ঠিক সন্ধ্যার মুখে ঝড় এল। জানালা দরোজা সব আছাড়ি বিছাড়ি। শোঁ শোঁ শব্দ আর সে কী তর্জন গর্জন। এমনকি কড়িবরগা গুলোতেও শব্দ উঠতে লাগল। খাট পালং, ঝাড়লন্ঠন, টুপি, দেশলাই যেখানে যা কিছু আছে সব প্রায় উড়ে যাওয়ার দশা। চাকরবাকরেরা সেসব সামলাতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে নাজেহাল। চোখের সামনে দেখলুম বৈঠকখানায় বাবার দরকারী কাগজপত্র সব ঘরের মধ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে। ফুলদানী উলটে বিশ্রী পচা জল ছড়িয়েছে সারা মেঝেতে। দেখার কেউ নেই। শোবার ঘরের বিছানায় গোছা করা কাপড়জামা রাখা ছিল। সেসব ছত্রখান অবস্থা। এদিকে একতলার দালানেও লন্ডভন্ড কান্ড। হুঁকোর টিকে কলকে সব ওলটপালট হয়ে ফরাশে পড়ল। পুরুতঠাকুর গম্ভীর মুখে সেজকর্তার সাথে পরামর্শ করছিলেন। ঝড়ের দাপটে সব ফেলে কাছারিঘরের দিকে দিলেন এক ছুট। হুলুস্থুলুস কান্ড। বড়রা সব বারান্দায় বেরিয়ে এসে চীৎকার আর হম্বিতম্বি শুরু করেছে। এতক্ষণ কিচ্ছুটি কেউ টের পায় নি। সব্বাই পান চিবোনো, কাপড়ে নকশা তোলা, নভেল পড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিল। টনক নড়তেই সব্বাই মিলে ঠাকুরঝি ঠাকুরঝি বলে হাঁকডাক। তবে তাকে পাবে কোথায়? ইতুপিসী তো দৌড়েছে ছাদের দিকে। পেছন পেছন শান্তাম্মা। ছাদে কাপড়চোপড় সব কেচে শুকুতে দেওয়া ছিল। সেসব তুলতে গিয়ে ঝড়ের চোটে সকলের এলোমেলো অবস্থা। হাতফসকে শৈলদিদির সাধের স্কার্ফ উড়ে গিয়ে পড়ল পাশের বাগানে। বেশ হয়েছে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে মজা দেখতে লাগলুম। কিন্তু ম্যাও ম্যাও গেল কোথা?
ঝড় হলেই আমি চুপ করে বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকি। ম্যালা গোলমাল আর ক্যাঁওম্যাঁওএর মাঝে কাঠের রেলিং কেমন ক্যাঁচকোঁচ করে গান ধরে। ওপাশ থেকে পুঁটেদের রেলিং সঙ্গত দেয়। চোখ বুজে কাঠের রেলিঙ্গের তরজা আলাপ শুনি। বাতাসের তেজ বুঝি। জলের ঢেউ এর মোচড় খুঁজি। মাঝি মাল্লাদের নির্দেশ দিই। পাল গুটোও। নোঙর তোল। হাল শক্ত করে ধর। পষ্ট টের পাই ফতুয়ায় কেমন পতপত বোল ওঠে। আচ্ছা, মাঝদরিয়ায় তুফানের সময় সিন্দবাদ কি করত?
আমাদের ঘরের ঘুলঘুলিতে দুটো পায়রা এসময় চুপ করে রোঁয়া ফুলিয়ে বসে থাকে। চিলেকোঠার ঘরের পাশে যদিও ওদের খাঁচা রয়েছে। তবে ওরা ওখানে থাকতে একটুও পছন্দ করে না। হাঁ করে মুখ ঘুরিয়ে ওদেরকে দেখছি এমন সময় পুঁটে এসে পাশে দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল।
—‘দেখেছিস?’
—‘কী?’
—‘ওই দ্যাখ, ছোটোমামার ঘরের দরজা খোলা।’
আরে তাই তো। কালেজ থেকে এত তাড়াতাড়ি তো ফেরেনা। আজ বুঝি ইয়ারদোস্তরা সবাই পালিয়েছে। ও কি জানে খুড়োমশাইএর আসার কথা?
পুঁটে ফতুয়ায় হ্যাঁচকা টান দিল। আর বলতে হল না। সটান দালান পেরিয়ে, ঠাকুমার ঘর এড়িয়ে দুজনে মিলে সিঁড়িঘরের দিকে ছুট দিলাম।
এখন ছুট দিলাম তো বলাই যায়, ছোটোমামার কাছে পৌঁছতে পারলাম কি? সিঁড়িঘরের মুখে পৌঁছেই তো টের পেলাম কাঠের সিঁড়িতে কচরমচর শব্দ করে বড়মা উঠে আসছেন। আর যায় কোথা? চটজলদি পুঁটেকে নিয়ে পড়ার ঘরের টেবিলের পেছনে লুকিয়ে তবে শান্তি। ওঁর যা সন্দেহবাতিক, ধরে ফেল্লেই একরাশ খবরদারি শুরু হত। শৈলদিদিও মওকা বুঝে চোখ পাকাত কিনা কে জানে? আপাতত নিশ্চিন্তি, কেননা পড়ার ঘরে কেউ মোটেও খুঁজতে আসবে না।
এ ঘরের জানালা কপাট বন্ধ। গুমোট হয়ে রয়েছে। বসেবসেই শুনতে পেলুম বাইরে গুড়গুড় করে মেঘ ডাকছে। চড়বড়াত করে কোথাও বাজ পড়ল বা। দুজনেই চমকে উঠলুম। পুঁটে ঘাবড়ে গিয়ে একটা দেশলাই জ্বালল। অল্প আলোয় দেখলুম টেবিলের পায়ার কাছে সাদা সাদা আরশোলা চরে বেড়াচ্ছে। গা টা শিরশির করে উঠল। আরশোলাকে ভীষণ ভয় পাই। শৈলদিদি, বকুল, বাবার খাস বেয়ারা রতনদা এরাও ভয় পায়, তবে আমার মতো অতটা নয়। ম্যাও ম্যাও অবশ্য ভয় পায় না, মাঝে মাঝে ধরে খায়ও বোধহয়। কি জানি?
বেড়ালের কথা ভাবতে গিয়ে খেয়াল করলুম ছাতের উপর চড়বড় চড়বড় করে আওয়াজ শুরু হয়েছে। টেবিলের পাশের জানালাতেও ঐ একই আওয়াজ। জানালার ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে মিষ্টি সোঁদা গন্ধ নাকে এল। বৃষ্টি এল বুঝি। পুঁটে জানালার কপাট খুলতেই দমকা পলকা হাওয়া এসে ধাক্কা মারল মুখে। দেখি রাস্তা দিয়ে লোকলশকর সব মাথা গুঁজতে যে যেখানে পারে ঠাঁই নিচ্ছে। এই বড়বড় বৃষ্টির ফোঁটা। থেকে থেকে আকাশ যেন ঝলসে উঠছে। তারসাথে কানফাটানো আওয়াজ। বাজ পড়ার সময় নাকি লোহা ছুঁতে নেই। ওতে নাকি পাপ হয়।
ঝড়বৃষ্টির চোটে আজ আগেই সাঁঝ নেমেছে। মাঝে মাঝে আকাশী আলোয় দেখলুম জানালার পাশের জামগাছের ডাল ঝড়বৃষ্টির তোড়ে নুয়ে পড়ছে। কতগুলো বড়বড় জুড়িগাড়ী রাস্তার একপাশে পরপর দাঁড়িয়ে গেল। গাড়োয়ানরা সব একদৌড়ে আমাদের সদর দেউড়ির দিকে ছুট লাগিয়েছে। ঘোড়াগুলো বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে চুব্বুড়। অঙ্ক স্যার কি আজকে আর আসবেন?
—‘এই দ্যাখো। খোকাবাবুরা সব এইখেনে। এদিকে সারা বাড়ী গরুখোঁজা চলচে।’
রতনদা! বাতি নিয়ে ঘরের ভিতর আলো দিতে ঢুকেছে।
—‘কেন গো রতনদা?’
—‘বাঃ তা আর জানোনি বুঝি? শোনোনি কিছু। ছোটোবাবু তো মাথা ফাটিয়ে ঘরে ঢুকেছেন। ডাক্তারবাবু এউএচেন। সক্কলে তোমাদেরই খোঁজ করছিল কিনা?’
ছোটোবাবু মানে ছোটোমামা! মাথা ফাটিয়েছে! কী সব্বনেশে কথা। তা এই দূর্যোগের মধ্যে ডাক্তারই বা এল কোত্থেকে। নাহ্, এক্ষুনি সরেজমিনে গিয়ে দেখতে হয়।
—‘আহা যাও কোথা। মাষ্টারবাবু এউএছেন। বড়বাবু বললেন জলখাবার দিতে। তা উনি দেখলাম কাছারিঘরে বসে শরবত খাচ্চেন। এই এলেন বলে। আঃ জানালাটা বন্ধ করে দাও গো। তোমাদের কি আক্কেল, দেকচ জল আসছে—’
অঙ্ক স্যার! এই ঝড়জলের মধ্যেও। কি মুশকিল। কেরোসিন ল্যাম্পের আলোয় দেখলাম পুঁটে করুণ নয়নে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে। ওর হোমটাস্ক করে দিতে ভুলে গেছি। সর্বনাশ!
দুজনে মিলে জবুথবু হয়ে খানিক বসে রইলাম। মেঝেতে ছাদ চুঁইয়ে টুপটাপ করে জল পড়ছিল। তা দেখে রতনদা একটা ছোট টিনের বালতি বসিয়ে দিয়ে গেল। হতাশ হয়ে সেদিকপানে চেয়ে ভাবতে লাগলাম অঙ্ক স্যার এই ঝড়জলের মধ্যেও এলেন কিভাবে? ওঁর কি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে। নাকি রোজ আমাদের কান মুলতেই ওঁর আনন্দ।
রতনদা জানালাটা বন্ধ করে দিয়েছে। নিঝুম ঘরে শুধু বালতিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার টরেটক্কা আওয়াজ। ছাদের ওপর কারিগরদের হাতুড়ি পেটাও চলছে। আমার আবার এমন দিনে ভীষণ ভয় পেতে ইচ্ছে করে।
তা ভয়ের উপাদান কি এবাড়িতে কম। অন্ধকার ঘরে কেরোসিন ল্যাম্পের আলোয় কতরকমের ভূত দেখা যায় তা তো জানোই। বইয়ের আলমারির মধ্যে বইভূত। আবছা আলোয় নীচের তাকের ভূত উপরের তাকের দত্যির সাথে ঝগড়া করে। কাঁচের ভেতর দিয়ে পষ্ট দেখি নামধাম সব পালটে নিয়ে বই গুলো সব নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। তারপর ধরো আয়নাভূত। খাটের তলায় সেঁধোভূত। গ্রামোফোনের চোঙের ভেতর গাইয়ে ভূত, বাজিয়ে ভূত। এছাড়াও পড়ার টেবিলে মনিব ভূত, চাকর ভূত। মেঝের চারচৌকো নকশার মাঝে বোড়ে ভূত। আলমারির ভেতর চুপটি ভূত। কুলুঙ্গির ভেতর ঘাপটি ভূত। ছায়ার ভেতর নাচিয়ে ভূত। ঘড়ির ভেতর দুলুনি ভূত। কত আর বলব? এত সব গা ছমছমে ঘর বারান্দায় আমি পারতপক্ষে একা কক্ষনো থাকি না। ভাগ্যিস পুঁটে আছে। তাই বাঁচোয়া। নইলে ওদের তাথৈ নৃত্যের মাঝে আমি পড়ি আর কি?
পুঁটে হাঁটু মুড়ে ঘাড় গুঁজে বসে আছে। কেমন যেন আসোয়াস্তি হল। ওকে একটা ঠেলা দিলুম। পুঁটে বলল, ‘উঁ’। আমি আর থাকতে না পেরে একছুটে সব জানালা হাট করে খুলে দিলুম। সঙ্গে সঙ্গে ঝড়, বৃষ্টি, শোঁ শোঁ শব্দ, গাছের ডালপালা মটকানোর আওয়াজ, নীচে হইহট্টগোলের খবর সব দুম করে একসাথে ঘরে ঢুকে এল। সাথে সাথে টের পেলুম কানের উপর কার যেন কড়া আঙুলের মোচড় পড়ছে।
অঙ্ক স্যার। চলে এসেছেন। ঝোলা ঝোলা গোঁফের নীচে হাসি সমেত।
6 comments:
বাব্বা, বলে-বলে গোল দিচ্ছ তিতাস। কি করে নিজেকে সরিয়ে রেখে এতখানি লীলায়িত হচ্ছো কেজানে। এবার নিজেকেই যাচাতে নাহয় একপীস বঙ্কিম আরেকপীস্ শরতবাবু নামাও। তবে সব ধরতে পারলেও রবিবুড়োকে কখনই হয়ে উঠবে না তিতাস। তিনি সর্ব চিদাকাশের অধরা রবি, সত্য ইন্দ্র, শাশ্বত নাথ, পূজ্য ঠাকুর। ধরা-ছোঁয়া-চেষ্টা ও কল্পলোকের বাইরের বিশ্ব।
ওই তো,গল্প ভালো লাগল কি না লাগল আগে স্টাইল খুঁজছ। কী মুশকিল। কার মতো করে লিখছি সেসব বাদ দাও। লেখা পড়তে ভালো লাগলেই তো হল, না কী? আমি একটা সুন্দরপানা গল্প বলতে চাইছি, দেশে হইচই ফেলে দেওয়া অসামান্য ইউনিক কিছু সৃষ্টি করতে চাইছি না। আর এখন তো সবে আমার শিক্ষানবিশি করার পালা। ধীরে ধীরে অনেক দেখে শুনে মাপজোক করে তবেই না নিজের স্বকীয়তা তৈরী হবে!এই অবসরে একটু হাত মকশো করতে ক্ষতি কী?
কাউকে নকল করে লিখলেই বা ক্ষতি কী? আমার তো মনে হয় এতে নিজেকে অনেক বেশী করে চেনা যায়। তফাত বোঝা যায়। নিজেকে সরিয়ে রেখে নিজেকে দেখা রীতিমতো রোমাঞ্চকর খেল।
ছবি আঁকার সময় যেমন লোকে মাধ্যম বেছে নেয়, আমিও তেমনি গল্প লেখার সময় ভাব প্রকাশের একটা রীতি আঁকড়ে ধরেছি। 'লীলায়িত' হওয়ার কারণ, আমি লীলা মজুমদারের লেখার রীতির বিশেষ ভক্ত, একেবারে নিবেদিতপ্রানও বলতে পারো। ছোটদের জন্য অমন করে কেউ আর ভেবেছে কিনা দেখিনি। ওঁর লেখার তীক্ষ্ণতা বেশী বলে সটান বাধাবিপত্তি এড়িয়ে মনকে কব্জা করে ফেলে।
'একপীস বঙ্কিম আরেকপীস্ শরতবাবু' এই ক্যাটেগোরিক্যাল বিভেদ সরিয়ে রেখে কেন যে আমরা শৈলরীতি বা শৈল্পিক কাঠামোর দিকে চোখ রাখিনা কেন কে জানে? ওঁরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব রীতির প্রবর্তন করে গেছেন। কাউকে চোখ পাকিয়ে বলে যাননি যে 'এই ভবিষ্যতে কেউ আমার মতো করে আর লিখবে না কিন্তু।'
ইউরোপে ছবি আঁকার তাবৎ পর্যায়ে যে যে চিত্রশৈলীর জন্ম হয়েছে সেই সেই ঘরানায় বহু বিখ্যাত শিল্পী ছবি এঁকেছেন। কই সেবেলায় তো কোন দোষ নেই? ক্যামিলে পিজারোকে তো কেউ বলেনি ওহে তুমি তো ক্লউদ মনের মতো করে ছবি আঁক। নতুন ধারণা বা রীতির যেই জন্ম হয়েছে অমনি তাঁরা নিজেরা সে রীতি পাকড়ে ধরেছেন। পিকাসো যেমন কিউবিস্ট ঘরানার ছবি এঁকেছেন তেমনি রেমব্রান্টের মতো করেও ছবি এঁকেছেন। ভাগ্যিস কেউ বলেনি 'ওহে তুমি তো দেখছি একপীস্ রেমব্রান্ট নামালে।'
গল্পটা লক্ষ্য করলে দেখবে ওটা পুরোনো কলকাতার পটভুমিকায় লেখা। ওই রোমান্টিসিজম ধরে রেখে ছোটদের মতো করে লিখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে এর জন্য একেবারে উপযুক্ত রীতি হল 'লীলায়িত' পন্থা।
যাকগে,ভবিষ্যতে একপীস্ শরত বা একপীস্ বঙ্কিম লিখতে পারলে না হয় তোমায় জানাব। যদি তা মনফসলের উপযুক্ত হয় তখন না হয় তা ব্লগে দিও। ...তিতাস
সতর্কতা ও অপেক্ষা।
সাংঘাতিক, সাংঘাতিক। এইজন্যই তো তোমায় রাগাতে চাই। এই চেনা, তার্কিক, রেগে গেলে যুক্তি-ঝুলি উপুড় দেওয়া তিতাসকে অনেকদিন মিস করছিলাম। তবে মঞ্জুদিও কম যায় না বাছা...বলার আছে আমারও।
তোমার গল্পের কৈশোর-লীন রোমান্টিসিজম নজরে দিব্যি পড়েছে। তবে কিনা কার হাত ধরে আসছে, তা এড়াতে চাওনি বলেই তিনি পুরোভাগে, পুরোমাত্রায়, প্রথমেই মন কাড়ছেন। হতে পারে এটা বুঝতে পারা ও বুঝিয়ে দেওয়া আমার অক্ষমতা (কিংবা ক্ষমতা)। তুমি যা পারছ তা সত্যি কঠিন। কারুকে কপি করে গান গাওয়া যায়, আঁকা যায়, সাজাও যায়, তা'বলে স্টাইল? শক্ত, শক্ত.... ভীষণ শক্ত। কোন্ পদ্ধতিতে নিজের স্বত্বাকে বন্দী রেখে গল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছ তা আমার কাছে বিস্ময়। ভিতরে-ভিতরে তখনই চালু হয়ে গেছে একটা অনিরাপদ বোধ। কারুর নিজস্বতাকে কেউ চাইলেই কি তবে এভাবে চ্যালেঞ্জে নিতে পারে? আমি কিন্তু শ্লেষের স্বরে বঙ্কিম-শরত্ বলিনি তিতাস, চ্যালেঞ্জের সুরেও নয়। আমি জানি, এ'গুলোও তুমি কব্জা করতে হয়তো পারবে। তাই যা পারবে না বলে 100 শতাংশ বিশ্বাস, সেই রবীন্দ্রনাথের কথা বলতে গিয়ে খানিকটা আপ্তবাক্যের মত তাই লিখেছিলাম- তিনি সর্ব চিদাকাশের অধরা রবি, সত্য ইন্দ্র, শাশ্বত নাথ, পূজ্য ঠাকুর। ধরা-ছোঁয়া-চেষ্টা ও কল্পলোকের বাইরের বিশ্ব।
প্র্যাকটিক্যালি নিজেকে এটা বোঝাতে যে তোমরা অনেকে অনেকদূর যেতে পারলেও সূর্য্য হওয়া যাবে না। এটা আমার একধরণের আনন্দদায়ক বিশ্বাস, অপরিমেয় তৃপ্তি....
তারমানে কি হল? মানে এই হল যে মনের কাছে তিতাসের গুণবত্তাকে স্বীকৃতি দিয়েও যুক্তিক্ষেত্রে তোমাকে চেনানো যে চাইলেই সব পারো না। পারো সেটাই যেখানে তোমার নাগাল যায়।
এ'ভাবে লেখ, লেখ, আপত্তি কিসের? খালি দেখো মুখের ওপর মুখোস চাপিয়ে রাখতে-রাখতে কখনো যেন ওটাই না মুখ হয়ে যায়।
তবে তোমার নিজস্বতার আন্দাজ আমার পাওয়া আছে। তাই জানি, সবরকমের মধ্যে দিয়ে যেতে-যেতে হয়তো কখনো অন্য কোন রাস্তার সন্ধান তুমি পাবে, লেখায় ভিন্নধরণের কোন গান তৈরী হবে। অপেক্ষা সেই দিনটার।
আমার ভাল লেগেছে। লীলা মজুমদার আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন অন্যতম প্রিয় লেখক।
ওহ! মঞ্জু-তিতাস এখানেও চলছে! আমি আবার তর্ক দেখলেই ভয় পাই। বাঙালী থেকে নাম কাটা যাবে আমার। :)
মেঘ- এখনও যায়নি কেন সেটাই ভাবছি। তোমার আশপাশের মানুষজন তো তোমায় নিয়ে দারুণ প্যাপি।
Post a Comment