2010-এর 3-রা অক্টোবর উত্তরবঙ্গ সংবাদের টইটই পাতায় প্রকাশিত লেখা
কাছেই আছে মহারাজ
চন্দন রায়চৌধুরী
তখন আকাশ সবে ফর্সা হতে শুরু করেছে, সওয়াই মাধোপুর থেকে আমরা রণথম্বরের পথে। দূরত্ব মাত্র চৌদ্দ কিলোমিটার। জঙ্গল সাফারিতে যাচ্ছি ক্যান্টারে চড়ে, এই গ্রুপের সঙ্গে তিনজন স্থানীয়ও আছেন। এঁদের অনর্গল কথা বলাটা থামানোর জন্য গাইডকে অনুরোধ করলাম। সাধারণতঃ যারা জঙ্গলে ঘুরে অভ্যস্থ, তারা এমন হয়না, কিন্তু.... যাই হোক্, গাইডের হঁশিয়ারিতে কাজ হল, কিন্তু টিপ্পনী কাটতে ছাড়ল না- এত সহজে বাঘ দেখা যায় না, এই জঙ্গলে বনকর্মীরা বাঘ সেজে ঘোরে, আসল দেখতে ভাগ্য থাকতে হয়, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমরা চলেছি 4নং জোনের পথে। পথে দেখা অন্য একটি দলের সঙ্গে, যারা সফরের শেষের দিকে। ওরা বলল বাঘ মিলতে পারে, কেননা ওরা পাশের 5নং জোনে জঙ্গলরাজের দেখা পেয়েছে। উত্তেজনায় আমাদের রোম খাড়া। হঠাত্ই সম্বরের একটানা ডাক শুনে গাইড জানাল, এটা ‘এ্যালার্ম কল’। সম্বর বাঘের গায়ের গন্ধ পেয়েছে নিশ্চই, তাই বাকীদের সতর্ক করার জন্য ডাকলে এই রকম শব্দ করে। কাছে পিঠেই কোথাও আছেন মহারাজ। গাইড আমাদের কথা না বলে চুপ করে থাকার নির্দেশ দিলেন ও দেখলাম অল্প দূরেই জঙ্গলের মধ্যে গাছ-গাছালী নড়ে উঠল। হ্যাঁ ঠিক, ঐ তো... সবুজের মধ্যে হলদে ডোরা কাটা ঝিলিক। ধীর পায়ে মহারাজ বেরিয়ে এলো জঙ্গল থেকে, নাক ঘষল একটা গাছের গুঁড়িতে। আমরা গাড়িতে অল্প দূরেই, কিন্তু ভ্রুক্ষেপ না করে মন্থর গতির রাজকীয় ভঙ্গীতে রাস্তা পেরিয়ে সে সেঁধিয়ে গেল ওপাশের গভীরে। ক্যান্টারের সব যাত্রীরা এবার হতচেতন.... বাকরুদ্ধ। জঙ্গল তো কম ঘুরিনি, কিন্তু প্রায় বিনা প্রস্তুতিতেই, এত কাছ থেকে এভাবে বনের বাঘকে দেখা- এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
রাজস্থানের রণথম্বর দু-হাত ভরে দিল আমাদের। এই বনে সম্বর ছাড়াও দেখলাম প্রচুর নীল গাই আর খালে-বিলে-নদীতে অসংখ্য পরিযায়ীর মেলা। রাজবাগ, মিলাক আর পদম জলাশয়কে ওরাই সাজিয়ে রেখেছে। রণথম্বর জাতীয় উদ্যানে জঙ্গল, পাহাড়, জলাশয় ছাড়াও রয়েছে এক অসাধারণ প্রাচীন কেল্লা। প্রায় 825 স্কোয়ার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই জঙ্গলে রয়েছে প্যান্থার, চিঙ্কারা হরিণ, বুনো শুয়োর, হায়না, শেয়াল, বনবিড়াল আর লেপার্ড। এই রাজস্থানে ভ্রমণের আরও এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল ভিলেজ ট্যুরিজমের অংশীদার হওয়া। এই অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হল ধুধু বালিয়ারীর মধ্যে ‘খুরি’ নামের জায়গাটিতে এসে। স্থানীয় অতি সাধারণ এক রাজস্থানী গৃহস্থের বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। এক অতি সাধারণ গ্রাম্য বাড়িতে এক অসামান্য আতিথেয়তার উষ্ণতা পাওয়ার অভিজ্ঞতা ভোলবার নয়। সংবাদপত্রের ছোট পরিসরের মধ্যে দিয়ে একে ধরা যাবে না, এই গল্প আলাদা ভাবে বলবার। শুধু এটুকু জানাই- ছাগলের দুধ, বাজরার রুটি, সাধারণ সব্জি দিয়ে খাটিয়ায় বসে খাওয়া,.... লাখ টাকার বিনিময়েও এই স্বাদ, এই ভালবাসা পাওয়া যাবে না। অদুরে কুয়ো থেকে জল তুলছে একগলা ঘোমটা দেওয়া নারী, উঠোনে পাঁচ-ছ’খানা উট ঊর্ধলোচনে জাবর কাটছে... মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্নের দোরগোড়ায় আস্তানা গেড়েছি। সন্ধ্যে হতেই আবার স্থানীয়দের লোকগানের আসর, যা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। কাছেই মরুভূমির সুবিশাল প্রান্তর। উটের পিঠে যেতে যেতে কত ভাবনা, কত দৃশ্য, কত ধরণের সুর মনের জানালায় নানারকম দৃশ্য রচনা করে চলল। সেইসব দৃশ্যের রঙিন উপস্থিতি এত সহজে বলে ফেলব, এই ক্ষমতা আমার নেই। যেহেতু আমি সুরের জগতের মানুষ, তাই ওই মজলিশ পরিপূর্ণ এক ভাল লাগায় বুঁদ করে রেখেছিল সারা সফর জুড়ে।
4 comments:
তোমার স্বপ্নের দোরগোড়ায় আস্তানা গাড়া বেড়ানোর সঙ্গে আমিও ঘুরে এলুম। রাজস্তান যাবার ইচ্ছেটা চাগিয়ে উঠল।
amar kotha lekho ni keno ami je chilam okhane!!!!!
chobi dao ni kano are video die debe
ভাল....
Post a Comment