মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী
সকাল
ছ’টা, ঘুম ভেঙে গেল। আজ ক্লাশ নেই, তাই
সোফায় গিয়ে ফের ঢুপ্পুস। কি্ন্তু এমনই এক স্বপ্ন এলো, জেগে উঠে তারপর বসেই রইলাম-
কতক্ষণ।
একটা
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ নিয়ে যাবার দরকার পড়েছিল... কোথায় জানিনা... কেন
জানিনা... যাচ্ছিলাম। মনে-মনে জানি ওটা হার্ডডিস্ক, অথচ দুধের ক্যান যেমন আংটা ধরে
নেয়, তেমনই আংটাটা আঙুলে গলিয়ে হাঁটছিলাম। আমি বুলবুল, বোন টুলটুল (মাসতুতো) আসছিল
গাড়ি চালিয়ে পিছনে। কি আশ্চর্য্য, আমি হেঁটে যাচ্ছি, অথচ যচ্ছি ওর আগে। হঠাত্ই
মনে হল- আরে হাতের জিনিসটা বড্ড ভারী, খামোকা আমি হাঁটছি কেন? পিছু ফিরে ডাকলাম- ‘টুলটুল, টুলটুল, থাম আমি যাব্।’ আজব ব্যাপার, আমি পিছু ফিরে ওর দিকে যাচ্ছি, ও আসছে আমার দিকে অথচ দূরত্ব
বাড়ছে... বাড়ছেই। আমার রাগ হচ্ছে... ছুটছি... পৌঁচচ্ছি না। বুঝতে পারছি ও-ও
চেষ্টা করছে... আপ্রাণ। এমন সময় এগোতে-এগোতে ডানে একটা লেন পেয়ে ওর গাড়ি সোজা
ওদিকে ঢুকে গেল। মূহুর্তের মধ্যে আমিও। গলিতে পুরনো দিনের লালচে আলোর মরা-মরা
ছায়া- কেমন যেন চেনা। সোজা রাস্তায় বেশ রোদেলা সকাল ছিল, কিন্তু এখানে... তা যাই
হোক্, টুলটুল গাড়ি ডানদিক চেপে পার্ক করতে গেল আর বেশী চেপে গিয়ে গাড়ি নর্দমার
জলে ফোয়ারা তুলে একটু এগিয়েই দাঁড়িয়ে গেল ভোঁস্ করে। এবার এগোন-পিছনোর কথা বলতে যাব,
দেখি ও নিজেই এ্যাকসিলেটর রেজ্ করে গাড়ি পিছিয়ে নিচ্ছে। যে জল ছলকাচ্ছে, তা
পুতিগন্ধময়, বিষকালো নোংরা। হঠাত্ই দেখি কোথা থেকে সেই জল ঊচ্ছ্ল-উচ্ছৃত হযে পুরো
গাড়িটাকে ঢেকে দিল। গাড়ির অস্তিত্ত্বহীন ও জায়গাটা এখন শুধুই আস্ফালন, জলের,
কালচে স্রোতের, গন্ধের। বুঝতে পারছি, ক্রমাগত গাড়িকে আগে-পিছে নেবার চেষ্টা করে
চলেছে ও। কারণ জলের স্রোত ও ঠেউ-এর লাফালাফি ক্রম-বর্ধমান। কিন্তু কিছুতেই কিছু
হচ্ছে না। খেয়াল করেছিলাম জানলার কাচ নামানো ছিল্। গাড়ির মধ্যে এখন জল ঢুকে
নিশ্চই... ওফ্, ভাবতে পারছি না। কি হল টুলটুলের? কি করব আমি? লোক কোথায়? গাড়ি
ঠেলতে গেলেও তো আরেকজন চাই। দমবন্ধ করে ভিতরে কি করছে টুলটুল? পাগলের মত ছুটছি।
এসে পৌঁছলাম এক ডাক্তারখানায়। ভিড় করে ডঃ-কে ঘিরে বসে আছে কয়েকজন (যা মোটেই কখনো
দেখিনি, দেখিনা)। আমি প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে প্রায় টানতে-টানতে একজনকে ধরে
আনলাম সেই লেনে। কিন্তু কোথায় গাড়ি, কোথায় জল? আমি থম ধরা বুকে বাঁদিকে তাকিয়ে
দেখি টুলটুল একটা বড় হাতা দিয়ে জিভ ছুলতে-ছুলতে আসছে আর গাড়িটা খেলনা গাড়ির মত
রং চটে, পচে প্রায় গলে গিয়ে, দ হযে দাঁড়িয়ে আছে দূরে।
কত
কথা জানা হল না, একবুক প্রশ্ন নিয়ে ঘুম ভেঙে গেল আমার। ইচ্ছে হল ফের স্বপ্নে ফিরে
ওর উদ্ধার পাওয়া গল্পটা শুনে আসি, ওর অস্থিরতার পাশে বসে আসি দু’দন্ড।
3 comments:
স্বপ্ন ভালো লাগলো।
স্বপ্নসিরিজ লিখে যান মঞ্জুদি। শেষে একটা বই বার করবেন আর আমি তার সমালোচনা করব।
আহা ! এমন স্বপ্ন যদি আমি দেখতাম ! পুরো স্বপ্নতা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলাম।
মৃণাল।
Post a Comment