আজ 17.05.11-র ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প
তবু আলেখ্যর খেলার মাঝে সেদিনও কীসের একটা গন্ধ নাকে ঝাপট দিয়েছিল। মাত্র মিনিট দশেকের জন্য চা করতে গিয়ে, ফিরে ঘরে ঢুকতেই আলেখ্য খেলায় ফিরেছিল স্যাট্ করে। হাল্কা একটা ইমপ্রেশনও রেখে গেল তবু চোখে। ওটা যেন নারী-পুরুষের আঁকড়ে ধরা শরীর দেখেছিল ও। আঁকাজোকা বা এ্যানিমেটেড নয় একদম জলজ্যান্ত্ রক্তমাংসের দেহযোগ। এ’ নিশ্চই মায়াঙ্কের কাজ। পাকটুস্ ছেলে কায়দা করে আলেখ্যর সিডিতে বাজে ছবি গুঁজে দিয়েছে। মনে সংশয় নিয়ে প্রিয়দীপা জিজ্ঞেস করল-
মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী
বুকে দমচাপা কষ্ট নিয়ে ঘুম ভাঙলো প্রিয়দীপার। এমন কি রাতে যতবার হাল্কা হয়েছে ঘুম, ততবারই চিন্তাটা জ্বালিয়েছে এত যে কসরত করে ঘুমতে হয়েছে। কখনো বকুলফুলের সদ্য গজানো কুঁড়িটায় মন নিতে হয়েছে, কখনো মন নিতে হয়েছে বেড়ানোর অনুষঙ্গে, তবে ঘুম। আজ ছুটি। সকালে উঠে ভেবে রাখা মত কাজে লেগে পড়েও ছাড়ান নেই। এই অস্থিরতা না পারছে কারুকে বলতে, না পারছে কাদা থেকে বেরোবার রাস্তা। ঠিক আগেরগুলোর মতই। তীব্রতমর রঙ কী তাহলে এতই লজ্জার যে তা লুকোতে বলে? যখন কন্যা সৃজা কাছে থেকেও পর হল, যখন দেওর সুযোগ পেতেই সন্ধানী হল ও যখন নিজেই সংসারে নত, হতচেতন এক কুকুর হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করলো প্রিয়দীপা, তখনো ছিল কষ্টের রঙ আজকেরই মতন এক, ঘেন্নায় তিতকুটে, কালো। সেই একই উচাটন, রাতভোর একই অনুভবের সঙ্গে দেখা। অদ্ভুত কি, কষ্টের এ’ রঙ আজ পরোক্ষ হয়েও তীক্ষ্ণতায় সূচীমুখ। বুকের খাঁচায় আহত সিংহর দাপাদাপি। একেকটার বোধ একেক রকম হয়ে কেন আসে না? হতেই তো পারতো একটা বেবুন, একটা হাতী, একটা সাপের মত ভিন্ন। তা’হলে প্রতিটাকে আলাদা সামলাতে-সামলাতে একটা আন্দাজ পেয়ে যেত আর ভিন্নভিন্ন কষ্টের সেই ভিন্ন চাবুকে ব্যাথাগুলোকে মোকাবিলা করে নিত। ধুস্, কোথায় কি- সেম ঘৃণা, সেম অস্থিরতার আঁচে চলছে ধিমধিমিয়ে পাক।
ঘুম থেকে উঠেই প্রিয়দীপা দেখেছিল আলেখ্য বাইরে যাবার পোশাকে রেডী হয়ে বসে- টানটান ও সতর্ক। কাল যখন প্রিয়দীপা দুম করে ঘরে ঢুকেছিল তখন ও ঠিক বোঝেনি। কত কিছুই তো এমন বাধ্য হয়ে দেখছে ছোটরা, এও বোধহয় তেমনই কোনো এক নষ্ট পর্বের ভুল ঠিকানায় হঠাত্ গিয়ে পড়া ভেবে ফিরেই যাচ্ছিল প্রিয়দীপা। কিন্তু তড়িঘড়ি সাইটটা কেটে গেমে ফিরতেই মনে তড়িত্গতির চমক। কি হল? তাহলে কি নির্দোষ নয়? কী নিয়ে ছিল কম্প্যুটারে? কথাটা মনে হতেই ফের ড্রইংরুমে গেল ও গেমে ব্যস্ত আলেখ্য তখন চোরাচাহনীর ‘কী হয়,’ কী হয়’ দোনোমনায়। মূহুর্তের ফাঁক গলে তবু যে’টুকুর আভাস প্রিয়দীপা পেল, তার পর থেকেই চলছে ওর এই মনমরুনী দশা।
এই আলেখ্যকেই একটা গেম খেলতে দেখেছিল প্রিয়দীপা আজ থেকে পাঁচবছর আগে। কতই বা বয়স তখন ওর- আজ বারো হলে, সেদিন সাত। সেটা ছিল ক্রমাগতঃ লেবেল পেরতে পারলে কিছু প্রাপ্তির। প্রিয়দীপা দেখল, ওর খেলাঘরের সবুজ আলো দিপদিপ করে জানাচ্ছে একটা সানগ্লাসের কথা। বাঃ বেশ তো, ভার্চ্যুয়াল সানগ্লাস। প্রিয়দীপা বসে গেল পাশে। এবারেও সাংঘাতিক খেলে আলেখ্য পেরিয়ে গেল লেবেল। স্ক্রিনে একটি এ্যানিমেটেড মেয়ে এল, দাঁড়ালো মডেলের মত পা ফাঁক করে। গুরু-নিতম্বিনীর দেহজ উল্লাস এতই উপচানো, যে মন চিড়পিড় করবেই। ললনা শকস্, স্কার্ট, হ্যাট, বেল্টে চাবুক। আলেখ্য খেলছে, হঠাত্ মেয়ের স্কার্টটা খুলে গেল ও লেবেল পেরোবার পুরস্কার হয়ে এল সংগ্রহে। ও... তার মানে ব্যাপারটা এই। বোনাস হিসেবে কন্যা লজ্জা দাঁওতে তুলেছে আর একে-একে লেবেল পেরতে পারলেই শরীর থেকে যাবে যাবতীয় সজ্জা। স্কার্ট গেছে- তা’বলে সুন্দরী নাঙ্গা নয়, জমকালো জাঙ্গিয়াতেই চলেছে তাথৈ নাচ। আলেখ্য নির্বিকার, মন-প্রাণ কেন্দ্রীভূত হ্যাটে।
- দেখো দীপমৈ, হ্যাটটা কীর’ম সাইডে ঠেউ খেলানো, পাশে আবার লম্বা পালক….
- হুঁ,
- হুঁ মানে কী? একটু ভাল করে দেখ।
নিজের সঙ্গে প্রিয়দীপারও মনোযোগের দাবী রাখে আলেখ্য। মনোযোগ তো দূর, আতঙ্কিত প্রিয়দীপার ভিতরে তখন অন্য প্রশ্ন।
- দেখছি তো।
- ওটা কিছুতেই পাচ্ছি না। কোন লেবেলের পরে যে হ্যাটটা....
- কি হবে পেয়ে? এই তো অনেক কিছু পেয়েছ।
- ও’সব লাগবে না, হ্যাটটা চাই।
- মেয়েদের হ্যাট- তুমি নিয়ে কি করবে?
- তোমার জন্য। তোমার লম্বা চুল, ওটা পড়লে যা লাগবে না।
- না, না ও আমি পড়বো না। তা’ছাড়া সালোয়ার-কুর্তার সঙ্গে ওসব মানায়?
- কেন, যখন জিন্স পড়বে, তখন।
- ওরে ছেলে- নজর তোমার সবদিকে না.....
বলতে-বলতে গালটা টিপে দেয় প্রিয়দীপা।
- উঃ, এখন ডিস্টার্ব কোরোনা, দেখছো না লেবেল পেরোচ্ছি…..
আলেখ্য এতই তুখোড়, যে কথা বলতে-বলতেই আঙুল ছোটাচ্ছে ও পেরিয়ে যাচ্ছে লেবেল। মেয়ের পনিটেল করে রাখা চমকিলা ব্যান্ড এল সংগ্রহে। আলেখ্য খেলছে... পরের লেবেল- ঊর্দ্ধাবাস উড়ল, উপচে গেল চুল মেয়ের উদোম গায়। বাঁচোয়া, কোনো এমব্যারাস সিচ্যুয়েশনের সামনে পরতে হল না। কোনোদিকে নজর নেই- হ্যাট ওকে পেতেই হবে। নেক্সট লেবেল- শকস্, নেক্সট লেবেল- ওফ্, অবশেষে হ্যাট। ব্যস্, প্রাপ্তি আসতেই আলেখ্যর তৃপ্তির কোটা ফুলফিল্ড। কন্যে ওদিকে খাপছাড়া পোষাকে খাপখোলা তলোয়ার। নাঃ, ও’সবে মন নেই। অশেষ অনুকম্পায় প্রিয়দীপাকে কম্প্যুটার ছেড়ে দিয়ে ও উঠে গেল আর হতচকিত প্রিয়দীপা ‘আরো কি দেখতে হয়’-এর দুর্ভাবনা থেকে বাঁচলো। গেমে প্রিয়দীপা এমন সড়গড় নয় যে লেবেল পেরতে-পেরতে খেলার শেষে পৌঁছবে। যদি পারতো তো দেখে আসতো মেয়েটি সব দিয়ে শেষে ন্যাংটা হল কিনা, হলেও আরো কি করল। নি্র্দোষ খেলাতেই যদি বোনাসের এই তরিখা তো কেজানে কি ছিল শেষে। মানতেই হবে গেম সৃষ্টিশীল কিন্তু বাচ্চাদের মত কী? আদিরসের আঁচে ফেলে এ’ কেমনতর সেঁকা? ভাগ্যিস্ হ্যাট ছাড়া বাকীতে ও নিরুত্সাহ ছিল।
তারপর দিন গেছে, আলেখ্য বড় হয়েছে, কিন্তু কত আর- এই পাঁচবছরে বছর বারো। স্কুল ছুটি থাকলে প্রিয়দীপার কাছে চলে আসে আর কম্প্যুটার তখন আলেখ্যর দখলে। ইস্..... এই বড় হওযটা মনে হতেই কালকের রাতটা মনে পড়ল প্রিয়দীপার আর গায়-গায় ঝেঁকে এল কষ্টের ইতিবৃত্ত। এ’ নিয়ে ওর ইচ্ছে করছে না ভাবতে, তবু ছাড়ান নেই। নিজের সঙ্গেই প্রিয়দীপার এখন একশো কাহন কথা। গত পরশুও আলেখ্য খেলছিল। গুলিগোলার শব্দে প্রিয়দীপা বসে পড়েছিল পাশে।
- কি খেলছিস্ সোনা?
- চিনাংশুক ওর জন্মদিনে যে গেম-সিডিটা পেয়েছে.....
- তা তো বুঝলুম কিন্তু খেলাটা কি?
- দেখো না দেখো।
খেলাটা চালু করলো আলেখ্য।
- এই দেখ এইটা হলাম আমি, আর ওরা আমায় ধরতে আসছে। আমি সবাইকে মেরে... তুমি দেখলেই বুঝবে।
প্রিয়দীপা দেখল হাতে বন্দুক একটা মানুষ, যার চতুর্দিক ঘিরে বৃষ্টির মত গুলিগোলা আর সে’সব কাটিয়ে তীরবেগে ও ছুটছে। কোথাও কেউ আটকাতে গেলে তার খুলি উড়িয়ে দিচ্ছে, কারুকে বক্সিং-এর পাঞ্চে শুইয়ে দিচ্ছে। এমন কি ধরা পড়ার অবস্থায় পড়লে বন্দুক দেখিয়ে চলন্ত গাড়ির চালককে ফেলে সেই গাড়ি নিয়েই পালাচ্ছে, সিগনাল পোস্ট, ট্রাফিক রুলকে কলা দেখিয়ে। পিছনে ওদিকে হুটার বাজিয়ে পুলিশও যথারীতি, কিন্তু তাদেরকেও রক্তাক্ত করে, মেরে।
- এটা তুই?
- হ্যাঁ।
- ব্বাবা, এমন কেন রে? কোনো কিচ্ছু মানামানি নেই, যা খুশী করছিস্।
- আহা ওরা আমায় মারবে আর আমি বুঝি.....
- তা’বলে যেমন-তেমন করে তুই এসকেপ্ড হবি?
- ধুস্, তুমি না কেমন- মজা করতে জানো না? এটা তো খেলা।
ঠিক-ঠিক এটা তো খেলা। বদলে যাওয়া সময় ও সহজকে সহজ ছন্দে গ্রহণের দর্শন এই শিশুর থেকে পেয়েও নিজেকে ঋদ্ধ লাগলো প্রিয়দীপার। নিজেকে শক্তিধর ভেবে বাঁচার মধ্যে একটা বীরত্ববোধ আছে। সবেতে এত নৈতিকতার পাঠে থাকলে চলে? এই যে ভিতরমহলে উত্তেজনার ওঠা-পড়া, এর ক্রেডিটটা খেল-বানিয়েদের প্রাপ্য বৈকি। তবু.... নিজেকে বোঝালেও একটা অস্বস্তি ভিতরে রানিং। সব মেনেও মনে হচ্ছে হিরোর উদ্দেশ্য একটু মহান দেখালে রক্তারক্তিটা জাস্টিফায়েড হতো না? নাকি ঐ ‘মহান’ ভাবনার উপস্থিতিটাই তেতো করে দিত খেলার ইচ্ছে! কেজানে। নাঃ, সবেতেই এত ঠানদিদি ভাব কাজের নয়, কিছুতেই বুড়ো হবেনা প্রিয়দীপা। সত্যিই অত হিসেবপত্র করে মজা নেওয়া যায়?
তবু আলেখ্যর খেলার মাঝে সেদিনও কীসের একটা গন্ধ নাকে ঝাপট দিয়েছিল। মাত্র মিনিট দশেকের জন্য চা করতে গিয়ে, ফিরে ঘরে ঢুকতেই আলেখ্য খেলায় ফিরেছিল স্যাট্ করে। হাল্কা একটা ইমপ্রেশনও রেখে গেল তবু চোখে। ওটা যেন নারী-পুরুষের আঁকড়ে ধরা শরীর দেখেছিল ও। আঁকাজোকা বা এ্যানিমেটেড নয় একদম জলজ্যান্ত্ রক্তমাংসের দেহযোগ। এ’ নিশ্চই মায়াঙ্কের কাজ। পাকটুস্ ছেলে কায়দা করে আলেখ্যর সিডিতে বাজে ছবি গুঁজে দিয়েছে। মনে সংশয় নিয়ে প্রিয়দীপা জিজ্ঞেস করল-
- গেমটা তুই চিনাংশুকের থেকে নিয়েছিস্?
- হ্যাঁ, কেন?
- বল না।
- নিয়েছি, কিন্তু দিয়েছে মায়াঙ্ক- বললাম না গিফ্ট পেয়েছে।
- সেই ডেঁপোটা?
- কে মায়াঙ্ক?
- হ্যাঁ, মায়াঙ্ক। কেন যাস্ ওর বাড়িতে? তোর মাকে বললাম।
- কি বললে?
মনে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে পায়চারি করতে থাকল প্রিয়দীপা। না, সন্দেহ নয়….. অন্ততঃ তখনো অবধি নয়। আলেখ্য নামক মানুষটির এগারো/বারো বয়সকে কতটা বড় বলা যায়? গলার স্বর ভাঙেনি, দাড়ি-গোঁফের রেখা নেই, দেওয়াল থেকে টিকটিকিকে খসে পডতে দেখলে খিলখিল হাসিতে যে গড়িযে পড়ে, সে ছেলের চোখের ওপর ন্যাংটা কেত্তন নজরে এলে মাথা স্থির থাকে? অতি সামান্যতাও যার কাছে অমূল্য, সে আলেখ্য কতটা ডিসেন্ট, ইনোসেন্ট, কতটা ডিফারেন্ট তা ওর জানা। ভার্চ্যুয়াল ফিল্ডে গাড়ি ছোটায় আর বাস্তবের রাস্তায় গাড়ি দেখে দৌড়ে নর্দমায় নামে, ষাঁড় দেখে সঙ্গীজনের জামা খামছে ধরে। এটাই স্বাভাবিক। এখনো আকাশে ফুটি-ফুটি আলো, কুয়াশা ছিঁড়ে সূর্য্য উঠতে এখনো যে কিছু দেরী।
প্রিয়দীপা সন্দেহ নিয়ে বসে গেল দূরের সোফায় আর আলেখ্য খেলায় ডুবেছিল তত্ক্ষণাত্। ওর সমস্ত রাগ গেল বুবলীর দিকে। মেয়েটা কিচ্ছু খেয়াল করে না, কতবার বলেছে-
- ওরে একটু নজর রাখ- ছেলে বড় হচ্ছে। দীপ্ত নেটে বসে আর সেই কম্প্যুটারেই আলেখ্য। সতর্ক হলেও নাহয় কথা ছিল কিন্তু এমন হাঁদা তোমার বর.....
- কেন গো পিসি কি ব্যাপার, আমি নাহয়.....
- খুব হয়েছে। মা-বাবা হয়ে বসে আছো অথচ পেরেন্টিংটাই জানা নেই।
- কি করে জানব, এই প্রথম মা হলাম।
- প্রথম তো অনেক কিছুই করেছ, সেখানে তো ভুল হয়নি....
- যেমন?
- আমি তোমায় কৈফিয়ত্ দেব না বুবলি। শুধু বোঝ ব্যাপারটা সিরিয়াস।
- সেটাই তো বুঝতে চাইছি। হেঁয়ালি না করে বলে ফেল পিসি। আমি যদি তোমার মত কম্প্যু-ফান্ডায় দড় হতাম তো ঈঙ্গিতই কাফি ছিল, পাত্তা ঠিক লাগাতাম।
- যা পারছো না তা না ভেবে যা পারতে পারো সেদিকে মন দাও। ছেলে কার সঙ্গে মিশছে, কি করছে, অন্ততঃ সে’টুকু খেয়াল। মায়াঙ্কের সঙ্গে ছেলেকে মিশতে দিতে বারণ করেছিলাম?
- হ্যাঁ তা করেছিলে, কিন্তু বার্থডে পার্টিফার্টিতে তো দেখা হয়েই যায়। কি হয়েছে তা’তো বল। কবে থেকে বলছি আমায় কম্প্যুটারটা শেখাও।
- ও না জানলেও চলবে বুবলী। খালি একটু চোখ কান খোলা রেখো আর দীপ্ত উঠে গেলে জিজ্ঞাসা করো- সব সাইটগুলো বন্ধ করেছে কিনা- ব্যস্ আপাততঃ এই।
- কেন বল তো, উল্টোপাল্টা কিছু?
- না রে না, আসলে সাবধানতার মার নেই, বুঝলি?
- ও....
কম্প্যু-অজ্ঞ বুবলি কি সহজে মুক্তি পেল। একটা ছোট্ট ‘ও’ র মধ্যেই নিশ্চিন্তির কাঁথামুড়ি ওম। আহা, কিছু কিছু অন্ধকার বড় দরকার। জ্ঞানের পাঠশালায় না গেলে আলোও নেই, পাপও নেই। কত অজস্র অজানা নিয়ে আমরা দিব্যি বেঁচে থাকি। সেই অগুন্তির মধ্যের এই ক্ষুদ্র অ়জ্ঞানতাও ওকে যে শান্তিটুকু দিল, এই মূহুর্তে তা মহার্ঘ্য মনে হল। তবু রাগ হচ্ছে প্রিয়দীপার। স্পেশালি মায়াঙ্কের কথা বলে ওকে সাবধানতার পরেও কেয়ার না নেওয়ায়।
- দীপমৈ, মা ফোন করেছিল- বিকেলে গেনুপিসি আসবে.... সোহমও। আমায় তার আগে বাড়ি পৌঁছে দেবে?
আলেখ্যর ডাকে চটকা ভাঙল প্রিয়দীপার। এতটাই ও আত্মমধ্যে ছিল যে কখন গড়িয়ে-গড়িয়ে বেলা গেছে... ঘড়ির দিকে নজর যেতে ধেড়েমেড়ে উঠলো। আলেখ্য জিরা-রাইস পছন্দ করে বলে ভেবেছিল খেতে বসার আগেই বসাবে। কতক্ষণ আর, মাইক্রোওয়েভে রান্না। কিন্তু কোথা দিয়ে দুটো বেজে গেল। অপ্রস্তুত সময় প্যাঁচে এবার কখন রান্না কখন খাওয়া কখনই বা পৌঁছতে যাওয়া। ফিরে এসে গুচ্ছের কাজ। ভাবতেই অস্থির লাগছে প্রিয়দীপার। সারা সকালটা খেলে, হেজিয়ে আর সন্দেহে কেটে গেল, কালকের মধ্যে আর্টিকেলটা শেষ না করলেই নয়।
তড়িঘড়ি রান্না-খাওয়া শেষ করে বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রিয়দীপা রেডী। আলেখ্যকে নিয়ে বেরতে যাবে তখনই বুবলী, দীপ্ত, দীপ্তর বোন গেনু ছেলে সোহমকে নিয়ে হৈ-হৈ করে হাজির। গাড়ি ভর্তি করে বেড়িয়েছে বেলুন, বল, থ্রোয়িং ডার্ট সব নিয়ে। সায়েন্স সিটি হয়ে রাতে বাইরে খেয়ে ফেরার প্ল্যান। প্রিয়দীপা বুবলীকে বলল-
- ভালই হয়েছে বাপু এসেছিস, এত কাজ পড়ে আছে.... কিছুটা সময় বাঁচলো।
এই আনএক্সপেক্টেড খুশীর সামনে পড়ে আলেখ্য কী যে করবে বুঝে ওঠে না। একবার সোহমের হাত ধরে এনে সোফায় বসায়, একবার নিজে গিয়ে গাড়িতে ওঠে, কখনো অকারণেই হাবুডুবু হাসি। কিন্তু প্রিয়দীপার কথায় ও নাও যেতে পারে আঁচ করেই আলেখ্য দৌড়ে নেমে এল গাড়ি থেকে। ফ্রন্ট সীটে বসা নিয়ে সোহমের সঙ্গে যে এতক্ষণের ঘ্যাচাঘেচী- সব ভুলে। হলও তাই, ফাঁকা পেতেই সোহম এক দৌড়ে সামনে। আলেখ্য দিলদরিয়া, সামান্যে আর মায়া নেই। নেমে এসে জাপ্টে ধরেছে প্রিয়দীপাকে- হয় ওকে যেতে হবে, নয় আলেখ্য নিজে যাবে না। মেলা ঝামেলা, ঠেলেঠুলে ছেলে গাড়িতে ওকে তুলেই ছাড়বে। জো পেতেই সব বাকীদেরও এক রা। যেতেই হবে, কোনো বাহানাতেই ভবীরা আর ভোলবার নয়।
এই যে আলেখ্য মাঝমাঝে থাকতে আসে, তা প্রিয়দীপার দিনগুলোকে সোনায় মুড়ে দেয়। যদিও তখন কম্প্যুটার হাতছাড়া, তবুও বেশ। আলেখ্য কার্টুন দেখতে উঠলে সেই ফাঁকটুকুর সদ্ব্যবহার করে ও। এই আব্দার ইচ্ছে করেই মেনেছে প্রিয়দীপা- ওর উপস্থিতির লোভে। মাপা ঐ সময়টুকুর যে কি ক্ষমতা, কি যে সুখের বর্ষা নামে ওর একলা দিনে, তা ওই জানে। আলেখ্য চলে গেলে সেই একই রুটিন, একই ফের উচ্ছ্বসিত আবেগগুলোর রন্ধ্রপথ বন্ধ করে বাঁচা। ওকে কেন্দ্র করে উত্সারিত যে স্নেহের ক্ষরণ, তা দিয়ে প্রিয়দীপা নিজেকে নার্চার করার সুযোগ পায়। এ’ অমূল্য না? বাসী-ঘষটানো দিনগুলোকে শিশুর তারল্য দিয়ে ধুয়ে-মেজে চকচকে করে তোলা? এই পালন ধূপের ধোঁয়ার মত ওকে জড়িয়ে থাকে বেশ কিছুদিন। ওর সঙ্গে সম্পর্ককে সরলতায় রেখে, ওর কথাকে গুরুত্ব দিয়ে বা নেতি ভঙ্গীমাকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে বন্ধুর মত মেশে দেখে কত কথাই যে বলে আলেখ্য। সেখান থেকেই তো ডেঁপোটার কথা জানা। পাকটুস্, চতুর, এঁচোড়েপাকা মায়াঙ্ক। কবে নাকি শাল্মলীকে চুমু খেতে গিয়েছিল আর শাল্মলী ধাক্কা দিয়েছে এমন যে মায়াঙ্ক পড়ে গিয়ে চোট পেযেছে জোর।
- ওমা, হঠাত্ চুমু খেতে গেল কেন?
- ওই যে টিভিতে দেখিয়েছে না- করিনা কাপুর আর..... আর একটা কে যেন জিভ চেটে-চেটে চুমু খাচ্ছে।
- শাহিদ কাপুর।
- হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছ, শাহিদ কাপুর।
- তুইও দেখেছিস্?
- কি?
- ঐ চুমু?
- হ্যাঁ। ক্লাসেই তো মায়াঙ্ক সবাইকে বলেছিল- হিন্দী কি একটা চ্যানেল যেন..... মনে নেই.... ‘চোখ রাখিস, আজ সারাদিন খবরে দেখাচ্ছে।’
- তা ওর তা’তে কি? নাহয় দেখেইছিল, বাহাদুরী করতে গেল কেন?
- কিছু না....
- কিছু না মানে?
- মানে ইচ্ছে হলো.... বললো যে দেখছিলাম, জিভে চেটে চুমুর কেমন টেস্ট।
- কেমন বলল?
- বলবে কি, ফেলে দিয়েছে না? এখন মাথায় আলু নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এর কি প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত্, কি বলবে প্রিয়দীপা? অদ্ভুত ঘটনা, কিম্ভুত তার পরিপ্রেক্ষিত। এখন কিশোরীর ঋতুর কাপড়ও বাচ্চাদের কৌতুহলের সামনে পড়ে হাঁফাচ্ছে। প্রচারের বাহুল্য বিনা কিছুই নাকি বিকোয় না। তা আদি কালে যে প্রচার-মোচার ছিল না.... কেজানে মেয়েরা তখন কী করছিল? পাব্লিসিটির অপেক্ষায় ঘুমোচ্ছিল নারীত্ব আর আজ মওকা পেতেই..... যাকগে, বাণিজ্যের পাঁকে পড়ে বাচ্চারা খাবি খাক, শৈশব যাক্- কার কি? সব ঘুমোক-ঘুমোক। আপন স্বার্থের গানিব্যাগে পাঞ্চ মেরে-মেরে শক্ত করুক যে যার ধনের মুঠি। ওদিকে শৈশবকে ছিঁড়েখুঁড়ে অবেলার যৌবন টেস্ট করুক জিভের সঙ্গে জিভের চাকুমচুকুম। হঠাত্-হঠাত্ এমন বেয়ারা অবস্থায় পড়ে এত অসহায় লাগে। তেমনি হয়েছে ওর বাপ। ক’দিন বুবলীর বাড়িতে থাকতে গিয়ে কম্প্যুটারে বসে তো দেখেছে, একশোবার নানা ভালগার ছবির সামনে পড়ে খাবি খাওয়ার দশা। কখনো হ্যাংলা রোগা মেয়ের ভোঁদকা মোটা বুক ছলকে ওঠে স্ক্রিনে তো কখনো নারীশরীর ছুঁয়ে পুরুষ লিঙ্গ লাফিয়ে নামে পর্দায়- উইথ এ্যাকশান। ছানাবড়া চক্ষুতে সে’সব জ্বালার ওপর জ্বালা। বুঝে গেছে প্রিয়দীপা, ওদের বাড়ির চারটি প্রাণীর একটি শিশু, একটি কুকুর, একটি কম্প্যু-আনপড় ও একটি বুবলীর বর। এ’ আর কারো না দীপ্তরই কাজ। তিনি একলা নেটে ঘুরেছেন, আয়েস করেছেন, উঠেও গেছেন। আরে সাইটগুলো খুলেছিস তো বন্ধ করে ওঠ। ওদিকে নেট মহল্লায় চড়ে বেড়াতে আনলিমিটেড এ্যাক্সেস নিয়েছে ও বাহানাও তার রেডী।
- জানেন পিসি, অনেক ডাইনলোড লাগে, তাই ভাবলাম....
- তাই বুঝি? তবে আমার লাগে না জান। কত আর কাজ, নেটে একা বসি, নির্দিষ্ট বরাদ্দই কখনো-সখনো রয়ে যায- ফুরোয় না।
- আমারও বেশী অফলাইনেই কাজ। আসলে ছেলের কথাটাও ভাবলাম। এখন আর গেম সিডিতে পোষাচ্ছে না তার- নিত্যনতুন খেলা চাই। আর মাঝেসাঝে আমাকেও এত কাজ নামাতে লাগে.....
কৈফিয়তের যে কি দরকার। তুই এ্যাডাল্ট, যা খুশী কর- শুধু একটু খেয়াল রাখবি না? ঐ মেশিনে ছেলেও বসছে, কখনো যদি তার চোখের ওপরেই..... আসলে ব্যাপারটা খেয়াল রাখারাখির নয়- বিবেচনার। সব স্বার্থপরের ডিপো, নিজস্ব ইচ্ছেপত্র মিটল তো কাজ শেষ। পিছনে কে, কি, কেন ভাবার সময় কই? অথবা এমনও হতে পারে, যে দীপ্ত এ’সবে এতই থাকে যে বন্ধসন্ধ করলেও কিছুকিছু মেমরীর হাত ধরে ঘাপটি মেরে থাকে আর উঁকি দিয়ে যায় ফাঁকে-ফোঁকড়ে। ভাবতে পারেনা প্রিয়দীপা- রাগ প্রকাশের জায়গাও পায় না। মিথ্যেই বুবলী সঙ্গে করে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যায় আর আসে। গাড়ি চাপা পড়া থেকে বাঁচাবি আর কচি মনের ওপর টন-টন অচেনা চাপে শৈশব মরছে কিনা তা দেখবি না? ঢঙ, ঢঙ.... এ’সবও ঢঙ। ন্যাকার মত ছেলের সঙ্গে জুড়ে আছির ঢঙ।
2
সারাদিনের শেষে নিজের কাছে বলার মত কিছু কাজ না করতে পারলে বড় অপরাধী লাগে। মন ঘুরতে-ফিরতে গেয়ে চলে- ফাঁকী দিলাম, ফাঁকী দিলাম, বেকার গেল দিন। এই যেমন এখন, বাড়িতে ঢুকে থেকে প্রিয়দীপার কানের কাছে সেই চেনা গান। আসলে সবাইকে এড়াতে পারলেও, আলেখ্য যে কি জাদু করেছে। ওর চাপাচাপিতে যেতেই হল। শুধু তাই নয়, লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ফ্লাইং সসার, থ্রোয়িং ডার্টও খেলল সমানতালে। বাকীরা গল্পে ছিল কিন্তু ও পারেনি। ছুটকোগুলোর সঙ্গে কিছুক্ষণের ছুটকোপনাই এত সজীবতা দেয়- ভিতরের সোজা-সরল-সুখীসুখী ইচ্ছেগুলোর সঙ্গে দিব্যি টুকটাক দেখা হয়ে যায়। তবু এখন গা–মাথা আর কাবুতে নেই। মন লাফালে কি হবে- তন্ জানান দিচ্ছে খুকী, বেলা অনেক হল। আসলে কাযিক শ্রম না করে আর গাড়িতে ঘুরে-ঘুরে অভ্যাস এমন, যে তা মালুম দিচ্ছে বেশ। এদিকে ঘুরতে ক্যাঁক, ওদিকে ঘুরতে কোঁক্, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কোঁককোঁক্। বাড়ির গ্যেটে পা রাখা মাত্র শরীর ছেড়ে দিয়েছে। বিছানা ডাকছে আয়, আয়- একটু গড়িয়ে নিয়ে তারপর নাহয়..... কিন্তু উপায় নেই। লেখাটা নিয়ে বসতেই হবে। বেশ ক’দিনের দিচ্ছি্ দেব করে ঠেকেছে এসে কালকের ডেডলাইনে। কোনোমতে চেঞ্জ করে বেডরুমে ঢুকেই খাটের ওপর ছড়িয়ে ফেলল খাতাপত্র। বুকের তলায় বালিশ নিয়ে- যতটা রিল্যাক্সেশন সম্ভব উপুড় হয়ে শুয়ে শুরু হল লেখা। দেখা যাক্- কিছুটাও যদি ম্যানেজ করা যায়। কিন্তু এমনই গেরো, লিখতে-লিখতে সেই গিয়ে আটকালো সন-তারিখে। ভেবেছিল আজ আর নেটে বসবে না। এক সাইট থেকে অন্য, সেখান থেকে অন্য যেতে-যেতে কোথা দিয়ে যে উড়ে যায় সময়, তাই রাত দুপুরে না বসারই চেষ্টায় ছিল। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে এক ফোড়নের মত এই নেট নির্ভরতা সব গন্ডগোল করে ছেড়ে দিয়েছে। বই খুলে খোঁজায় আলসেমী আসে, চোখে ভাসে একটা শুধু ক্লিকের অপেক্ষায় নেটের বাড়ানো হাত। বদল প্রযুক্তির সঙ্গে-সঙ্গে বদলাচ্ছে যে ইচ্ছাপত্র তা’তে নিজেকে নিয়েই অবাক প্রিয়দীপা তো বাচ্চাদের আর দোষ কি। ওরা সাদা পাতা- বুকে রং ভরতেই এসেছে, যে কোন প্রযুক্তিতেই গ্রহণ ক্ষমতা ইউনিক। পিছুটানহীন, নেতি ভাবনার দ্বিধামনবিহীন শুধু সামনে তাকানো বলে ওদের প্রাপ্তিটাও ঢের। গুছিয়ে বসা বিছানার মায়া ছেড়ে উঠতেই হল- কম্প্যুটারে যেতে হবে। ড্রইংরূমের টেবিল জুড়ে ছড়ানো-ছিটনো সিডির রাজ্য, আলেখ্যর ছেড়ে যাওয়া জামা মনিটরের মাথায়। ওফ্, আর জায়গা পায়নি। অবশ্য দোষ দেবে কি- যা তাড়াহুড়ো গেল, একদম ঝড় বইয়ে এসেছিল সব। জামা সরিয়ে প্রিয়দীপা নেট খুলতেই চমকে গেল একদম। আলেখ্যর ই-মেল ঘর দু’হাট খোলা। ও- তারমানে ছেলে সিডিতে গেম খেললেও চুপিসারে নেটে ঢুকেছিল। অথচ প্রিয়দীপা বলে রেখেছে-
- আমি না থাকলে তুমি নেট খুলো না যেন।
- না, এ’বাড়িতে খুলি না তো। জান দীপমৈ, গেমটা নামিয়েই কানেক্সান অফ করে দিলে হার্ডডিস্কের মেমরীতে ওটা থেকে যায়, আমি তখন অফলাইনেই খেলি।
- বাবা, তুই এ’সবও শিখে গেছিস! তোদের বাড়িতে এত ভাবাভাবির কী দরকার, আনলিমটেড এ্যাক্সেস যখন।
- না এমনিই বললাম। তুমিও পারো, টুক করে কোন গেম নামিয়ে এবার যতক্ষণ খুশী খেল।
- বেশ বুঝলাম। তবে এ’বাড়িতে ও’সবের দরকার নেই।
- এ’জন্যই তো এখানে সঙ্গে করে সিডি আনি।
- লক্ষী ছেলে। তা তোদের বাড়ির ব্যাপার কী- সিডিতে না....
- না, না, ও’বাড়িতে যা কিছু সব নেটে।
- তা এত গেম সিডি থাকতে তোর অনলাইনের কী দরকার?
- কত নতুন খেলা ওখানে পাই বল।
- তা তো পাও, কিন্তু নেটে কত কাজও করা যায় তা জান?
- জানি, কিন্তু কেন করবো? বাবাই আমায় সপ্তায় দু’দিন মোটে বসতে দেয়। তাও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে উঠিয়ে দেয়, ঘরে বসতেও দেয়না।
- বাবার কাজের সময় তুমি বসে থেকে কী করবে?
- এমনিই.... দেখব, বাবাইও তো খেলে।
- কে বলল?
- আমি জানি। দরজা বন্ধ করে বাবাই খেলে। আমি খেলবো না বুঝি?
- হুম।
বুঝেছে প্রিয়দীপা, ভিতরের আক্ষেপ উঁকি দিয়ে গেছে। আলেখ্য নিজ-আবিষ্কৃত অনলাইন-অফলাইনি পন্থায় নিশ্চই গেম নামিয়েছিল আর সেকারণেই..... দীপ্ত একটা হাঁদা। বাপ্ হয়েছে, ছেলে মানুষ করার একটা স্টেপও যদি ঠিকঠাক নিতে জানে। রেশনের মত বরাদ্দ করেছিস্ সময়, তো নিজেও তা মেনে চ’। তা না- আগে ফিরলে উঠিয়ে দেয়, দরজা বন্ধ করে বসে। কি শিখছে ছেলে? যার হাতে ক্ষমতা তার কাছেই এক্তিয়ার। এত ইন্টেলিজেন্ট ছেলেকে কপাল করে পেয়েছিস, এমনি করে সে খেলে যাবে আরো কতকাল? ইন্টারেস্ট বাড়াবার কতরকম সফ্টওয়্যার, ইনোভেটিভ কাজের একশো দিশা। সেসব জলাঞ্জলি দিয়ে....
প্রিয়দীপার জরুরী কাজ মাথায় উঠল, আলেখ্যর খোলা ই-মেলে তদন্তে নামল। ছেলে স্টে সাইন ইন রেখে নেটে ঢুকেছিল আর লগ আউট না হয়ে সাইট কেটেছে বলেই ঘর খোলা খাতা। ইনবক্সে রাজ্যের কোম্পানীর পাঠানো গেম। কী মনে হতে ওর স্প্যাম ফোল্ডারেও গেল ও খুব অস্বস্তিতে পড়ে গেল প্রিয়দীপা। সব ভুলভাল সাইট থেকে পাঠানো মেল। খেলার বাইরে কিছু বোঝেনা দেখেই ও’সব আনফোল্ডেড পড়ে আছে অপেক্ষায়। একটা ফোল্ডার খুলল প্রিয়দীপা। কিন্তু কী এটা? একটি মেয়ের নগ্ন বুকে ধীর গতির একটি মাকড়সা চলে বেড়াচ্ছে। সরুসরু ঠ্যাং নাড়িয়ে সুতোর আগায় শরীর ঝুলিয়ে টিপ করে সেটি পৌঁছে গেল নিপলের কাছে। তার ভাঁটার মত ঘুর্ণি চোখে বদল আলোর উত্সব। ঠিক তখনই একটি পুরুষ হাত ঢুকল স্ক্রিনে- মাকড়সাকে তাড়াবার ছল করে। মাকড়সা দৌড়ল, গুটিসুটি দাঁড়াল এক কোণে, স্থির চোখের তারায় তখন সবুজ রঙা রাগ। শিহরিত নারী শরীরও কম নয়, দিব্য উদগ্রীব- পাল্লা দিয়ে যৌনবোধের জানান দিচ্ছে। এবার পুরুষ হাতের পাঁচটা আঙুল হঠাত্ পাঁচটা ঠেউ হয়ে বদলে ফেলল চরিত্র। হাতের ভঙ্গীমায় লোভের রোশনাই মেখে স্রোতের মত সে’সব ধাবমান। মাকড়সার দিকে নয়, লক্ষ্য গুরুস্তনীর শরীর অভিমুখ। এবারে আর কি, দিয়া জ্বাললেই হয়- নারীশরীরের উন্মুখ উল্লাস তো ধরা দিচ্ছেই তার বোঁটার চুড়ায়। আলতো এবার পুরুষ হাতের আঙুলখেলার লোম-অনুলোম-বিলোম। মাকড়সা কিন্তু পালায়নি- অল্প দূরে অপেক্ষায়.... কীসের? কেজানে। খেলা পাগল হয়েও প্রিয়দীপার আর কিছু ইচ্ছে হল না। আলটিমেটলী এটা আলেখ্যর ঘরের পোস্ট। যদি ওর চোখে এটা পড়তো? ইস্। বছর বারোর মেল-এ এসেছে এই গেম? নাঃ। আর কিচ্ছু জানতে চায়না, নিশ্চুপে প্রিয়দীপা স্প্যাম ফোল্ডারের সমস্তটা ডিলিট করে দিল। ওর মেল ঘর বন্ধ করে এল নিজেরটায়। গোটা দু’য়েক মেল যা এসেছিল, তা পড়ে নিয়ে উঠল। মেজাজ এমন নষ্ট হয়েছে যে কাজের উত্সাহ শেষ। মনে চিন্তার স্রোত- কীভাবে রক্ষা পাবে আলেথ্যর আদত শৈশব, ওর বাবা দীপ্তর আপাত বয়ঃপ্রাপ্ত শিশুবেলা?
কাজের কাজ কিচ্ছু হলো না, মাঝখান থেকে রাত হল অনেক। আলো নিভিয়ে শুতে গেল যখন, তখন রাত দুটো। এ্যালার্ম দেওয়াই ছিল, ছ’টা বাজতে উঠতে অসুবিধে হল না। চা নিয়ে সোজা এসে বসল পড়ার টেবিলে। আগামীকাল গান্ধীজয়ন্তীর ছুটি, আজ দিতেই হবে নোটস্। সকালের ঠান্ডা আবহ আর ফ্রেশ মাইন্ডে ঘন্টা দুয়েকে নেমে গেল লেখাটা। বেশ ফুরফুরে লাগছে, চেয়ার ছেড়ে উঠল প্রিয়দীপা। কালকের কাজপত্র সাজিয়ে ফেলল মনে মনে। পুরোপুরি ছুটি আজকাল এত কম, যে কিছুতেই সব সামলে ওঠা যায়না। চিরদিনের সেই চব্বিশ ঘন্টাই দিনের হিসেব, তবু ফিঙের মত সময় লাফিয়ে পালায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছে যখন আলেখ্যর ফোন-
- আমায় নিয়ে যেও দীপমৈ।
- কী রে, কালই এসেছিলি আবার আজ তোকে ছাড়ছে যে!
- বাবার একটা কাজ করে দিয়েছি, তাই।
- কি কাজ?
- ভিডিও ডাউনলোডারটা বাবা নামিয়েছিল কিন্তু দু’ মিনিটের বেশী সেভ হচ্ছিল না। আমি পুরোটা করে দিয়েছি।
- তাই বুঝি? তুই এবার এ্যাটাচী হাতে বেড়িয়ে পড় সোনা, কত কিছু পারিস। আচ্ছা আমিই নাহয় তোর প্রথম কাস্টমার হব, আমাকেও নামিয়ে দিস্ ওটা।
- তোমার তো লিমিটেড এ্যাক্সেস।
- ঐ জন্যই তো, বরং তোদের থেকে আমারই বেশী অফলাইনের প্রয়োজন।
- তবে ঝটপট চলে এসো সোনামৈ, বাবা আমায় নিয়ে যাচ্ছে না। বলছে ‘গেলে যাও, আমরা যেতে পারছি না।‘
- আরে পারমিশান পেয়েছিস্ এই কত, দাঁড়া আসছি। কাল ছুটি, থাকবি তো?
- না, না, মা কাল গড়িয়াহাট যাবে, ফেরার পথে আমায় নিয়ে আসবে বলেছে।
বেশ রাত করেই ফিরল প্রিয়দীপা। আলেখ্যকে নিয়ে, রেস্টুরেন্টে খেয়ে। বাড়িতে এসেই কাপড়-চোপড়, ওয়াশিং মেশিন নিয়ে পড়ল। এখুনি শোবেনা, তাই যতটা কাজ এগিয়ে রাখা যায়। মন হাল্কা, দিনটা ভাল কাটল। স্টুডেন্টস খুশী কি অখুশী তা জানেনা, কিন্তু আর্টিকেলটা লিখে ভাল লাগাটা বেশ। এমন ওর প্রায়ই হয়। রোজের ধরাবাঁধার বাইরে একটু অন্য টাইপের লেখালিখিতে চিন্তা যেমন, মনোমত লিখতে পারলে খুশীও তেমন। যদ্দিন এই ভাল লাগাটা আছে, তদ্দিনই লাভ। আজ রাতে আবার পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মত আলেখ্য, রেস্টুরেন্ট, কাঠি আইসক্রীম। গাড়িতে ফেরার সময় সিলিন ডিওন-এর গান চালিয়ে গলা মিলিয়েছিল দু’জনে। এই হাল্কা শীত, রাতের ফাঁকা রাস্তায় যেতে-যেতে কতদিন পর ড্রাইভ করাকে যে এনজয় করল প্রিয়দীপা।
যথারীতি আলেখ্য বাড়ি ঢুকেই কম্প্যুটারে। সেই গেম সিডি, সেই গাড়ী, বন্দুক, বোমা..... ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে ওর সঙ্গে থেলায় বসল প্রিয়দীপা। কিন্তু ছেলে এতই দড়- খেলবে কি, হেরে-হেরে ভূত-ভবানী, ইন্টারেস্টই গেল। ছেড়েছুড়ে বলল-
- খুব হয়েছে, এবার আমি শুতে যাব তুমি ভিডিও ডাউনলোডারটা নামাও।
- তুমি শুতে যাওনা, আমি নামিয়ে আসছি।
- ওরে ব্বাবা, তুই বেশী সময় নিলে? আমার মোটে 0.15 জিবি প়ড়ে আছে।
- তুমি দীপমৈ সত্যি- আমি জানিনা বুঝি।
পাগলা যে সবেতেই তুখোড় তা জানে প্রিয়দীপা, তবু বলা- অপচয় ওর সয় না। প্রিয়দীপা ব্যস্ত হয়ে পড়ল ভিজে কাপড়চোপড় নিয়ে। শুকতে দিল বারান্দায়, বেডরুমে। এই এক সমস্যা ফ্ল্যাটের- একার জন্যও অকুলান। তা’ছাড়া পুরো সপ্তাহর জমানো বলে কথা, চাট্টিখানি? কিছু কাপড় মেলতে ড্রইংরুমে গেল আর ধাক্কা লাগল সেখানেই। আনএক্সপেক্টেড কিছুর সামনে পড়ে যে শক লাগে, তা লাগল মারাত্মক। সেই থেকে যে যন্ত্রণার শুরু, তা আর যাচ্ছে না। কাল সারারাত ছেঁড়াছেঁড়া ঘুমের পরে আজও দিনটা গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে, ছুটিটাই বরবাদ। সকালে বিছানা তুলে এসে দেখেছিল আলেখ্য রেডী হয়ে বসে- পালাতে চায়। দুজনেই দুজনের মনোভাবটা বুঝছে অথচ....
প্রিয়দীপা ঠিকমত কথা বলেনি, চোখে চায়নি ওর, আলেখ্যও ছিল দ্বিধায়। বেলায় বুবলী এসে ওকে না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত একটা অস্বস্তি ছিল দু’পক্ষেই। যতক্ষণ ছিল, স্টাডিরুমেই ছিল- না কম্প্যুটার, না টিভি, না আঁকাআঁকি। কষ্ট বুকের এতই গভীরে প্রিয়দীপার যে না পারছে কারুকে বলতে, না পারছে সইতে। এটা বুঝেছে বেশ যে বারণ স্বত্বেও আলেখ্য নেটে যায়- অশ্লীলতায় যাবে বলে। শুধু কাল নয়, পরশুও ও নেটেই ছিল আর প্রিয়দীপা ভেবেছে নষ্ট বন্ধুর পাকামীতে....
হায় কী দুঃসময় তোর। ঘর পরিবেশ থেকেই হয়তো অন্যায্যতার শুরু। এবার সবটা স্পষ্ট, এ’ দায় দীপ্তর। ঘরে শিশু থাকলে যে সতর্কতা দরকার, তার কানাকড়িও নেই, আলেখ্য বাধ্য হয়েছে দেখতে। ও ইন্টেলিজেন্ট, খুঁজে নিয়েছে আপাত গোপন রাস্তা আর তারপর যা- তা অভ্যাস। আহা রে, বড়র ভুলকে কষ্ট দিয়ে, লোভকে অস্থিরতা দিয়ে মেটাচ্ছে কচি শরীর। মনহীন শরীর ঘিরে একতরফা ফ্যান্টাসি যদি বিশ্বাসে বসে যায়, কী হবে? ওর জীবন ওকে ভালবেসে কখনো কি ‘ভালবাসা’-র খোঁজ দেবে? নিজের নয়, ভাইঝির ছেলে আলেখ্য। মরুগ্গে বলে ইগনোর করে প্রিয়দীপা ঢুকতেই পারতো নিজস্ব ছান্দিক ঠিকানায়, কিন্তু পারছে কই? যন্ত্রণার আসলে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ বলে কিছু নেই। রঙ তার চিরকালই কালো। গতকাল ড্রইংরূমে ঢুকতেই, ঈগল পাখীর ক্ষিপ্রতায় সাইট কেটে খেলায় ফেরার মধ্যে মূহুর্তের সময় নিয়েছে আলেখ্য। কিন্তু যা দেখার তা ও’টুকুতেই ঢের। পরশু স্টিল পিকচার থাকলেও কাল ছিল নড়াচড়ার ভিডিও ফাইল। বাইরে চলে গিয়েও তাই ঘরে ফিরেছিল প্রিয়দীপা আর তখনই অনুভব করেছিল বদল। মূহুর্তের ঐ ফাঁক গলে কি দেখেছিল ও? দেখেছিল উলঙ্গ্ দুটো শরীর, যারা যৌনখেলার ক্রিয়ায়। আলেখ্যর অবস্থা তখন ভ্যাবলাকান্ত ভোম্বলনাথের মতন। চোখে অচেনা নজর আর বাঁ-হাত দিয়ে খামছে ধরে আছে নিজের পুরুষাঙ্গ। প্রিয়দীপা ঠিক জানে, ওটা উত্তেজনা না, ওটা ব্যথা। অচেতন, অবোধের ওপর চেপে বসা ঘোড়া রোগ। পালাতে পারছে না, কারুকে বলতে না, বুঝছেই না কি হচ্ছে, অথচ উচাটন- নারী-পুরুষ মানে এই? মেয়ে শরীর এ’ভাবে ঘাঁটে? মা-বাবা মানে......
সুস্থ জীবন চেনার আগেই চেনা প্রিয় মুখগুলো অন্য প্রশ্নের সামনে। কৌতুহলের ছদ্মবেশে ছেলেবেলার চাপল্য, উন্মাদনা এক বুক কষ্ট হয়ে থমকে গেছে নষ্ট পথে। জানে প্রিয়দীপা, কষ্টেই ছিল আলেখ্য, অন্য কিচ্ছু হতেই পারেনা। মানুষের হাজার প্রবনতার মধ্যে যৌন কৌতুহল প্রধান প্রবণতা জেনেও মনে প্রশ্ন- প্রি-এ্যাডোলেসেন্স-এ? কোনোকিছু না বুঝে গ্রহণ হলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ভুল ব্যাখ্যা পৌঁছবেই। আলেখ্য পর্ণোগ্রাফিতে দুটো শরীরকে ক্রিয়া করতে দেখেছে। অথচ বাস্তবে পাশাপাশি একটা মনও চলে, যাকে দেখা যাচ্ছেনা বলে জানছেই না ‘ভালবাসা’-র বৃত্তান্ত। আগ্রাসী ক্রিয়াকলাপ যা মনের উপস্থিতি বিহীন জান্তব। সবটা বুঝতে আরেকটু সময়, পাশে গার্জেন, নিদেন প্রেমের বোধে যাওয়া চাই। প্রিয়দীপার বুকের মধ্যে খলবল করছে পাঁক- মনে হচ্ছে পৃথিবী গোল্লায় যাক্, আলেখ্য ভাল থাক্। বেচারী অনেক কিছু না বুঝেও এটা বুঝে গেছে যে এ’ লুকোবার, বন্ধ দরজার। আহা, ফুটে উঠতে চাওয়া কৈশোরকে কুঁড়িতেই খুন। স্থিরতা নেই, ধীরতা নেই, সোহাগ নেই সোজা সংরাগের সঙ্গে আলাপ?
রাতটা কুয়াশা জড়ানো অন্ধকারে মোড়া, ফাঁকেফুঁকে উপচে পড়া হাজার তারার ভিড়। মনে হচ্ছে ছেঁদা হয়ে গেছে আকাশ আর বিন্দু-বিন্দু আলো ঠেলেঠুলে বাইরে আসার চেষ্টায়। প্রিয়দীপা হাত বাড়াল কাছের তারার দিকে। পেড়ে আনতেই টুপ করে তা গড়িয়ে গেল জলে। না, না, হারালে চলবে না। স্কুলের স্ক্র্যাপ বুকে বেদানাদানা দিয়ে হার্ট তৈরী করেছে, তার মধ্যিখানে চিপকাতে হবে- লহনার চেয়ে সুন্দর হতে হবে খাতা। গান ভেসে আসছে, গায়িকা সিলিন ডিয়ন। ঠিক তখনই দাদীর ভাত রান্নার ডেকচী থেকে উড়ে এলো তারা। আরে, এটার রঙ তো লাল। কী হবে? কী করে লাল হার্টে লাল তারাকে সাঁটবে, হারিয়ে যাবে যে। তবে কি এ’বারেও সেরা লহনাই! কান্না পাচ্ছে প্রিয়দীপার, চোখ বালি-বালি-বালি। কিন্তু মনে আছে, মুঠোয় খাবলা সোনার কুচি কুড়িয়েছিল ও। এই কারণেও কান্না পাচ্ছে আরো। রূপোলী তারা রূপোর হয়েও ছড়াচ্ছে সোনার কণা। কেন? ভয় লাগছে প্রিয়দীপার, মুঠো খুলে ছড়িয়ে দিল দানা। আরে, সমুদ্রের মাথায় দুলতে-দুলতে দানাগুলো কী সুন্দর ক্যালিডোস্কোপের মতন সিফটিং প্যাট্যার্ন তৈরী করছে। কোথা থেকে এল এত রঙ? আঃ, কি প্রশান্তি, জলকণার ঝাপটা চোখে-মুখে, হাওয়ায় সেই গান- সিলিন ডিয়ন।
ঘরের ল্যান্ড ফোনটা ঝনঝন করে বেজে ঊঠতে ধড়মড়িয়ে এসে ধরল প্রিয়দীপা।
- দীপমৈ?
- হ্যাঁ আমি, বলো।
ও’প্রান্ত নিশ্চুপ-
- বলো কি বলবে?
- দীপমৈ-
- বল, কথা বলছ না কেন?
থমকে থাকা আলেখ্য চুপ-রাজ্যের বাসিন্দা। মিনিটখানেক বাদে-
- দীপমৈ-
- হ্যাঁ আমি দীপমৈ বাবা, কিছু তো বলো।
- তুমি আমায় ডঃ.বাবুর কাছে নিয়ে যাবে?
- মানে?
- তুমি আমায় বকবে?
- না তো।
- আমি জানি।
- কি জানিস?
- রাগ করেছ।
- আরে না....
- তবে মোবাইল কেন ধরছিলে না?
- ও, তাই বুঝি... আসলে লিখতে-লিখতে ঘুমিয়ে পড়ে স্বপ্ন দেখছিলাম, ঘুম ভাঙেনি রে।
- কি দেখলে?
- দেখছিলাম আকাশের তারা নিয়ে খেলছি, আমার স্কুলবেলা, স্ক্র্যাপবুক, ক্যালিডোস্কোপ- আর ফোনটা যখন বাজছিল তখন সমুদ্দুরে ছিলাম, শুনছিলাম- সিলিন্ ডিয়ন, সেদিন তোর সঙ্গে গাড়িতে যেটা গাইতে-গাইতে এলাম। আসলে মোবাইলেরও রিং টোন তো এটাই, কি করে যেন সব জড়িয়ে-মড়িয়ে একশা। ভাগ্যিস তুই ল্যান্ডলাইনে করলি। উঠে দেখি জানলা খোলা, বৃষ্টির ছাটে ভিজছি আমি, ভিজে যাচ্ছে বইখাতা- ও’দিকে স্বপ্নে ভাবছি সমুদ্রের হাওয়া, জলের ছিটে.... তবে তোর কি হল, ডঃ-এর কাছে কেন যাবি?
- তুমি এসো।
- কোথায়?
লাইনে কোঁ-কোঁ আওয়াজ। ‘এসো’-টুকু বলেই ছেলে কেটে দিয়েছে লাইন।
3
রাত প্রায় এগারোটা, এইমাত্র বাড়ি ফিরল প্রিয়দীপা। সারাদিন পরে মনে মিশ্র অনুভূতি, সকালের স্বপ্নটার মত। কখনো ভীতি, কখনো খুশী, কখনো অপ্রাপ্তি, কখনো প্রশান্তি। অথচ ভাবনাগুলো ক্যালিডোস্কোপের মত কালার্ড, কমপ্লেক্স, সিমেট্রিক্যাল।
সকালে আলেখ্য লাইন কেটে দিতে ফের ফোন করেছিল প্রিয়দীপা, বুবলী ধরল। ওরা বিকেলে কোথাও যাবে, আলেখ্য যাচ্ছে না। প্রিয়দীপা রাত নটা-দশটা অবধি ওদের বাড়ি থাকতে পারে কিনা জানতে চায়। অন্যসময় হলে জানেনা কি করত, কিন্তু আলেখ্য কিছু বলতে চেয়েছিল, যা জানাটা জরুরী। আহা, বেচারীর কষ্টের বোঝাটা যদি কিছু হাল্কা করা যায়। সময়মত পৌঁছে যাবে জানিয়ে দিল বুবলীকে। ওরা রেডীই ছিল, তিনটেয় পৌঁছতেই বেরিয়ে গেল আর ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল ঠান্ডা-শীতল বরফকুচি অনুভব- ফের। মুখোমুখি দু’জনের কাছে দুজনের সেই অস্বস্তির ঘেরাটোপ। প্রিয়দীপা দমচাপা অবস্থা থেকে বেরোতে সঙ্গে আনা গেম সিডিটা দিয়ে বলল-
- এটা নতুন বেরিয়েছে, খেলে জানাস্ কেমন। আর তুই যে ফ্রায়েড চিকেন-
কথার মাঝখানেই আলেখ্য বলল,
- তুমি কবে নিয়ে যাবে আমায়?
- কোথায় সোনা?
- ডঃ-এর কাছে?
- কেন, কী হয়েছে?
- আমি বড় হবো না দীপমৈ।
- তো ডঃ কি করবে?
- থামিয়ে রাখবে। আমি ফুটবল চাই, হুইশিল বাজান ট্রেন চাই, রিমোট প্লেন চাই দীপমৈ।
- তা তো এখনো পেতে পারো বাবা।
- না।
- কি না?
- আমি বড় হব না।
ইস্। যন্ত্রণার ছায়া কত গভীরে নেমেছে ওকে ছুঁয়ে। যে’জন ভাবে ডক্টর মানে ম্যাজিসিয়ান- চাইলে সব পারে, সে’ অবুঝের কপালে কিনা এই দুর্ভোগ। চোখে জল এসে গেল প্রিয়দীপার। দু’হাতের বেড়ে জড়িয়ে নিল আলেখ্যকে। কপালের ওপর ছড়িয়ে পড়া চুলগুলোকে গুছিয়ে দিতে দিতে বলল-
- আমিও তাই চাই রে সোনা। সেই স্কুলবেলার দিন, সেই এ্যান্টেনায় লটকানো ঘুড়ি পাড়তে ধরা পড়া বকুনী, সেই দুর্গাপুজোর চারটে দিনে একার সঙ্গে একার খুশী.....
উত্ফুল্ল আলেখ্য ওর হাত ছাড়িয়ে লাফিয়ে উঠে বলল-
- চল দীপমৈ, দু’জনেই যাই। তুমি আর বাড়বে না আমিও না।
- কিন্তু মুস্কিল যে একটা আছে বাবা।
- কি?
- যদি বড় না হতাম, তবে তোকে কোথায় পেতাম? তেমনি তুইও থেমে গেলে অনেক কিছু মিস করবি সোনা। একই অবস্থায় থেকে বোর হতে-হতে একটা বিশ্রী দশা হবে।
- তা ঠিক, কিন্তু আমার ভাল লাগে না।
- ভাল লাগবে বাবা- আমি আছিনা, তোমার দীপমৈ। তুমি কথা শুনে চললে দেখবে বড় হওয়াটা কত সুন্দর।
প্রিয়দীপার কোলে মুখ গুঁজে আলেখ্য শুয়ে রইল অনেকক্ষণ। কেটে গেল বাকী সময়টা তারপর একসঙ্গে সিনেমা দেখে, খেয়ে, গান গেয়ে। দীপ্ত-বুবলী ফিরল নটায়। প্রিয়দীপা কোন ব্যাখ্যায় না গিয়ে শুধু বয়সের দাবী চাপিয়ে দীপ্তর নেটে ঢোকাকে পাশওয়ার্ড সিস্টেমের আওতায় আনল, তবে ছাড়ান।
শরীফ মেজাজে বাইপাশ দিয়ে ফিরছে প্রিয়দীপা, ড্রাইভিংটা আজকেও ভারী এনজয়েবল। গান বাজছে- সিলিন ডিয়ন। চোখে স্বপ্নের রেশ, মনে বিশ্বাস- লহনার চেয়ে ওর স্ক্র্যাপবুক বেটার হবেই। কেননা দূরের ঐ তারাটা আর সোনালী নয়, লালও নয়, রূপোলী প্লাবনের মধ্যে ঝকঝকে রূপোর মতন। প্রিয়দীপা হাত বাড়াল আকাশে।
গ্যারাজে গাড়ি তুলে পোষাক বদলে প্রিয়দীপা সোজা বিছানায়। স্ক্র্যাপবুক রেডী করতে হবে, লাল হার্টে রুপোর তারা চিপকাতে হবে, লহনার কাছে হারবে না কিছুতেই। দেখে নিয়েছে প্রিয়দীপা- হাওয়ায় সফলতার ঘ্রাণ নিয়ে জেতবার আভাস ছিল আকাশে।
40 comments:
প্রথমেই দুঃখিত, মতামত দিতে দেরী হল। আসলে তুমি যখন গল্পপ্রকাশের কথা লিখেছ, তার একদিন পরেই আমাকে ব্যাঙ্গালোরের প্লেনে উঠতে হল। গল্পটা প্লেনে বসে বসে দেশ পত্রিকাতেই পড়লাম।
ঠিক কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। অনেক কিছু ভীড় করে আসছে মনে। আসলে আমাদের প্রি আডোলেসেন্সটা এমনটা ছিল না তো, এত মোবাইল ইন্টারনেট, এত বাইরের হাতছানি। তাই প্রথমেই পড়তে গিয়ে কোথাও একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। অবশ্যই তা আমার দোষ।
তবে তুমি যে এই ভীষণ বাস্তব একটা সমস্যা তুলে ধরেছ এত রিয়েলিস্টিক ভাবে,তার জন্য অবশ্যই হ্যাটস অফ।
আর বাকী যা মনে হল, তুমি যেমন লিরিক্যাল লেখ, তার থেকে সরে এসে অন্যরকম করে লিখেছ। তবে শেষে ঐ স্কুলের স্ক্র্যাপবুকের ব্যাপারটা দুর্দান্ত। লেখার বুনোট দারুণ। আসলে সবকিছুই কেমন পরস্পরের সাথে জড়িত,তাই না?এই আডলেসেন্স,তার থেকে শৈশুবের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ,বাবা মা কে ছাড়িয়ে আরো প্রাজ্ঞ কাউকে আঁকড়ে ধরা ইত্যাদি। আমার মনে হল শৈশব যেমন প্রাজ্ঞতাকে আঁকড়ে ধরে বাড়তে চায়,প্রাজ্ঞতাও তেমনি শৈশবকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে পুনরাবিস্কৃত করে। দারুণ। আরো লেখ মঞ্জুদি।
তিতাস, এ'জন্যই তোমার মন্তব্যের জন্য আমি অপেক্ষায় থাকি। কি সুন্দর সোজা-সাপ্টা জানালে- 'পড়তে গিয়ে অস্বস্তি হচ্ছিল'। ওটা তো আমারও ছিল বলেই না এমন কাছাখোলা লিখতে পারলাম। আর লিরিক্যাল বলছ? না, তা আমি চাইনি, ওটা সচেতন প্রয়াস দিয়েই রুখেছি। কেন বলতো? কেননা গল্পের ফর্মাটের মধ্যে দিয়ে আমার কিছু বলার ছিল। তাই থীম বা কন্টেন্ট যাতে গুলিয়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে-রাখতে লিখেছি। তবু কি পারা যায়? তাই ঐ স্ক্র্যাপবুক পার্ট। জায়গা খুঁজে নিয়ে কাব্যিজলে টুক করে বুড়বুড়ি কেটে নিয়ে তাই আবার উঠেছি ভেসে। তবে তিতাস, তুমি যে আদতে surrealism বা mystic জগতের মানুষ, তা বুঝে গেছি। তোমার মত পাঠককে ধরতে গেলে সোজাসাপ্টায় হবেনা.... ফোড়ন কিছু চাই-ই। তোমার কাছে আমার অনুরোধ রইল, তথ্যকেন্দ্রে প্রকাশিত একটা গল্প, নাম- 'পূর্ণপ্রজ্ঞা' এখানে রেখেছি, সময় পেলে পোড়ো ও জানিও... পালিও না।
মঞ্জুশ্রী , ভালো লাগল বলে এখানে জানিয়ে গেলাম । নতুন প্রযুক্তি, নতুন ধাঁচের গল্প আমাকে সবসময় ই টানে । তাই এবারের ভালোলাগাটা সেই কারণে । আর তোমার নিঁখুত বুনুনির সাথে তো আগেই পরিচয় হয়েছে আমার । আরো এমন লেখো । অনেক শুভেচ্ছা রইল !
তোমায় পেয়ে অসম্ভব খুশী হলাম ইন্দিরা। তবে কোথায় পড়লে এটা? প্রিন্ট মিজিয়ায় না আমার এই মনফসলে? বললে না তো? তোমার শুভেচ্ছা অন্তরের সঙ্গে গ্রহণ করলাম ইন্দিরা। তোমার ব্লগেও আমি যাই, পড়ি, বলিনা। এবার থেকে বলব....
আমার ভায়ের কথা পড়ছি বলে মনে হল। গল্পটা খুব প্রাসঙ্গিক লাগল আর এ্যাজ ইউজুয়াল ভালই। তিতাসের সঙ্গে আমিও একমত। ঐ স্বপ্নের তারা, লহনা, ক্যালিডোস্কোপ নিয়ে পুরো অংশটার জন্য গল্প অন্যরকম ভাল লাগার দিকে গেছে। চালিয়ে যাও, সবসময় তোমার লেখা পড়ি।
Bah... protiti charitro khub jibonto, specially AALEKHYA.
Tomar utorottor safalya kamana kori.
aami DESH potrikatei porechhi go Manjushree ar ekhane comment korar sabcheye adorsho jaiga bole ekhane likhechhi bhai... bhalo theko!
লেখাটা মন দিয়ে পড়লাম...এক কথায় অনবদ্য.....
কিন্তু আমার প্রশ্ন "ভাল না লাগলে দাদা স্পষ্ট বলবেন" এই কথাটা তুমি আমাকে কেনো লিখেছিলে....কারন তুমি নিজেও জানো এই লেখাটা ভালো না লাগার কথা নয়.....আর যদি কেউ মন্দ বলে থাকে সেটা তার বোঝার অক্ষমতা, তোমার নয়...
আমি তোমাকে আগেও বোলেছি অনেক কঠিন কথা তুমি খুব সহজভাবে বলতে পারো....এটা তোমার লেখার একটা প্লাস পয়েন্ট....আর একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগে তোমার লেখার মধ্যে একটা অন্তনিহিতঃ ম্যসেজ থাকে যা পাঠকের চেতনাবোধকে নাড়া দেয়, যেটা খুব জরুরী। আসলে প্রত্যেক লেখক-লেখিকা, গায়ক-গায়িকা বা যে কোন শিল্পী সবারই কিন্তু একটা দায়বব্ধতা থকা উচিৎ....অন্যের জন্য কিছু করার, হয় তাকে আনন্দে দিয়ে উৎফুল্ল করে তোলা নয়তোবা তার চেতনাবোধকে জাগিয়ে তোলা.....
আমাদের এই প্রচেষ্টা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেনো তবুও তা একদিন বিন্দু বিন্দু করে সাগর গড়ারই মতো একটা সুস্থ জাতি বা দেশ গঠনে সাহা্য্য করতে পারে......
এবার একটু আন্য প্রসঙ্গে আসি......
তোমার লেখার পাত্র-পাত্রিরা য়খন সবাই ভারতীয় (বাঙা্লি) সেখানে বিদেশী বাচ্চা বা নারির ছবি কেন ? ঐ মাঝের ছবিগুলোর তেমন কোন প্রয়োজন ছিল না...কারন পাঠক যখন গল্পের বরননা পড়ে তখন তার মনে একটা চরিত্রচিত্রণ হয় তখন ঐ ধারনের ফটো তাতে বাধা সৃষ্টি করে......কাল্পনিক রেখাচিত্র তাও চলতে পারে..... আমার মনে হয় উপরে শুধু একটা বাচ্চা্র কাল্পনিক রেখাচিত্র দিলেই চলতো......তবে এটা আমার নিজস্য চিন্তাধারা অন্যদের সঙ্গে না মিলতেও পারে।
দিনদিন অমি যে ভাবে তোমার লেখার হাতপাখা(ফ্যান)হয়ে পড়ছি, যা ভাবিষতে তোমার লেখার প্রকৃত বিশ্লেষণে অসুবিধা সৃষ্টি করতেই পারে......
তোমার ব্লগটা খুবই সুন্দর...আমার শুভেচ্ছা রইল......
অলোক ভঞ্জ- দাদা, আমি আপ্লুত আপনার বিশ্লেষণে। আর লেখার মাঝে ছবির ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণতঃ আপনার সঙ্গে সহমত। এ যেন পাঠকের কল্পনার ওপর আমার চাপিয়ে দেওয়া দায়। তবু এর স্বপক্ষে কৈফিয়ত্ও একটা আছে। আসলে এত লম্বা একটা লেখা নেটে পড়ার অসুবিধে কাটাতেই ঐ ছবিছাবা দিয়ে এক প্যারার সঙ্গে অন্য প্যারার মধ্যে দূরত্ব তৈরী করা ও কিছুটা রিলিফ দেওয়ারও চেষ্টা..... ব্যাস এই তো।
আর আপনার লেখাপত্র রাখুন দাদা এই ব্লগে!!!!! যেভাবে খুশী দিন..... এই ব্লগে সবাই আসুক, লিখুক, পড়ুক এটাই আমার প্রধান চাহিদা। আশা করবো সময় সুযোগ পেলে আমার আগের প্রকাশিত লেখাগুলোও আপনি পড়বেন, যা এখানেই কিছু কিছু রেখেছি..... বাকী ধীরেসুস্থ রাখতে-রাখতে যাব।
আর কি যে বলেন.... ফ্যান!!!!!!! এ’ সৌভাগ্যের হকদারী কোটিতে গুটিকের জোটে। আমার অনেক পথ চলা বাকী দাদা। আপনি ‘লোটাকম্বলে’ থাকার দৌলতে আমার কিছুকিছু পড়েছেন.... তুলনায় প্রিন্ট মিডিয়ায় আমি আপাততঃ হাঁট-হাঁটি পা-পা। মোটে বছর দেড়েক বয়স।
মঞ্জু,
বহুদিন হয়ে গেল দেশ পত্রিকা আর রাখি না। কোনো পরিচিত,বন্ধু-বান্ধবের লেখা বেরিয়েছে জানতে পেলে কিনে আনি। এই সংখ্যা দেশও এনেছিলাম বিক্রম-এর কবিতা বেরিয়েছে জানতে পেরে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই পাতা ওল্টাতে গিয়ে তোমার গল্পে চোখ যায়, মাঝখান থেকে কয়েক লাইন পড়ে তুলে রাখি পরে পড়ব বলে।
লেখকের নামটা চেনা চেনা লাগলেও চিনতে পারিনি এটা ঘটনা। পরে সময় হাতে নিয়ে আবার যখন দেশ নিয়ে বসি, তখন পড়ে শেষ করি। পড়তে পড়তে একটা ভীষন প্রাসঙ্গিক আর বাস্তব সমস্যার চমৎকার উপস্থাপনা দেখতে পেলাম। ভাল লেগেছিল। পরে ব্লগে ঘুরতে গিয়ে জানতে পেলাম, দেশ-এর লেখক আমাদের লোটাবন্ধু। ভাল লাগাটা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেল বলা বাহুল্য। চমৎকার লেখা। বুনোট। আর বিষয়।
অভিনন্দন মঞ্জু..
মানতেই হবে, এটা আমার প্রাপ্তি যে তুমি আমার লেখা পড়লে শুধু নয়, আইডেন্টিফাইও করতে পারলে। আসলে 'বিবর্ণ কবিতা', তুমি কখনো আমার লেখায় যেমন আসনি, তেমনি আমিও মনে পড়ে না তোমার লেখা পড়লেও মন্তব্য করেছিলাম কিনা। এ বাবদে'দেশ'-এর কাছে আমার অজস্র কৃতজ্ঞতা, যে তোমাদের মত গুণী অনেক মানুষই বহুদিনের নীরবতা ভেঙে ফের যোগাযোগ করলো ও কিছু বললো।
তুমি ভাই এই ব্লগে কিছু লেখা রেখো ও অন্যত্র প্রকাশিত আমার কিছু-কিছু লেখ, যা এখানে রেখেছি, এমনি করেই তা পড়ে মন্তব্য কোরো।
আমি কিন্তু এখনও পড়িনি এখানে এসেও। আমি দেশ-এই পড়ব। কেনা হয়ে ওঠেনি এই দুদিনের মধ্যে। আজ খুব বৃষ্টি তবু ভাবছি যাবো।
মেঘ
তোমার গল্পে যেটা ভীষন টানে আমায় সেটা হচ্ছে ভাষার অলঙ্কার,উপমার কল্পনার জটিলতা।মাঝে মাঝে ভাবি, এত জটিল উপমা মাথায় আসে কি করে তোমার।মানে তোমার কল্পনা , কল্পনা করতেও পাঠককে ভাবতে হয় আর সেটাই লেখাটার প্রাপ্তি, পাঠককে ভাবানো (যে ভাবতে চায়, নতুন কোনো ভাবনা শিখতে চায়)।যাক অনেকদিন পরে যোগাযোগ হলো।তাও আবার ‘দেশ’ এর পাতা দেখে।
অনেকদিন পর খুব সুন্দর জীবনমুখী,বাস্তবধর্মী একটা লেখা উপহার পেলাম তোমার কাছ থেকে। খুব খুব ভাল লাগল।
মেঘ, অতনু, রাসবিহারী,
তোমাদের পেয়ে আমার কি যে ভাল লাগছে কি বলি। তবে অতনুকে ঘাড় ধরে এখানে লিখিয়েছি... নাহলে মেল ঠিকানায় লিখেই ছেলে কাটছিল।
মেঘ তো আমার সব মেঘলা করে দিয়ে গেলে 'এখনো পড়িনি' লিখে।
আর রাসবিহারী। তোমায় আর কি বলব, ফোন করে তুমি চেয়ে নিলে আমার মনফসল-এর ঠিকানা ও প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই এই ফীডব্যাক। আমি আপ্লুত ভাই।
মঞ্জু,
চিনতে পারোনি তো? এটাই তো মজাঃ-)
আমার ব্লগে তোমার মাউস যায়নি, কিছু লেখনি এটা ঠিক, কিন্তু লোটায় কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। তোমার এই ব্লগপাতার ঠিকানাও সেখানেই পেয়েছি, 'তিতাস'এর সৌজন্যে।
এই অন্তর্জালে কত যে মণি-মাণিক্য ছড়িয়ে আছে, জানতেও পারি না। হঠাৎ হঠাৎ সামনে এসে পড়ে, কারো হাত ধরে।
ভাল থাকো। অনেক লেখো।
porechhi agei, kintu likhte deri hoye gelo go.tai kaan mulchhi...
ekta vishoni jaruri samaye vishoni joruri bishoy niye likhechho. tomar dekha-sona ke tai dhanyabaad ditei hoy. emon kato alekhya ke je roj dekhi. dipto keo. toba priyadeepara khub besi nei. thakle amader kaj kichhu komto.
বেশ অনেকদিন পরে এলে মনস্তাত্ত্বিক ইন্দিরা ( এখানে তোমায় এভাবেই ডাকবো। কেননা আমার আরেক গুণী বন্ধু ইন্দিরা মুখার্জীও এই ব্লগে আছেন এবং তিনিও রবীন্দ্রসঙ্গীতকার)।
তুমি কত লাকি বলতো, কত প্রবলেম নিয়ে তোমার কাছে আসছে মানুষজন..... এখান থেকেই পুঁজি নিয়ে লেখনা ইন্দিরা। কতো মানুষ হয়তো তোমার সেই কেস-হিস্ট্রি পড়ে নিজের সমাধান খুঁজে পাবে.....
বলতে-বলতে আমি পাগল হয়ে গেলাম, এবার আমি তোমার পেশেন্ট হবো নাকি? তখন কিন্তু তুমিও ছাড় পাবেনা এই বলে দিলাম.....জোরজার করে বোঝাতে গেলে কামড়ে দেব।
প্রিয় বিবর্ণ কবিতা......
চিনিয়াছি কন্যা, তুমি অনন্যা সামরান, শ্যাজা, ফ্যালনা.....
কি যে খুশী হলাম তোমায় পেয়ে.... তোমার 'বিবর্ণ কবিতা' অনুসরণেও গেলাম। আস্তে ধীরে পড়ব এবার, মন খুলে বলব এবার, হাতের কব্জি ফুলিয়ে লিখব এবার মন্দ-ভাল।
সত্যিই তো, আমাদের সেই কবে থেকে লোটায় মিলেমিশে লুটোপুটি অথচ শব্দজব্দে কাত্ আমি কিনা চিনতেই পারলাম না তোমায়!
ভেরি ব্যাড, ভেরি ব্যাড..... যা হোক্, এবার আসছি মানে আসছিই।
mam tomar lekhata 2 to aspect theke dekhlam- 1. content, 2. style of writing .prothome content er byapare 1ta kothai bola jay, it’s very much applicable 2 our society nowadays. Golper j jaiga ta amay sobcheye besi touch koreche seta holo jekhane aalekhya bole j se r boro hote chai na. jebhabe ghotonar dharabahikotar modho diye tumi e jaiga ta k enecho, ta onoboddo. In fact oi jaigata porte giye mone hochilo j amader internet, mobile r TV dependence er karone hoito ghore ghore aalekhya ra keu r boro hote chaibe na. 1ta bachchar psychology tumi j bhabe draw korecho, dat’s amazing...2nd thing 2 note in ur story is d way u described d whole thing, i.e. d stylization. ekhane 1 ta kotha bolchi, don’t mind. 1st time pore koekta jaigay amar mone hoechilo kichu kichu term boddo naked. O gulo oi bhabe use na korlei parte. Borong or opor 1ta prolep rakhte parte. But then, i read d story once again. Tokhon kintu sei dhakka ta laglo na jeta 1st time pore legechilo, jehetu age 1bar porechi. r tokhon e mone holo j oi dhakka tar e hoito dorkar chilo. Karon j problem gulo 1ta shishu mone dhakka mare sei problem jotokhon na boroder o dhakka mare totokhon amra ta realize kori na.tachhara j problem gulo naked truth, sei gulo bolar bhashar modheo kono rakh dhak kora uchit na r tumi jene bujhei ta koro o ni.so from both point of views, it can surely b said dat ur content is very strong and d way it is represented i.e. d style is equally bold.....keep it up.
একেই বলে লেডীব্র্যাবনের মেয়ে... হলেই বা সাবজেক্ট ইকনমিক্স। এত জাস্টিফায়েড বন্দেজ ও মন্দ লাগার স্বপক্ষের ব্যাখ্যা পড়ে আমি গান শুনতে পেলাম সুচেতনা, তোমার গান... সুরেলা, ফ্লোয়িং, বৃন্দাবনী সারং। আড়াল-আবডাল জানি মেয়ে জানি- কিন্তু দিতে চাইনি... কেননা কিছু দাবী আছে এই থীমের। শুনতে কৈফিয়তের মত লাগলেও বলি, যারা তোমারই মতন কুড়ির কোটার আশেপাশে, তারা পড়তে অস্বত্বিতে যাচ্ছে, এটা দেখলাম। শোন শোন, এই বয়সটায় প্রেমের মাদকতায় আছো... আর থাকতে-থাকতে এর সুধাময় বহিরঙ্গ, শিউলি ফুলেল অন্তরঙ্গ ও তার সুগন্ধ এসব দেখবে... এটা স্বাভাবিক। অথচ আমি এই দুনিয়ায় তোমাদের থেকে বেশীদিন থাকার দৌলতে দেখেছি প্রেমের যন্ত্রণা, বিষ, কালি, ঘৃণা। বাধ্যতামূলক ও’সব চিনতে চিনতে যেতে হয়েছে বলেই কখন যেন আড়াল সরেছে, নেমে এসেছ ‘কষ্টছোঁয়া স্বপ্নপথ বেয়ে’ স্বাভাবিক ছন্দে। প্রথমে এ’ নামটাই ছিল, কিন্তু পত্রিকা দপ্তর লেখায় হাত না ফেললেও, শিরোনাম থেকে ‘কষ্টছোঁয়া’ কে ছাঁটাই করে দিয়েছে। যদিও আমার তা ভাল লাগেনি।
তবে মানতেই হবে, সুচেতনার বিশ্লেষণ, যে চেতন পথের হাত ধরে এসেছে তা এসেছে জোরদার নিজস্বতা নিয়েই। এখন তো মনে হচ্ছে, ‘দেশ’ এটা জানতে পারলে তোমার প্রোফেশন বদল হতেও পারে। কেজানে, সমালোচনার জন্য তখন হয়তো….
আমি মুগ্ধ সুচেতনা।
ki bolte giye tumi thamle, jani na......tobe seta guess korteo bhoi pachhi.akrash utkontha golar kache chepe rakhlam. 'desh' amar profession bodol korte baddho korbe ki na jani na, tobe apatoto 'shohor' amar existing profession er shikriti dilei banchi.
'kosto chhoan swapnopath beye' naam ta khub bhalo laglo.in fact ei naam ta onek besi correlate kora jache golper sathe. karon 'swapnopath beye' naam ta niye onek bhabte hoyechilo j keno ei naam. but 'kosto chhoan' tuku add korle bojha onek soja hoye jache.
lastly ami tomar blog e asi na, tomar ei obhijog sompurno bhul. na hole tumi amar post er reply te ki likhle ta janar jonno raat 1:45 e ami ekhane ese comment post kortam na ... hi hi hi ....
মেনে নিলাম.... হার মানলাম সুচেতনা, তবে দু'দিনের জন্য। না এলে কিন্তু আবার চেঁচাব।
আর তোমার কাজের স্বীকৃতি? হবে এবং হবেই। তবে মন মুক্ত রেখো, বেশী আশায় থেকো না। পেলে যাতে উপচে পড়া খুশীকে ধারণ করতে পারো, তার জন্য নির্মোহ থাকাটা জরুরী।
দেশের আমি নিয়মিত গ্রাহক, পাঠক নই। বস্তুর গ্রন্থ সমালোচনা আর বইয়ের বিজ্ঞাপঙ্গুলো ছাড়া আর বিশেষ কিছু আমাকে টানে না বলে পড়া হয় না তেমন। তার মধ্যে 'এই সময়ে'র পন্ডিতমন্যরাও আমার বিরক্তি বাড়িয়েছেন বহু আগেই। সুতরাং সীকার করতে দ্বিধা নেই কফিহাউসের মাল্যবানদার কল্যাণেই লেখাটা পড়ে ফেলা 'দেশে'ই। ভালো লিখেছেন। আমার ভালো লেগেছে। গল্প বা কবিতা নিয়ে এর বেশি তাত্বিক আলোচনাতে আমি সাবলীল বোধ করিনা। তাতে ভালোলাগাটা মরে যায়। হ্যা, আমি দেখি সঙ্গতি। শেষটা আকষ্মিক আমারো মনে হয়েছে। যেমন কেউ কেউ বলেছেন অনেকটা আপনার চাপানো। তবে আমি ভাবলাম ছোটগল্পের আয়তনের কথাওতো নিশ্চয় আপনাকে মনে রাখতে হয়েছে। হ্যা, তবে ওই 'বাবা' ভদ্রলোকটিকে একটা ধাক্কা দিলে ভালো করতেন। পেরেন্টিঙের এই সমস্যা চিরদিনই ছিল, কম্পিউটার আসবার আগেও। ছেলে সত্যিইতো বলছিল ওর বাবাও বন্ধ ঘরে 'গেম' খেলে। কিছু বাবা মা কখনোই বড়ো হয় না, কোনো ডাক্তারের ঔষধ ছাড়াই এরা বয়সকে আটকে রাখে, তখন ছোটরাই চটজলদি ওদের সঙ্গ ধরে ফেলে! আপনার ব্লগটি চমৎকার, ভঞ্জ মষাইয়ের মতো, আমারও বক্তব্য "তোমার লেখার পাত্র-পাত্রিরা য়খন সবাই ভারতীয় (বাঙা্লি) সেখানে বিদেশী বাচ্চা বা নারির ছবি কেন ?" তাতে আপনার জবাবটি জুৎসই নয়, এই ছবিগুলোকেই স্কেচে পালটে বা অন্য কোনো উপায়ে আপনি ভারতীয় করে ফেলতে পারেন। অন্যথা লোকে ভাববে আপনিও সেই নেট আতঙ্কিত লোকেদের একজন যারা ভাবে নেটে শুধু 'দীপে'রাই বন্ধ ঘরে খেলা করে এবং ছেলেদের হাতে সেটি তুলে দিতেও ভয় পায়। এরাতো বয়সকে আরো আটকে রাখেন, বেঁধে রাখেন সময় কে। নেটকে রপ্ত করেননা তেমন!
শেশটা আকস্মিক লাগার কারণটা স্পষ্ট হলে আমার সুবিধে হত। না, ছোটগল্পের আয়তন ভেবে এভাবে শেষ করা... না, না ব্যাপারটা তা নয়। এই পত্রিকা তো তবু 4000/5000 শব্দ-সংখ্যার খোলা জায়গা দেয়, কিন্তু কেউ-কেউ 2000/2500 বা 1500.... এমন সংখ্যা-সীমার মধ্যেই শেষ করে দিতে বলে। সুতরাং এমন নয় যে চাপে ছিলাম। আপনার মন্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই জানাই, আমার কাছে এ গল্প আরো বড় হলে ড্র্যাগ করে যাবার সমস্যায় পড়তে হত হয়তো। বাকী আপনার অন্যান্য মতামত প্রণিধানযোগ্য।
শেষে জানাই, আপনার সুচিন্তিত বিশ্লেষণ অমূল্য হয়ে রইল। আশা করব আমার অন্যান্য লেখাপত্রও পড়বেন ও এমনি করেই সমালোচনা দিয়ে আমাকে সদা জাগ্রত রাখবেন।
পথ চলার নামই তো জীবন...তাই ওটা বাকি থাকা খুব জরুরী ....
তা না হলে জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়ে বা পড়বে.......
তুমিতো বহূমুখী প্রতিভার অধিকারিনী তাহলে প্রফাইল ফটোতে মাত্র দুটো মুখ কেনো...
আয়নার সামনে ফটো তুললে ফ্লাশ অফ রাখা দরকার...
অযথা জ্ঞান দিলাম বলে কিছু মনে কোরনা যেন...
দাদা, আপনি আমার ব্লগো আবার এসেছেন দেখে ভাল লাগল, এই মূল পাতাটি আমি মাঝেমাঝেই বদল করে থাকি। কিন্তু যে দু'জনের ছবি ছিল, তারা খুবই ভাল ডান্সার। আমি নিজেও কিছুটা মুগ্ধতা-বশে এখানে ক'দিন হাত ফেলিনি। আজই বদলে দিলাম... তবে নিজের ছবিও উপরমহলে জুডে।
আর ছবি তোলা সম্পর্কে আপনার সাজেশান মনে রাখব। ওটি আমার দশ বছরের ভাইপোর তোলা। ওকেও জানিয়ে দিলাম।
জ্ঞান কি বলছেন দাদা, আন্তরিক ভাবে আমার ভাল চান বলেই না সময় খরচ করে লিখলেন।
জেনে ভালো লাগলো....অযথা জ্ঞান দেওয়ার কিছু বিপরীত অভিজ্ঞতাও আমার আছে তাই ভয় হয় কে কেমন ভাবে নেবে বলা যায় না...
আসলে এখানকার দিনে টাকা-পয়সা নিয়ে জ্ঞান দিলে কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু বিনিপায়্সাতে জ্ঞান দিলেই নানান কথা শুনতে হতে পারে...
ওফ্, আপনার জ্ঞান সংক্রান্ত অভিজ্ঞতায় হেসে-হেসে ম'লাম।
Mam khub bhalo laglo pore. Apnar lekha ei prothom porlam. Chokher samne bastober ekta onabrito proticchobi fute uthlo. Khub chuye gelo je jinis ta seta holo duto bhinno projonmo, jader modhye amra tothakothito generation gap toiri korte byasto, tader ke apni eto kache niye eshechen. Tara eke oporer sudhu poripurok hoye otheni, bachar obolombon hoye utheche. R ekta dik jeti holo, sontan er bere othear pichone baba-maa r icchakrito oggota ba obohalar kufal. Jeta aajker somaj byabosthai bhison bhabe prasongik.
Apnar kach theke ro lekha paoar ashai roilam.
Sudipta.
সুদীপ্ত, আমি যারপরনাই আহ্লাদিত তোমার কমেন্ট পড়ে। প্রজন্মগত দিক নিয়ে যেটা তোমার নজরে পড়েছে, কেউ কিন্তু এ’দিকটায় দিয়ে দেখেননি। গল্পের মধ্যে অথচ চোরাস্রোতের মত ব্যাপারটা সারাক্ষণই রাখতে চেষ্টা করেছিলাম। আসলে ‘আলেখ্য’ বেচারীর কষ্টের কাছে বাকীগুলোতে নজর যায়নি…. কেননা আমি যেতে দিতে চাইনি। এখনকার প্রযুক্তি নির্ভর এই সময়ের শৈশবের প্রতি আমার বড্ড মায়া। সেই মায়াকে প্রজেক্ট করার চেষ্টা থেকেই এই ‘কষ্টছোঁযা স্বপ্নপথ বেয়ে’।
আর তুমি এ্যাননিমাস হয়ে এলে কেন? মনফসল-এর টীম মেম্বার হয়ে যাও সুদীপ্ত। আর লেখা তো আমি রাখবোই, কেননা সারাদিনে দু'কলমও না লিখে পারিনা। এই ব্লগে আমার অন্যত্র প্রকাশিত লেখাও রেখেছি.... পার তো পড়ো, কমেন্ট কোরো।
আবার বলছি তুমি আসায় খুব ভাল লাগল, মেম্বার হলে আরো ভাল লাগবে।
কি ভাবে লেখা বা ফটো রাখব একটু জানিয়ে্ দিও...ঠিক বুঝতে পারছি না...
manjudi, koekdin deri hoe gelo galpo ti porar por feedback dite. jai hok, ei galpoti sambondhe jeta bolar gadyer vashata arektu jhor
hore hole galpoti porte aaro valo lagto. koek ta jaigay vashata khanik khanik durbol legechhe. bishoy bastu nie kichhu bolar nei. alekhya jekhane bole se baro hote chay na sekhaner treatment asadharon. raj kapoor 'kabuliwala' cinema ti dekhe tapan sinha ke bolechhilen technically strong hole ei chhobi golden bear peto. ami apnake bolchhi
vasha ta jhor jhore hole ei galpo biswa sahityer sampod hoe thakar jogya.
prathome jeta bolar, amader sabar khetrei bodh hoy kombeshi ei asubidhe ta hoy je adhunik internet jogoter katha lekhay chole ele
vashagato samosyay porte hoy. internet-er sathe jorito je sab anusango mane hard drive, memory, e mail, folder, history eder kivabe likhbo ?
apnar galper vasha jehutu khanikta kabyik, tar sathe ei folder ba hard drive-er mato english sabdo manabe na. abar 'e mail' katha tar bangla
pratisabdo likhte gele kemon khelo hoe jabe byaparta. kingba emon ek kimvut kimakar byapar hobe ja bolar noy. apni likhchhen 'e mail ghar'
-- sabdo ta amar kemon jeno laglo. hoyto e amar byaktigato asubidhe.
ami nijeo jakhan likhi ei samosyay porte hoy. prochur samay nosto hoy hoyto 1 ta line likhte gie. paroborti puro galpo ta kalomer dogay
kintu oi bishesh jaiga ta jatokhan na thik mato cheharay namchhe amar egonor upay nei.
jai hok, vashar ei blending ta na hole kemon aswasti hoy amar.
তোমার কষ্ট করে পড়া ও এভাবে ধরে-ধরে বিশ্লেষণে আমি আপ্লুত আবেশ। তুমি এখানে তোমার লেখাপত্র রাখতে পারতো ভাই.... এত সুন্দর লেখো তুমি।
গল্পটা দেশে পড়েছি, এখানে আবার পড়লাম। প্রথম বারের চেয়ে দ্বিতীয়বারের পড়ায় বেশী এনজয় করলাম। শেষটা এক্সেলেন্ট।
আমার একটু দেরী হয়েছে পড়তে কিন্তু গল্পটা ধরার পর একটানে সাবড়ে দিলুম। তোমার বিষয়বস্তু লা জবাব!! শব্দচয়ন মারকাটারি! কি আর বলি ! অভিজ্ঞ লেখিকা তুমি! কাজেই লেখার ব্যাপারে আমার চেয়ে ভাল বুঝবে তুমি।
কি যে বল সুতপা, অভিজ্ঞ লেখিকা!!!!! আরে তাই হলে মনে কখনো জঙ্ পড়ে? দিন সাতেক চেষ্টা করেও কিছু লিখে উঠতে পারছি না... মনে কোনো কথাই তৈরী হচ্ছে না। অভিজ্ঞদের কি এসব হয়? তারা কম্প্যুর কী-তে চাপ দেয় আর হুড়বুড় করে নামতে থাকে কথারা। সুতরাং....
খুব মনোকষ্টে আছি।
Tomar lekhaye kibhabe motamot janabo,thik sahos pachchi na..ami jodio tothakothito kagoje kolome sahityer chatri noi tabe ami ei golpotite duto chobi peyechi..ekta local ar ekta global..mane ekta antorik ebong ekta antarjatik arti..games guli hoyto manusher sabhyatar churanto nidorshon kintu adopei seta poribortito hoy manusher sukumarbritti guli nyubjo kore dite..hoyto politically etar arekta byakha dewa jay ..samrajyobadee sakti bibhinno prolobhone manusher mon achchono rakhte chan nokol sonar moroke,kichu sosta prolobhon dekhiye..er modhdhye games to botei tar sathe adim ripur sursurio thake.naree sareer pradarshan sobcheye sahaj upay.net anek kaje lage..kintu jodi dekha jay pornographic ebong games sites er jonopriyota keu tekka dite parena..kichu asubha shakti ebhabei samasta kichu bhalo ke sariye bikritike panya kore jar jonye dhorshito hoy soisab ba ja kichu subho..er pratirodh amaderi tulte hobe...thik i bolecho,bhalo parenting ta khub i dorkor..amar oi bigyaner articletar madhyame amio sei tai bolte cheyechilam..lekhatar drishtivongee dujoner eki..amra katota nebo ar katota ferot debo seta kintu bortabe amader i upar...khub bhalo likhecho...pore bhison bhalo laglo..specially sesh ta ato sundor bhabe lipibodhdho korecho je bolar nei kichu..porte deri kore felechi,etai ekta akhkhep
তৃষিতার ওপরের কমেন্টকে বাংলা হরফে লিখে দিলাম... আমার উত্তর করার সুবিধার্থে।
*তৃষিটা বলেছে- তোমার লেখায় কিভাবে মতামত জানাবো ঠিক সাহস পাচ্ছিনা। আমি যদিও তথাকথিত কাগজে-কলমে সাহিত্যের ছাত্রী নই, তবে আমি এই গল্পটিতে দুটি ছবি পেয়েছি... একটা লোকাল আরেকটা গ্লোবাল। মানে একটা আন্তরিক আর আরেকটা আন্তর্জাতিক। গেমসগুলো হয়তো মানুষের সভ্যতার চূড়ান্ত নিদর্শন কিন্তু আদপেই সেটা পরিবর্তিত হয়ে মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলি নুব্জ করে দিতে... হয়তো পলিটিক্যালি এটার আরেকটা ব্যাখ্যা দেওয়া যায়... সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিভিন্ন প্রলোভনে মানুষের মন আচ্ছন্ন রাখতে চায় নকল সোনার মোড়কে... কিছু সস্তা প্রলোভন দিয়ে... এর মধ্যে গেমস তো বটেই তার সঙ্গে আদিম রিপুর সুড়সুড়িও থাকে। নারী শরীর সবচেয়ে সহজ উপায়। নেট অনেক কাজে লাগে... কিন্তু দেখা যায় পর্নোগ্রাফিক এবং গেমস সাইটসের জনপ্রিয়তা কেউ টেক্কা দিতে পারেনা।
কিছু অশুভ শক্তি এ’ভাবেই সমস্তকিছু ভালকে সরিয়ে বিকৃতিকে পণ্য করে, যার জন্য ধর্ষিত হয় শৈশব বা যা কিছু শুভ। এর প্রতিরোধ আমাদেরই তুলতে হবে। ঠিকই বলেছ, ভাল পেরেন্টিংটা খুবই দরকার। আমি ঐ বিজ্ঞাপনের আর্টিকলটার মাধ্যমে সেইটাই বলতে চেয়েছিলাম। লেখাটার দৃষ্টিভঙ্গী দু’জনের একই। আমরা কতটা নেব আর কতটা ফেরত্ দেব সেটা কিন্তু বর্তাবে আমাদেরই ওপর।
খুব ভাল লিখেছ, পড়ে ভীষণ ভাল লাগল। স্পেশালি শেষটা এত সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করেছ যে বলার নেই কিছু। পড়তে দেরী করে ফেলেছি, এটাই একটা আক্ষেপ।
*আমি বললাম- তৃষিতা, তোমার রোমান হরফে করা মন্তব্য আমি বাংলায় বদলে দিলাম। কেন বলতো? সাহিত্যের ছাত্রী না হয়েও এমন সুন্দর ব্যাখা দিয়েছ, তায় আবার মঞ্জুদির পিঠ থপথপানীটাও খোলতাই। দু’টোই দিব্য, অথচ রোমান হরফ দেখে না পড়ে পাছে মানুষ পালায়, তাই দায়টা নিজেই নিলাম কাঁধে... একটু সময় গেল এই যা।
তবে বলতেই হবে, তুমি সংবেদনশীল, অনুভবী ও সাহিত্য পথের পথিক। গণশক্তিতে প্রকাশিত তোমার লেখাটিও খুব প্রাসঙ্গিক।
Post a Comment