স্বপ্ন 5
মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী, 25.06.11, দুপুর 2.30
কি হয়েছে কি জানি ক’দিন কিচ্ছু লিখতে পারছি না। ভাগ্যিস স্বপ্নটা এলো, কিছু তো লেখার জন্য তবু পেলাম। অদ্ভুত।
আমি, আমার মা, নবু আর ভুচু বাড়ি যেতে চাই নদী পেরিয়ে অথচ হাঁটাপথে বাড়ি কাছেই। কি করব, ওটা স্বপ্নময় ইচ্ছে.... ওটা খেয়াল… দাম তো তার দিতেই হবে। তো যেখানে স্টিমার এসে ভেড়ে, সেই জেটিঘাট থেকে নদীর উত্তাল ঠেউএর সঙ্গে গা ভিজিয়ে মন ভিজিয়ে চারজনেই জলে ঝুপ্পুস। পাশ দিয়ে স্টিমার যাচ্ছে ঘুচঘুচ শব্দে দিব্যি ধোঁয়া উড়িয়ে.... কিন্তু কিজানি কেন আমরা যাচ্ছিনা, আমরা যাচ্ছি সাঁতরে। বাস্তবে অথচ আমি ছাড়া বাকীরা সাঁতার জানেনা। কিন্তু স্বপ্ন বোধহয় এ’জন্যই মধুর... যা নয়, যা নই তার সঙ্গে মুলাকাত্ ঘটায় মনে রোদ্দুর জ্বেলে!!!!! তা যা হোক্, এবার তো সাঁতারাচ্ছি। আমার মা, আর ভুচুর মা মানে নবু দেখি ফ্রিস্টাইল স্ট্রোকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক পথে আর ভুচুবুড়ো নদীর লম্বাই ধরে কেজানে কোন পথে চলল। আমি একদম শেষে সাঁতারাচ্ছি, তাই সবটা দেখে ভুচুকে ডাকতে-ডাকতে ওরই দিকে চললাম। কিন্তু সে ছেলে শুনতেই পায়না, বরং স্পীড বাড়িয়ে জোরসে চলেছে। একটু এগিয়েই দেখি বালিয়ারী... ডাঙা। বাধ্য হয়ে দু’জনকেই উঠতে হল। কাছে গিয়ে দেখি ওমা, ভুচু কই! এতো অন্য কাদের মেয়ে.... হলুদ ছিটের ফ্রক পড়া। এ’বার শুরু হল আমার দৌড়। দৌড়চ্ছি, দৌড়চ্ছি.... আমাকে জেটিঘাটে পৌঁছতেই হবে। আমি ডাঙায় উঠেই যেন বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলাম, তবু মনের মধ্যে চলছে আমি ভুল করেছি, ভুল করেছি। ভুচু নিশ্চই মা-দের সঙ্গেই.... আমি ভুল করেছি।
দৌড়চ্ছি, দৌড়চ্ছি.... দৌড়তে-দৌড়তে যে ঘাটে এসে পৌঁছলাম, সেটা একদম অপরিচিত, আগে দেখিনি। পাড় থেকে অনেক নীচে জলের সীমানা। দেখি ওপর থেকে সেখান অবধি দড়ির সিঁড়ি নেমে গেছে। আমি এরপর সিঁড়িকে পাকড়ে ধরে ল্যাগব্যাগ করে ঝুলতে-ঝুলতে ঠিক মাঝ বরাবর এসে যেই ডাইভ দেব ভাবছি, তাকিয়ে দেখি জলের মধ্যে এলোমেলো নুড়ি-পাথরের মিশেলে জেগে আছে ছোট-বড় পাহাড়-পাহাড় এলাকা। আমি তবু নীচে নামতে চাইলাম। ভাবলাম ডাইভ না দিয়ে নাহয় সাঁতরে... পাশ কাটিয়ে.... এবার দেখি ঐ সিঁড়ি বেয়েই আরেকটি মেয়ে নেমে আসছে.... সে চেঁচিয়ে-মেচিয়ে বলল
‘যেও না যেও না... এই ঘাটটা পরিত্যক্ত‘
‘তা তুমি আসছ যে...’
‘আমার অন্য কাজ‘
‘এখন কি করি?‘
‘যেমন এসেছ, তেমন ফেরত্ যাও।‘
‘কেন গো? আমি কি পাশ কাটিয়ে, সাবধানে.... পারিনা? সাঁতরে....‘
‘পাগল? দেখতে পাচ্ছ না পাশের ঘাটটা? ওখানে যাও।‘
তাকিয়ে দেখি পাশের জেটিটাই সেই আগের জায়গা। এবার ফের হাঁচড়-পাঁচড করে দুলতে থাকা দড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ওপরে প্রায় মুখ অবধি পৌঁছে গেলাম। কিন্তু কি যে হল, শেষের দু’টো সিঁড়ি পেরনো গেল না। মন খারাপ, শরীরও খারাপ, ওপরে উঠতে পারছি না... কিছুতেই। এইসময় কিন্তু মনে মা-নবু-ভুচু আর কেউই নেই। সারাটা মন এখন একাগ্র সিঁড়ির শেষধাপে শরীরকে টেনে ওঠানোর নেশায়। চেষ্টা এবং চেষ্টা এবং তারপরেও না পেরে জুলজুল করে নীচে বয়ে চলা জল আর কুলকুল স্রোতের দিকে চেয়েচেয়েই হাল্কা হয়ে গেল ঘুম।
তখনো ভোরের আলো ফোটেনি, সকাল নয়। তাই ঘুম ভাঙতেই স্বপ্নকে জোড়া লাগাবার ইচ্ছে মনে নিয়ে ফের ঘুমোলাম ও স্বপ্নবেটা কিচ্ছু না দেখিয়ে ঘুম ভাঙাল যথা সময়েই।
6 comments:
ইনসেপশন সিনেমাটা দেখো মঞ্জুদি। স্বপ্নের ভেতর স্বপ্নের ভেতর স্বপ্ন।
অ্যাঃ,হোম পেজের ছবিটা দয়া করে পাল্টাও। একদম মানাচ্ছে না।
কি জ্বালা, এটা ঠাকুর-দেবতা না ভেবে খুব সুন্দর একটা আর্টওয়ার্ক ভাবা যায় না বুঝি? ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম- যে ধর্ম ভিত্তিক দিক থেকে কেউ দেখবে না তো? প্রধানতঃ ওপার বাংলার কথাই মাথায় ছিল। ওমা, তা দেখি....
যাক্ গে বাবা, এক্সপেরিমেন্টের দরকার নেই, তোমার কথা মতই নাহয় ....
আর ইনসেপশন সিনেমাটার ডিভিডি নিশ্চই পাব বল?
বর্ষার কথা ভেবে যেটা দিলাম তা কি যায়, না এটাও 'অ্যাঃ'!!!! বল তিতাস।
বেশ লিখছ, আমি তো মনেই রাখতে পারিনা। কতটা জল মেশাচ্ছ বল তো?
ঠাকুর দেবতার ছবি টবি বলে নয়। মানাচ্ছিল না,তাই বলেছিলাম।
Post a Comment