্টা করেই হাঁকপাঁক করে ফের ফিরে এলাম এই সাজানো অলসতার কাছে। উড়িষ্যার বিখ্যাত পোকা নিয়েও চলল খানিক গবেষণা। ঘরে-ডাইনিং রুমে-বাগানে-বাথরুমে সে যে কত ধরণের মথ-প্রজাপতি-পোকা, তা আর বলে শেষ হবে না।

পরদিন সকাল হল। চা খেয়ে বোঁচকা গুছিয়ে সোজা বাস রাস্তায়। ঠিক নটা বাজল, গোঁ-গোঁ করে বাস হাজির, লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে ওঠা মাত্রই তার দুদ্দাড় দৌড়। গতকাল শুনেছিলাম নটায় আসবে, তা বলে এতটা পাংচুয়্যাল? নটা মানে নটাই? অথচ গাড়ি আসছে সেই কোন না কোন মুলুক থেকে- পেটের মধ্যে ছাগল-বাছুর-মুরগী ভরে। ভিড়ে-ভিড়াক্কার বাস ঢালু পথে নামতে-নামতে ঘন্টা দেড়েকেই পৌছে দিল বেরহামপুর। সেই ভিড় থিকথিক স্ট্যান্ড, সেই চেনা ছকের বাস, কোলে-কাঁখালে.... না। আর যাত্রাপথে ছাগল-মুরগী নয়, প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষের কোলে-কাঁখালে এবার সমুদ্র সংক্রান্ত জিনিসপত্র। কারুর সঙ্গে মেছো জাল, কেউ সঙ্গে নিয়েছে কাঠের প্যাকিংবক্স, কারুর সঙ্গে ইয়া বড় গামলী.... বাঃ। এ আবার অন্য অভিজ্ঞতা। পূজোর আগে আচমনের মত, ভূমিকার মত, প্রেমের আগের বিশ্রাম্ভালাভ। এইজন্যই তো বাস যাত্রা এত পছন্দের। আমার সমগ্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে এই শুষে নেওয়া নোনা গন্ধ কোথায় পাব? তাছাড়া লোকাল বাসে ট্যুরিষ্ট দেখে স্থানীয়দের চোখে যে বিস্ময় ফোটে, তার তুলনাও পদ্ম ফোটার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

ভাবতে-ভাবতে আর চোখ দিয়ে মাঠ জোড়া শষ্যক্ষেত্র কুড়তে-কুড়তে একসময় গাড়ি নামাল যেখানে, সেখানে দেখি আশে-পাশে দোকান, এস.টি.ডি বুথ, সেলুন নিয়ে একটা নেহাত্ই কেজো জায়গা। মন খাবি খেল.... এখানে থাকতে হবে নাকি? তবে যে শুনেছিলাম হোটেল সমুদ্রপাড়ে.....

একটা অটোঅলা দেখি আমার দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম-
- সমুদ্দুর যিব্ব?
- হ্যাঁ যিব্ব, যিব্ব।
ঘটাং করে ইঞ্জিন স্টার্ট হল ও ফুচুক করে এগিয়েই..... মানে পলক ফেলার আগেই পাড়ের কাছে গাড়ি। সামনে মোটে দু পা-ও না হেঁটে এই বোকামীতে যা ফল ফলবার তাই ফলল। বেকুব। পয়সা নিতে গিয়ে অটোঅলাও একই বিড়ম্বনায়.... বেচারীও বেকুব। যাই হোক্, সমুদ্রমুখী হোটেল কলিঙ্গতে ওঠা গেল। এখন বেশ বেলা, তাবলে সমুদ্রস্নান বাদ দেওয়া যায় নাকি? পাড়ের কাছে গোলগাল ছাউনীঅলা হোটেলটা দেখে পছন্দ হল বেশ। বড় গলদা চিংড়ির রোস্ট আর ডাল-ভাত-ভাজার অর্ডার দিয়ে নেমে পড়লাম জলে। ঠেউ-এর সঙ্গে একা-একাই কত গপ্প-গাছা-খুনসুটি.... উঠতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু সঙ্গীজনের নোলার তাড়ায় উঠতেই হল। আয়েশ করে খেয়ে তিনি গেলেন ঘুমোতে আর আমি চষতে। ঘুরে-ঘুরে আশ মেটে না, বিস্ময় আমার সবখানেই। জাল বোনা থেকে, জেলেদের মাছ ধরা থেকে, বাজারে সেই মাছ বরফ ঠেসে গুদামজাত করা অবধি দেখলাম স-ব। ইতিমধ্যে বিকেল হল, রুমে ফিরলাম ও সঙ্গীজনকে খাতা-কলম নিয়ে কাব্যকলায় দেখে অবাক হলাম খুব। তখন না বুঝলেও, সময় পরে জানিয়ে দিয়েছিল তার সেই কাব্যপ্রীতির কারণ। সে অবশ্য আলাদা ভ্রমণ, আলাদা সময়ের। আপাততঃ ফিরি সেই দিনে। ঘরে ঢুকেই তাগাদা লাগালাম- চল, চল, লাইট হাউসে উঠব না? এখানে আজ একটাই দিন, ঝুপ্ করে সন্ধ্যা নামলেই শেষ।





লাইটহাউস থেকে কত দূরে যে নজর চলে যায়- যেন দৃষ্টিসুখের উত্সব। বাধাবন্ধনহীন শুধু নীল আর নীল। অন্ধকার নামতেই নীচে এলাম। এবার সমুদ্রের পাড় ধরে খানিক হন্টন, ফেরা, আবার এগোন, কিছু সময় ঝিনুকের দোকানে ঘুরুর-ঘুরুর। একশো বারের দেখা সেই ঝিনুকবোনা ঝাড়লন্ঠন, পর্দা, ধূপদানী নিয়েই কাটালাম কত সময়। সন্ধ্যা ইতিমধ্যে টুপ করে গড়িয়ে রাতের কোলে পড়ল আর ফাঁকা হতে থাকল সমুদ্রের ধার। ফের ঝাউ-ছাউনীর হোটেলে রাতের খাওয়া সেরে ফিরলাম অস্থায়ী ঠিকানায়। ঠেউ উছলানো শব্দ আর হাওয়ার নোনা গন্ধ মনে মাখতে-মাখতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভোর হতেই মনে হল আরে, আজই তো ফিরে যাব....  ব্যস, শুধু চা-টুকু খেয়েই বেড়িয়ে পড়লাম আবার। এখানের ব্যাক ওয়াটারের কথা শোনা ছিল। খুঁজে-খুঁজে সেখানেও গেলাম। কিন্তু কি বলব, আমার কৌতুহল কখনো-কখনো বড্ড শোধ তোলে। ব্যাক ওয়াটারে জল তো আছে কিন্তু সেসব বড়....

আসলে ওটা জেলে ভাইদের প্রাতঃকৃত্যাদির জায়গা। আশেপাশে জাল শুকোচ্ছে, উপুড় দিয়ে ঢেলে রাখা মাছ শুকোচ্ছে- একেবারে নৈরেকার দশা, পালাতে পারলে বাঁচি। শেষে অন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে পৌঁছলাম এক মন্দিরে। ঢোকবার মুখেই সেই চিরাচরিত থাবা পাতা সিংহ, কারুকার্য করা ভাস্কর্য মন্দিরের সারা চত্বর জুড়ে। দেবদেউল বন্ধ, জানিনা কে ছিলেন ভিতরে- জগন্নাথ না কৃষ্ণ! ঘুরে-ঘুরে বেলা গেল, ফের সমুদ্দুরে একা-একাই জল-ঝাঁপ। এবার মনে শেষের বাঁশী বেজেছে। ঝাউ-ছাউনীর দোকানে লাঞ্চ সেরে রাতের ডিনার প্যাকেট অর্ডার দিয়ে ফিরতে হল। দুপুরে বারান্দায় এসে বসলাম, ঠেউ-এর সঙ্গে কিছু সুখ-দুঃখের কথা-কথায় বিকেলে এসে দাঁড়ালাম। সঙ্গী মানুষও তার পেটভরা ঘুম সেরে উঠল। এবার ট্রেনের সময় যত কাছে এগোতে থাকল, সেই শুরু হল তার টেনশন-গেলা চেনা ছান্দিক ধারাপাত। আমি বিনদাস, আপনভোলা। দুদিনের এই সঞ্চয় আমাকে রাগ ভুলিয়েছে, কান্না ভুলিয়েছে, আর এ তো সামান্য উচাটন, বাস্তব পথিকের তৈরী করা কষ্ট-কষ্ট উদযাপন। আমার মধ্যে এখন ধুন্ধুমার। কালচে-সবুজ বনের রঙ, হলদে-সবুজ মাঠের রঙ, নীলচে-সবুজ সমুদ্র রঙ তোলপাড়। ট্রেনে উঠলাম, কাঁথা মুড়ি দিলাম ও সব কটাকে ডেকে নিলাম ভিতরে। ভোর হল আজ অন্য ভ্রমণের বার্তা সঙ্গে নিয়ে..... নিশ্চুপে।










11 comments:

chandan roy choudhury said...

তোমার লেখাটা পড়ে আমারও লিখতে ইচ্ছে করছে। সেটাও ভ্রমণের ওপর ও বেড়িয়েছিল উত্তরবঙ্গ সংবাদে। যদিও চাইনা তোমার এই 'মনফসল'শুধু ভ্রমণকাহিনী নির্ভর হোক্।

আর তোমার 'তপ্তপানী...' নিয়ে কি বলব..... মানুষর মনোজগতের ভ্রমণ থেকে প্রকৃতি ভ্রমণ অবধি সবটাই অনবদ্য।

Unknown said...

এই ‘মনফসল’-এ তোমার প্রথম করা মন্তব্যে আমি যারপরনাই আশাণ্বিত। এবার যদি তোমারই পোস্ট প্রথম আসে, তাহলে....

থাক্ 'তাহলে'-টা ভেবে দেখি। আগে তো পোস্ট দাও। তবে ভার্চুয়াল খাদ্যাখাদ্যে আমার বিশেষ আস্থা নেই।

Asim said...

দারুণ, দারুণ। আমি তথ্যকেন্দ্রতেই পড়েছি আবার এখানেও দেখলুম। কিন্তু এটা ঠিক করোনি, প্রকাশিত লেখা মানে আবার কি? কোথায় প্রকাশ হতে হবে? নেটে আমার দুটো লেখা আথে, সেটা রাখবো?

মঞ্জুশ্রী রাযচৌধুরী said...

ওমা, এটা আবার প্রশ্নের কথা হলো? আমি পত্র-পত্রিকা বলেছি মানে তা'তে কি ই-পত্রিকা নয় এমন বলেছি? যেখানে আমি নিজেই জেগে থাকার ষোলো ঘন্টায় নেট মহল্লায় দশ ঘন্টা কাটাই, সেখানে কিনা...
দাও, দাও এক্ষুনি দাও। আমি তো অপেক্ষায়।

riddhyg said...

i like it!!

Anonymous said...

Taptopani gopapur......... Baler kn bhasa nei.
parte parte ekta advut excitement kaj karchilo, sudhu bhabchilam ei bujhi kono gari pabena jaoar janya takhan ki habe.... Asadharon besh kichu line mon chuye geche.... Satyi tmr lekha pare ekta advut ananda pai.
thumbs up...............

একলা মানে একলাই। স্বামী-স্ত্রী আবার একান্ত কবে হল?--- asadharan laglo..................

Unknown said...

Pictr.ta khub bhalo hoyeche kalker tao bhalo chilo

অধরামাধুরী said...

তপ্তপানি বললেই মনে পড়ে দুটো দিন ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার 'ডিমসর্বস্ব' হয়ে থাকতে হয়েছিল। ওমলেট,ডিমের ভুজিয়া,ডিম সেদ্ধ, ডিমের ঝোল ------অর্থাৎ বহুরূপে সম্মুখে ডিম, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ কুক্কুট... এরকম একটা দর্শনের অনুপ্রবেশ মস্তিষ্কে ঘটেছিল। আর একটা ভয়ঙ্কর জিনিস ---'পোকা' আজগুবি চেহারার যত জংলী পোকা পাখা নেড়ে ঠ্যাং নাড়িয়ে আমাকে ভয় দেখাত। মধুচন্দ্রিমার জন্যে আদর্শ জায়গা। বিয়ের পাঁচবছর পর গেলে মনে হয় এ কোন অথৈ জল...প্রাণ মোর হয়েছে বিকল। অনেকদিন পর সেই নিঝুম দুটো দিন আবার ফিরিয়ে দিলে মঞ্জুশ্রী।

Unknown said...

প্রিয় সুতপা, তোমার মন্তব্যে আমি যারপরনাই খুশী। এই নেট মহল্লায় বেড়াতে বেরিয়ে তোমায় নামে তো আমি চিনি, কিন্ত লেখার সঙ্গে এইমাত্র পরিচয়। তুমি যে খুবই সেনসিটিভ তা এটুকুতেই মালুম। এসো ভাই এবার, গুছিয়ে বসে গপ্প করি, লেখা পড়ি অপরকে পড়াই....
লিখবে তো, এমনি করে মাঝেসাঝে আসবে তো?

আল ইমরান said...

এতো বিস্তারিত বর্ণনা দিলে দিদি.............
একেবারে চোখের সামনে একটা সিনেমা ভেসে উঠল।
রাতে যদি পড়তাম তবে নির্ঘাত ট্রাভেল সিনেমা দেখতাম ঘুমের মাঝে। আমি আবার ঘুমানোর আগে যা পড়ি বা ভাবি তা নিয়ে স্বপ্নে একটা সিনেমা দেখে ফেলি। এটা আমার খুব ছোট বেলার অভ্যাস। আমি স্বপ্নের ঐ সিনেমার মাঝে ইন্টারভ্যাল ও দিতে পারি। তবে আরও কিছু ছবি দিলে আমার ভাবনাটা আরও HD কোয়ালিটিতে দেখতে পারতাম।

Unknown said...

উরে ব্বাবা... ইমারানের জুনের মন্তব্য আমার নজরে পড়ল আজ। তোমার ঘুম ও স্বপ্ন ব্যাপারটা ভারি ইন্টারেস্টিং তো... স্বপ্নের মাঝে ইন্টারভ্যাল দিতে পার? তুমি ছেলে সাংঘাতিক স্বপ্নিল।