অদ্ভুত একটা জায়গায় বাড়িটা । রাস্তা থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে প্রবেশমুখ অবধি ।হ্যাঁ প্রবেশমুখই বলব কারণ ওটাকে দরজা বলা যায় না ।হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয় ওখানে । জয়িতা প্রতিবারই চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা ।ফোকর গলে তার দৃষ্টি চলে যায় ভেতর অবধি ।ঘরের মধ্যে অনেক পরিচিত লোকজন ।মা , বাবা, ভাই,বোন আরো অনেকে ।সবাই ভীষণ গল্পে মত্ত ।কেউই জয়িতাকে দেখতে পাচ্ছে না এখন ।অসহায়ের মত সরীসৃপ হয়ে কাঁদতে থাকে জয়িতা ।
এই কি হল?কি হয়েছে ‘জয়ি’ তোমার? কাঁদছ কেন?
ধড়মড় করে উঠে বসে জয়িতা ।ঘেমে নেয়ে একসা ।উফ! কি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন! আমি আমাদের বাড়ীতে ঢুকতে পারছিনা!
ধুর্ ও তো স্বপ্ন!কালই নিয়ে যাব তোমাকে বাড়ী ।দেখা যাক্ কেমন ঢুকতে পারছ না । আর্যের সান্ত্বনায় জয়িতা আশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করে।
আর্য আর বিহু মুচকি হাসে ।আজকাল তাদের দৈনন্দিন জীবনে এ ঘটনা উপরি পাওনা ।একেক দিন যে কি লজ্জায় পড়তে হয় জয়িতা কে, সে আর বলার কথা নয় ।
এই তো গত রবিবার ।চায়ের টেবিলে হেসে গড়িয়ে পড়ছিল ওরা দুজন……সাথে কাজের মেয়েটাও ।স্বপ্নেরও বলিহারি! আগের দিন জয়িতা গিয়েছিল রথবাড়ী বাজারে ।পুজোর ফলটা ওখান থেকেই কেনে সে। হঠৎ পেছন থেকে, ‘দিদি সামলে সামলে!’ ঘাড় ঘোরাতেই বিশালাকৃতি এক ষাঁড়……গম্ভীরভাবে আওয়াজ ছাড়ল ‘হুমম্’। আর যায় কোথায়! ‘মাগো!’ বলে জয়িতা ফল ফেলে কুঁচি তুলে দৌড়। দোকানী হাঁক পাড়ে, ‘ও দিদি ও কিছু করে না’…কিন্তু কে শোনে কার কথা । একেবারে বাড়ী এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।ঐ একটা প্রাণীকে সে দুচোখে দেখতে পারে না ।ভুলেই গিয়েছিল সকালের ঘটনাটা … দুপুরে একটু নিশ্চিন্তে ঘুম দিচ্ছিল । পাশের বাড়ীর মেয়েটার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।‘আর্য্’র সাধের ‘বামচাম্’টা উড়ে গিয়ে পাশের বাড়ীর ছাদে ।উফ্ এই মণিটাকে কতবার বলেছি কাপড়ে ক্লিপ লাগাতে!দুদ্দাড় করে দৌড় লাগায় জয়িতা। ঐ ‘বামচাম্’ই হল কাল। শনিবার সারারাত ধরে একটা ষাঁড় ‘বামচাম্’ পড়ে গোটা বাজার ধাওয়া করে গেছে তাকে।
আর সে নির্বাক চলচ্চিত্র নয় একেবারে ‘রানিং কমেন্টারি’ সমেত!
কাজেই রবিবারের চায়ের আসর থেকে নিস্তার পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার!
ছোটোবেলায় নাকি ঘুমের ঘোরে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে চলে যেত সে!বিয়ের আগে এরকম বাড়াবাড়ি হত! আজকাল জয়িতা বেশ ভয়ে ভয়ে থাকে ।স্বপ্নের কথা সব ফাঁস হয়ে পড়ে রোজ আর এ নিয়ে হাসাহাসি কাঁহাতক ভালো লাগে!তাই গরমের ছুতোয় পাশের ঘরে শোয় । আর্যের মুখ তাই হাঁড়ি,বিহুর চোখেও অভিমান । মায়ের পাশে শোওয়া দশ বছরের অভ্যাস তার।কদিন সহ্য করার পর আজ সে জেদ ধরে মায়ের কাছে শোবে । অগত্যা মেনে নিতেই হয়।
সারাটা দিন নির্বিঘ্নে কেটে যায় ।জয়িতা মনে মনে আশ্বস্ত হয়!যাক্ গতরাতে তাহলে সে ভুলভাল বকেনি । বিহু স্কুল থেকে ফিরে আসে । আর্য অফিস থেকে ।বিহু আজ খুব লক্ষী মেয়ে হোম টাস্ক করে নেয় নিজে নিজে। খাওয়া নিয়েও মোটে ঝামেলা করেনা । মেয়ের আচরণে জয়িতা একটু অবাকই হয় । ‘হ্যাঁরে বিহু আজ তোর কি ব্যাপার বলত? স্কুলে বকুনি জুটেছে মনে হচ্ছে’ ।‘কই নাতো!!’বিহু স্পষ্ট চোখে মায়ের দিকে তাকায় ।
আর্য রোজকার মত খাওয়ার টেবিলে বিহুর সাথে খুনসুটি করে......বিহু অন্যদিনের মত রেগেও যায়না । জয়িতার কাছে ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতই ঠেকে......হল কি মেয়েটার!!
রাতে আজও বিহু মায়ের কাছে শোবে ।জয়িতার খাবার দাবার গুছিয়ে আস্তে একটু রাত্রিই হয়ে যায়।বিছানায় চোখ পড়তেই দেখে বিহু ‘ ফেয়ারী টেল’ এ মুখ গুঁজে । কি রে ঘুমোস নি এখনো? ‘না তুমি এলে তারপর ঘুমোবো’...... ‘উফ্ বিহু যত বড় হচ্ছ তত ন্যাকা হচ্ছ!’ জয়িতা মেয়ের পরদিন ভোরে ওঠা নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত তাই আলো নিভিয়ে চটপট বিছানায় আসে। রাতে মায়ের কোল ঘেঁষে শোওয়া বিহুর বহুদিনের অভ্যাস । মাকে জড়িয়ে ধরে বলে ‘মা তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো? জয়িতা এ ধরনের প্রশ্নে হোঁচট খায় ... এ আবার কি কথা বিহু!! তোর কি হয়েছে বলত?
বিহু প্রশ্ন করে, ‘মা তূণীর কে’?
চমকে ওঠে জয়িতা, ‘এ নাম তুই কোথায় শুনলি!’
‘কাল রাতে তুমিই তো ঘুমের মধ্যে তূণীর তূণীর করে ডাকছিলে’।
‘আর কি বলেছি আমি!!’ জয়িতা ফ্যাসফ্যাসে গলায় প্রশ্ন করে ।
‘ওই জড়ানো গলায় কি যেন বলছিলে ......তূণীর চল ...আমাকে নিয়ে চল...এরকমই কি যেন...’
জয়িতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ‘বিহু’র দিকে ।
6 comments:
পড়ে আসতে আসতে বুঝতে পারছিলাম না গল্পের শেষ এভাবে আসছে। বাহ্, ভাল লাগল।
@ নীলাকাশ,কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নিলাম ।
ঝগড়া করতে গিয়ে পড়তে দেরী হয়ে গেল সুতপা। সারাদিন বাদে এই এতক্ষণে...
কি বলব, আমি খোঁজার চেষ্টা করছিলাম তুমি কিভাবে গল্পটা লেখ। শেষ চমকটা মাথায় রেখে তারপর কি জাল বিছাও? আসলে এত ছোটর ওপর লেখা ও তাকে গ্রহণযোগ্য ভাবে উপ্পস্থাপনা করা বেশ কঠিন আমার কাছে। তাই এমন যারা পারে, তাদের প্রতি মন আমার বড্ড পড়ে। আর তুমি তো তুখোড়... দেখছি বলে বলে গোল দিচ্ছ। এই মন্তব্যের অন্ততঃ উত্তর দিও, জানিও।
মঞ্জুশ্রী গল্পটার শেষটা মাথায় রেখে এগোই নি। আজ অবধি কোন গল্পই শেষ মাথায় রেখে আমি এগোতে পারিনি । একবার শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কে জিজ্ঞেস করেছিলাম 'আপনার গল্প শেষ হওয়ার পর আপনার কি মনে হয়? তা ওনাকে তো চেনোই...... বললেন ,' কোনটাই পছন্দ হয় না :D ......আমার নিজের গল্পের শেষ নিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে থাকি। এই গল্পটি অলরেডি প্রকাশিত। পাঠকরা পড়ে শেষটা নিয়ে ভাল বলায় আমি দূর্ভাবনা মুক্ত। আর তুমি তো প্রশংসা করতে সিদ্ধহস্ত সেকথা আগেও বলেছি।
সময় না পেলে দু একটা প্রকাশিত লেখাই দিন। অপুক্ষেয় আছি।
এককথায়- বাঃ।
Post a Comment