দুদিন ধরে এমন নাকি কান্না কাঁদছে আকাশ! ওমা কাঁদবো না? এতো আমার কান্নারই দিন, শ্রাবণ মাস! তাতে কি এমন প্যান প্যানে কান্না আমার একেবারেই না পছন্দ, পথ ঘাট তোমার এমন সিকনী কান্নায় ঘিনঘিনে হয়ে উঠে! চলাফেরা দায়, কাঁদবেই যদি বুক ভাসিয়ে কাঁদ না কেন? তোমার বুকের গুমোটও কেটে যাবে সমাজ সেবাও হবে মানে এই নগরের মানুষ কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাজপথেই নৌকা ভ্রমনের সুযোগ পাবে। শুনে ওর সেই যে হেঁচকি উঠলো থামার নামটি নেই। ত্যাক্ত হয়ে বেরিয়ে এলাম রাস্তায় কাহাতক আর ঘরে বসে থাকা যায়!
জরুরি কেনাকাটা বাকী, নাটক সরণীতে যেই পৌঁছলাম ওমা ওর যেন রোখ চাপলো, দীর্ঘদিনের জমানো শোক বুঝি আমার অপেক্ষাতেই ছিলো, বাগে পেয়ে ঝাপিয়ে পড়লো মাথার উপর, কিছু বুঝে উঠবার আগেই আমাকে ভিজিয়ে দিলো, আমি কোনো দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নেবার জন্য ইতি উতি তাকালাম উহু কোথাও দাড়াবার জায়গা নেই, আর ভিজেইতো গেছি কি হবে আর বারান্দায় উঠে, অনেকদিন মানে অনেক বছর তাও না কয়েক যুগই হবে এমন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজি না আমি, একেবারে গহীনের, যাকে তুমি বলতে ছেলেমানুষ জেগে উঠলো ছলবল করে, বারান্দায় দাঁড়ানোদের তাকানো দেখে মনে হচ্ছে তারা যেন বাংলা সিনেমার শুটিং দেখছে, কি করবো ভিজে ভিজেই এগুতে লাগলাম, আগে ভিজতাম তোমার সাথে লুকিয়ে বাড়ীর ছাদে, বাগানে, মাঠে এখন একা, রাজপথে অবশ্য এটাকে এখন পথ না বলে আমাদের ছোট নদী বলাই যায়, হাটু পানি ভেঙে ভেঙে এগুচ্ছি হঠাৎ দেখি লোডশেডিঙের মধ্যে ফুলের দোকান আলো করে বসে আছে দোলন! আহা কতদিন দেখিনি তাকে দোলন আমার প্রিয় দোলন, জীবনের প্রথম লেখা গল্পের প্রথম লাইনটি লিখেছিলাম ওকে নিয়ে তুমিও ছিলে সেই গল্পে, দৈনিক পুর্বকোনে ছাপা হয়েছিলো সেটি, বৃষ্টিতে ভিজে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল সে। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজছি আর আমার এতো কাছে দোলন, আমার আর তর সইলো না জলকন্যার মতো ভেজা শরীরেই ছুটে গেলাম দোকানের ভিতর, দোকানীর হাতে টাকা গুজে দিয়েই সবগুলো দোলনকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আবার নেমে গেলাম ছোট নদীতে, হাটু জল ভেঙ্গে ভেঙ্গে বুকের মধ্যে অনেক স্মৃতির বুদবুদ নিয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ভাসিয়ে ঘরে ফিরলাম, কেউ টের পেলো না, এই দোলনচাঁপার ভেজা পাপিড়তেই আচড় কেটে তুমি জল রঙে লিখেছিলে 'ভালোবাসি'
কতদিন পর আমি মনের সুখে কাঁদলাম, শ্রাবণের বৃষ্টি, তুমুল বৃষ্টি দিব্যি গিলে ফেললো আমার চোখের নোনা পানি, কেউ কিচ্ছুটি টের পেলো না, শ্রাবণের বৃষ্টি কেবল জেনে গেল আমারও গহীনে তার মতো এমন কান্না থাকতে পারে, অন্যরা দেখে ভাবলো আমি বুঝি এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়েছিলাম সাদা ধবধবে নেতানো ফুলগুলো কিনতে।' ওরা কি আমায় পাগল ভাবলো! ভাবুক যা খুশি, তুমিতো জান দোলনচাঁপা আমাদের প্রিয় প্রিয়তম স্মৃতিময় ফুল! বর্ষা আমাদের বুকের ভেতর প্রিয় প্রিয়তম ঋতু। বর্ষণ! প্রিয় ফুল- ঋতু ফেলে রেখে কেন চলে গেলে! মৃত্যু মায়াপুরিতে আছে কি বর্ষা, সেই বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতে দোলনচাঁপা কি মেলে রাখে তার প্রেমময় শুভ্র হৃদয়ের আঁচল কারো অনন্ত অপেক্ষায়! আমার মতো কেউ কি ওখানে বৃষ্টির আঁচলে কান্না লুকায়!
4 comments:
কেমন আছো চৈতিদি? ভালই তো লিখেছো।
তা বৃষ্টি বর্ষাকে তো চমৎকার একটা চরিত্র বানিয়ে দিলে, কালিদাস তো মেঘকে বানিয়েছিল।
পুরো লেখাটায় সুন্দর সুন্দর কিছু বাক্য আছে। তার মধ্যে বেশি ভাল লাগা হলো:
"..... জলকন্যার মতো ভেজা শরীরেই ছুটে গেলাম দোকানের ভিতর, দোকানীর হাতে টাকা গুজে দিয়েই সবগুলো দোলনকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আবার নেমে গেলাম ছোট নদীতে,...." এবং শেষ লাইনটা: "আমার মতো কেউ কি ওখানে বৃষ্টির আঁচলে কান্না লুকায়!"
- দারুণ। নিয়মিত লেখা চলুক। শুভেচ্ছা।
শামান সাত্ত্বিক
আমি আলাদা করতে পারলাম না চৈতী... এই বৃষ্টির জলে ভেজা লেখালিখির সবটা অনন্য।
আমি দেখতে পেয়েছি, তোমার উচ্ছ্বসিত, উড়তি মনের ছায়া দুলছে টুলটুল... ঐ দোলনচাঁপায়, পথের জমা জলে, গদ্যে লেখা 'ভালবাসি'-র কথায়।
আমি ভালো আছি শামান, নিজের লেখায় এতো সুন্দর মন্তব্য পেয়ে খারাপ থাকা যায় না,তুমি ভালো আছ?
তোমার ভালোবাসা, অভিমান, প্রশংসার ভাষা সবই শ্রাবণের বৃষ্টির মত অবারিত, অকৃপণ। এই জন্যই তোমার জন্য আমারও দ্বিধাহীন ভালোবাসা!
Post a Comment