Monday 27 June 2011

আমার গানের খাতার স্মৃতি থেকে............

আইয়ুব বাচ্চু
প্রয়াত আযম খান


আমি....... ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড গান শুনতে পছন্দ করি। তো তখন মাঝে মাঝেই গুনগুন করে গান গাইতাম। প্রথম ভালো লাগা গান গুলোর মধ্যে ছিল “হাওয়া হাওয়া” এবং “মুকাবেলা” টাইপের হিন্দি গান। একটু বুঝার পর শুনতাম পপগুরু আযমখান এর “ওরে সালেকা ওরে মালেকা”, “রেল লাইন এর বস্তিতে”, “ আলাল আর দুলাল” ইত্যাদি। আরও একটু বড় হয়ে শুনতাম আশ্রাফ বাবু এবং চারুর র‍্যাপ গান। আমি যখন যে ধরনের গান শুনতাম তখন আমার বন্ধু মহলে ওই গান গাওয়ার জন্য আমি বিখ্যাত ছিলাম। আর একটু বড় হয়ে শুনতাম আর্ক, জেমস, আয়ুব বাচ্চু। আয়ুব বাচ্চুর চেয়ে আর্ক এর হাসান এবং জেমস খুব প্রিয় ছিল। যখন ৭ম/৮ম শ্রেণীতে পড়ি তখন পরিচয় হয় ভারতীয় জীবনমুখী বাংলা গানের অন্যতম শিল্পী নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত এবং সুমন চট্টপাধ্যায় এর সঙ্গে। তখন ওনাদের গান ছাড়া কিছু বুঝতাম না। এখনও নচিকেতার গান গুনগুন করে গাই। 

একতারা হাতে বাউল
S.S.C এর সময় পরিচয় হয় বাউল গান বা দেশি গান এর সাথে। তখন বারী সিদ্দিকির “আমার গায়ে যত দুঃখ সয়” এবং “সোয়া চান পাখী” গান গুলো চমৎকার ভাবে গাইতে পারতাম। তখন একটা সময় চলছিলো যখন এধরনের গান খুব চলত। এরপর যে গান গুলো চলত সেগুলো হোল “কৃষ্ণপক্ষ কালপক্ষ”, “আমার একটা নদী ছিল”, “মাক্ষি গিরা গরম তেল মে”, “ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা”, “বাজারে মন এই দেহ মাদল”, এবং জেমস এর “পাগলা হাওয়ার তোড়ে” ইত্যাদি।

B-)B-)B-) কলেজে পড়ার সময় আমার সাথে পরিচয় হয় “হীরা” নামক একটি ছেলের সাথে। খুব মিশুক ও চটপটে স্বভাবের কারনে অর সাথে আমার বন্ধুত্ব হতে দেরি হয় না। আমাদের বন্ধুত্ব হবার আরও একটা বড় কারন ছিলো, ও ভালো গান গাইতে পারত। বন্ধু মহলে মাইক্রো কনসার্ট করার ক্ষেত্রে একজন কো-পারফরমার পেলাম। এরপর থেকেই আমরা দুজন। খুব দ্রুতই পুরো কলেজে আমাদের কথা জেনে গেলো। কলেজের ২য় বর্ষে থাকাকালীন একটা নবিন বরন অনুষ্ঠানেও আমরা গান গেয়েছিলাম।


:):):) এমনিভাবে চলতে চলতে একদিন আমরা দুজনেই খেয়াল করলাম দুষ্টামির ছলে আমরা অনেক কথা সুরে সুরে বলছি। সেখান থেকে গান লেখার আইডিয়া এলো। আমি অল্পবিস্তর কবিতা লিখতাম। সিদ্ধান্ত হোল আমার একটা কবিতা দিয়েই গান এর শুরু করতে হবে। এক ছুটির দিনে আমি, হীরা আর ববি (..;)...... ও বলতে ভুলে গেছি, ববি আমার প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ড এবং বর্তমান স্ত্রী, আমরা তিনজনই বন্ধু ছিলাম।) আমার বাসায় বসে একটা টেপ রেকর্ডার, কাঠের টেবিল (বিট এবং রিদম দেয়ার জন্য), অর্ধ ভর্তি ষ্টীলের মগ এবং চামচ (পানির ঢেউ এর মতো আওয়াজ করার জন্য আমার আইডিয়া), একটা বাশের বাকা কঞ্চি (পায়ে বেজ দেয়ার জন্য), ইত্যাদি যন্ত্রপাতি বা মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে রেকর্ড করতে বসলাম আমাদের প্রথম গান এর ডেমো। গানটি ছিল “যতদিন রইবে ওই আকাশ, যতদিন রইবে ওই বাতাস, যতদিন রইবে সুর আমার, ততদিন রইব আমি তোমার” আমাদের প্রথম গান তাই এর প্রতি ভালবাসাটা ও অনেক বেশী ছিল। যদিও এখনও এই গানটা অন-এয়ারে যায়নি কিন্তু আমার বন্ধু মহলে বেশ জনপ্রিয়। এর পর আমি আর হীরা আমার বাবার বকা উপেক্ষা করে কত রাত জেগে জেগে গানের সুর করেছি তার কোন হিসেব নেই। বেশির ভাগ রাতেই প্রথম ভাগে আমি জাগতাম এবং ওকে উৎসাহ দিয়ে গান ধরিয়ে দিতাম এবং এরপরই আমি ঘুমিয়ে পরতাম। এই নিয়ে ওর বিরক্তির অন্ত ছিল না। পরবর্তীতে আমাদের এই কার্যকলাপে মাত্র দু দিনের জন্য যুক্ত হয়েছিল একটা খেলনা কীবোর্ড। আমরা তখন তার পরিপূর্ণ ব্যবহার করেছিলাম। সেই ঘটনা গুলো মনে পড়লে খুব ভালো লাগে এবং খুব হাসি পায়।

হীরা, BAFA(bulbul academy of fine arts) থেকে নজরুল সঙ্গীত এর উপর ৪ বছরের কোর্স সম্পন্ন করে বর্তমানে মিউজিক ডিরেক্টর চঞ্চল মাহমুদ ভাই এর কাছে মিউজিক ডিরেকটিং এর উপর তালিম নিচ্ছে।

আমাদের দুজনের লেখা ও সুর করা প্রায় ৪০টির ও বেশী গান আছে। হয়তো কখনও কোন একসময় অন-এয়ারে শুনতে পাবেন। এখন যদিও সেই কলেজ জীবনের মতো গানের চর্চাটা নেই। তারপরও বন্ধুরা একসাথে হলে গান আর আড্ডা খারাপ চলে না।
:):);):P;):P;):)

4 comments:

Unknown said...

তোমার গান নিয়ে পাগলামীর বিবরণ পড়লাম ইমরান। এই পাগলমীটাই তো একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে, জীবনের দিকে মুখ রেখে এগিয়ে নিয়ে চলেছে.... আমার খুব বিশ্বাস, কোন একদিন তোমার সঙ্গীতকার হবার ইচ্ছা পুর্ণ হবে। তবে এটা ঠিক, চর্চা ছাড়া তা সম্ভব নয়, সুতরাং সত্যি যদি এ ক্ষেত্রে কিছু করতে চাও, তবে রেওয়াজে থাক।

আল ইমরান said...

হীরা পাগলটা আছে চর্চায়। আমিও কাজের ফাকে সুযোগ পেলে হাতছাড়া করি না।

nilakash said...

আমি পড়তে ভালবাসি, তোমার লেখাও পড়ে গেলাম।

আল ইমরান said...

ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করবো না। তবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।