আজ তিন দিন পরে একটু রোদের দেখা পাওয়া গেলো। এ কদিন কেবল ঘ্যানঘ্যানে একটানা বৃষ্টি ছাড়া আর কিছু ছিলো না। কখনও ইলশেগুড়ি, আবার কখনও বেশ ঝমঝমিয়ে। পাহাড়ি জায়গায় এমন হয় মাঝে মাঝে। তবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এমনটা হবে ভাবা যায় নি সত্যিই। নইলে কি আর হোটেলে জিনিস বাড়ন্ত হতে দিতো জনক? এটা ঠিক, ওর হোটেলটা ঠিক অন্য হোটেলের মতো না হলেও, এই এলাকায় থাকার জায়গা হিসেবে নাম ডাক আছে। গভীর রাতে বিছানায় শুয়ে একপশলা বৃষ্টির পর পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জলের শব্দ পরিষ্কার শোনা যায়। শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরেই, তবুও কিছু বাঁধা খদ্দের আছেন, যারা বছরের এই সময়টায় জনকের রেস্ট হাউসে থাকতে আসেন। এখানকার রান্না ভালো, ঘর গুলোও বেশ ছিম ছাম। চাকর বাকরের বেশী হোই হল্লা নেই। অনেক সময় দরকারে জনক নিজেও বোর্ডারের ঘরে চা/ জল নিয়ে গেছে।
জনক চেঁচিয়ে সীতাকে চায়ের জল বসাতে বলে। পরশুরাম এখনও ওঠেনি। ওকেও জাগাতে হবে। লোকটার এই এক দোষ, কিছুতেই সকালে উঠবে না, রাতে তুমি যতক্ষণ খুশী জাগিয়ে রেখে কাজ করাও না কেন, হাসি মুখে করে যাবে। কেবল সকালে উঠতে বললে ওর ভারী কষ্ট হয়। জনক বেশী কিছু বলেনা। এক তো, অনেক দিনের লোক, আর এই বাজারে ছেড়ে চলে গেলে আরেকজন লোক পাওয়া মুস্কিল। আর পেলেও পরশুর মতো কি হবে। পরশুরামকে জনক আর সীতা পরশু বলেই ডাকে। আজ মনে হয় খবরের কাগজ দেবে। দুনিয়ার সাথে মোটামুটি এই তিন দিন কোন যোগই নেই প্রায়। ভাগ্যিস এই সময় কোন বোর্ডার নেই। ওরা তিনজনে এই তিন দিন স্রেফ খিচুড়ি আর আলু ভাজা খেয়ে কাটিয়েছে। ডিম ছিলো দুটো, ভাগা ভাগি করে অমলেট হয়েছিলো। আজ একটু মাছ যোগাড় করতেই হবে। তা ছাড়া হোটেলের বাজারও করে রাখতে হবে, কে বলতে পারে কখন কোলকাতা থেকে বোর্ডাররা ফোন করে। বাজারে বেরোনোর আগে একবার কিচেনে ঢুঁ মারতে হবে, জিনিসের একটা লিস্ট করতে হবে। এমন ম্যাড়ম্যাড়ে ওয়েদারে গাড়িটা স্টার্ট নিলে হয়।
সিফনের লম্বা কালো স্লিপিং কোটের ওপরে একটা শাল জড়িয়ে সীতা এসে বসে। সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে, গালের ওপর থেকে কপালের এক পাশ অবদি চাদরের ভাঁজের দাগটুকু এখনও মুছে যায় নি। গায়ের রং ফর্সা, একটু ঠান্ডা লেগেছে বলে নাকের ডগাটা লাল হয়ে আছে। সোফায় বসে খানিক আলস্য ভরা নজরে সীতা জনকের দিকে তাকায়। জনক ওর দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে দেখে একটু অস্বস্তি লাগে। কিন্তু চোখ পাকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘কি দেখছো অমন হাঁ করে বলতো ? নতুন লাগছে নাকি আমাকে’? জনক সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে ‘না ও কিছু না, আচ্ছা গত বছরে এই সময় কোলকাতা থেকে কারা এসেছিলো তোমার মনে আছে? এই সময়টা তো আমাদের খালি যায় না, তো এবারে কি হলো বলতো’? ‘না, তেমন করে মনে নেই, আজ একথা কেন হঠাৎ? এবারেও কেউ না কেউ আসবে ঠিক। যারা আসবে তারাও তো খবর রাখছে যে এখানকার অবস্থা কেমন, তাই না’? ‘মনে তো হয়। যাক, দেখ প্লিজ, চা-টা, আর একটু কাগজ আর একটা পেন নিয়ে এসো আসার সময়, বাজারের লিস্টটা চা খেতে খেতে বানিয়ে নেবো। পরশুকে একটা আওয়াজ দিয়েও এসো। আমি গাড়িটা একবার দেখি গিয়ে। স্টার্ট দিতে পারি নাকি!বেরোতে হবে তো। জনক গ্যারেজের দিকে বেরিয়ে যায়।
ঝন ঝন করে টেলিফোনটা বেজে ওঠে। জনক বেরিয়ে গেছে ততক্ষণে, সীতা
সীতা দরজার কাছ থেকে ফিরে আসে। ‘হ্যালো..’
‘পার্থ রিসোর্ট, মাথেরান’?
‘হ্যা,বলুন’
‘আমি কোলকাতা থেকে মিঃ বোস, রজত বোস বলছি। দেখুন আমি গত বছরেও এসেছিলাম আপনাদের ওখানে, সামনের সপ্তাহে আবার আসার প্ল্যান করেছি। জায়গা আছে কি’?
‘ও-হ আচ্ছা, হ্যা, বলুন। হ্যা, ঘর অবশ্যই পাওয়া যাবে। কদিনের জন্যে বুক করতে চান’?
‘আমি সামনের সপ্তাহে বুধবার দুপুরের পরে পৌঁছাবো, বুধবার থেকে পরের মঙ্গলবার, এক সপ্তাহের জন্যে।কনফারমেশান দিতে পারবেন কি এখনই’?
হ্যা, ঘর আপনার কনফার্মড বুক থাকছে। এদিকে একটু বৃষ্টি শুরু হয়েছে, সেই মতো তৈরী হয়ে আসবেন’। সীতার উত্তর।
‘অ্যাডভান্সটা আমি পৌঁছেই দিয়ে দেবো। আমার সিংগল স্যুট চাই। আমি জানি ওদিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, আমি বৃষ্টিতেই আসতে চাইছিলাম। আমার কাজের জন্যে আবার বৃষ্টিটা খুব জরুরী’।
‘ঠিক আছে, আমরা ঘর আপনার নামে আগামী বুধবার থেকে বুক দেখাচ্ছি’।সীতার জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো যে আপনার কাজটা কি। কিন্তু একটু অহেতুক কৌতুহল দেখানো হয়ে যাবে বলে চুপ করে যায়।
‘ও কে’ ওদিকের লাইনটা খুট করে কেটে যায়।
কিচেনে এসে চা বানিয়ে নিয়ে জনককে হাঁক পাড়ে। জনক বেজার মুখে ঘরে ঢোকে। গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। পরশুকে দিয়ে ধাক্কা লাগাতে হবে। মেজাজটা সকাল সকাল বিগড়ে গেলো।
‘পরশুকে ডেকেছো কি সীতা? ওকে নিয়ে বাজারে যাবো ভাবছি’।
‘আরে শোন, তোমার এই সিজনের প্রথম বোর্ডারের ফোন এসেছিলো এক্ষুণি। মিঃ রজত বোস। আগামী বুধবার আসছেন। বললেন, গত বছরও এই সময় এসেছিলেন। তোমার মনে আছে ওনাকে’ ?
‘না ঠিক মনে পড়ছে না। একবার রেজিস্টারে চোখ বুলোলে হয়তো মনে পড়বে। দেখতে হবে। দাঁড়াও তার আগে বাজারটা ঘুরে আসি। মনে হচ্ছে এবার আরোও কটা ফোন আসবে । আমি সেই হিসেবে বাজার করে আনছি। তুমি ডিপ রেফ্রিজেটার আর ওভেন গুলো সব সাফাই এর ব্যাবস্থা কর। শহরে যাচ্ছি, আমি ওদের খবর দিয়ে যাব। কি নাম বললে, রজত বোস?! নামটা শোনা শোনা মনে হচ্ছে’।
এমন সময় পরশু এসে বলে, একটা টেলিগ্রাম এসছে বড়দা, আপনার নামে, সই করতে হবে।
এতো সকালে টেলিগ্রাম ? চল তো দেখি। সই করে, টেলিগ্রাম খানা খুলে জনক অবাক হলেও খুশী হলো বোর্ডার আসা শুরু হয়ে গেলো তা হলে।
“রিচিং অন ওয়েডনেসডে এ্যালং উইথ মাই ওয়াইফ। প্লিজ বুক এ ডাবল রুম ফর আ উইক”মিঃ নীহার চৌধুরী, কোলকাতা। দু জন বোর্ডারই বুধবার আসছেন । এটা কি নেহাত কাকতালীয় ব্যাপার ? কে এই নীহার চৌধুরী ? এখানকার ঠিকানা পেলো কি করে? বাজার যাওয়াটা সাময়িক বন্ধ রেখে জনক আর সীতা চা-এর কাপ হাতে অফিস ঘরের দিকে পা বাড়ায়। গত বছরের রেজিস্টারে একবার চোখ রাখতেই হচ্ছে। লাল রং এর জাবদা রেজিস্টারটা যখন হাতে এলো, তখন চা শেষ। পরশু শোবার ঘর থেকে চশমাটা এনে দিয়েছে। জুন মাসের শুরু থেকেই দেখা শুরু করে জনক। ১৫-ই জুনে এসে চোখ আটকে যায়। বুধবার, বেলা দেড়টায় এক নম্বর সিংগল রুমে আসেন মিঃ রজত বোস। সেদিনই, বিকেলে সস্ত্রীক আসেন নীহার বাবু। দুজনেই এক সপ্তাহ করে ছিলেন। আর কোন রিমার্কস নেই ওদের নামের পাশে। দুজনেই এখান থেকে বোম্বে মেল ধরে একই দিনে কোলকাতা ফিরে যান। শুনছো এবারেও ওনারা ১৫-ই জুনেই আসছেন। দুজনে একই দিনে। কাকতালীয় ঘটনা? নাকি পার্থ রিসর্ট হাউসে কোন অজানা নাটকের যবনিকা উঠতে চলেছে। জনক আর সীতা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। জানালা দিয়ে আসা হালকা হাওয়া রেজিষ্ট্রারের পাতাগুলো আপনা থেকেই উল্টোতে থাকে।
‘আরে শোন, তোমার এই সিজনের প্রথম বোর্ডারের ফোন এসেছিলো এক্ষুণি। মিঃ রজত বোস। আগামী বুধবার আসছেন। বললেন, গত বছরও এই সময় এসেছিলেন। তোমার মনে আছে ওনাকে’ ?
‘না ঠিক মনে পড়ছে না। একবার রেজিস্টারে চোখ বুলোলে হয়তো মনে পড়বে। দেখতে হবে। দাঁড়াও তার আগে বাজারটা ঘুরে আসি। মনে হচ্ছে এবার আরোও কটা ফোন আসবে । আমি সেই হিসেবে বাজার করে আনছি। তুমি ডিপ রেফ্রিজেটার আর ওভেন গুলো সব সাফাই এর ব্যাবস্থা কর। শহরে যাচ্ছি, আমি ওদের খবর দিয়ে যাব। কি নাম বললে, রজত বোস?! নামটা শোনা শোনা মনে হচ্ছে’।
এমন সময় পরশু এসে বলে, একটা টেলিগ্রাম এসছে বড়দা, আপনার নামে, সই করতে হবে।
এতো সকালে টেলিগ্রাম ? চল তো দেখি। সই করে, টেলিগ্রাম খানা খুলে জনক অবাক হলেও খুশী হলো বোর্ডার আসা শুরু হয়ে গেলো তা হলে।
“রিচিং অন ওয়েডনেসডে এ্যালং উইথ মাই ওয়াইফ। প্লিজ বুক এ ডাবল রুম ফর আ উইক”মিঃ নীহার চৌধুরী, কোলকাতা। দু জন বোর্ডারই বুধবার আসছেন । এটা কি নেহাত কাকতালীয় ব্যাপার ? কে এই নীহার চৌধুরী ? এখানকার ঠিকানা পেলো কি করে? বাজার যাওয়াটা সাময়িক বন্ধ রেখে জনক আর সীতা চা-এর কাপ হাতে অফিস ঘরের দিকে পা বাড়ায়। গত বছরের রেজিস্টারে একবার চোখ রাখতেই হচ্ছে। লাল রং এর জাবদা রেজিস্টারটা যখন হাতে এলো, তখন চা শেষ। পরশু শোবার ঘর থেকে চশমাটা এনে দিয়েছে। জুন মাসের শুরু থেকেই দেখা শুরু করে জনক। ১৫-ই জুনে এসে চোখ আটকে যায়। বুধবার, বেলা দেড়টায় এক নম্বর সিংগল রুমে আসেন মিঃ রজত বোস। সেদিনই, বিকেলে সস্ত্রীক আসেন নীহার বাবু। দুজনেই এক সপ্তাহ করে ছিলেন। আর কোন রিমার্কস নেই ওদের নামের পাশে। দুজনেই এখান থেকে বোম্বে মেল ধরে একই দিনে কোলকাতা ফিরে যান। শুনছো এবারেও ওনারা ১৫-ই জুনেই আসছেন। দুজনে একই দিনে। কাকতালীয় ঘটনা? নাকি পার্থ রিসর্ট হাউসে কোন অজানা নাটকের যবনিকা উঠতে চলেছে। জনক আর সীতা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। জানালা দিয়ে আসা হালকা হাওয়া রেজিষ্ট্রারের পাতাগুলো আপনা থেকেই উল্টোতে থাকে।
5 comments:
রহস্য গল্প আমার বরাবরই ভালো লাগে। শেষ পর্যন্ত পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। চলুক...............
ইমিডিয়েটলি নেক্সট লট লিখে ফেল ও এককপি প্রাতিষ্ঠানিক কোন পত্রিকার দপ্তরে পাঠিয়ে দাও- সঙ্গে অবশ্যই টোটাল গল্পের জিস্ট।
দুর্দান্ত শুরুয়াত্... আমি মুগ্ধ।
আল ইমরান ও মঞ্জুদিকে অনেক ধন্যবাদ উৎসাহ দেবার জন্যে। কোথায় পাঠাতে বলছো যদি বল।
বলব, বলব। তবে কিনা একটু রয়ে। আসছ-যাচ্ছ-পড়ছ(হয়তো) কিন্তু বাপু বলছ কম। কেন? ব্যস্ত? আজ অবধি 'দেশ'-এর গল্পটা তোমার পড়া হলনা বুঝি? নাকি পড়েও বললে না...আমি একটু লেনাদেনায় বিশ্বাসী ভাই... মহত্ নই। তাই আর কি...
যাক্ গে আমার যাই হোক্, তোমায় আর উত্কন্ঠায় রাখি কেন। আরে কত পত্রিকা বাজারে, যেখানে হোক্ একটা পাঠাও তো।
তথ্যকেন্দ্র, সাপ্তাহিক বর্তমান, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, একদিন, সকালবেলা, সুখী গৃহকোণ, দেশ, আনন্দবাজার, সানন্দা, নিউজবাংলা, সারি দিয়ে কত...
হ্যাঁ, মাঝখানের কদিন খুব ব্যাস্ত ছিলাম, ইন ফ্যাক্ট মুম্বাই এ ছিলাম না । যেখানে গেছিলাম সেখানে অনিল আম্বানি কাজ করলো না। তাই একটু গ্যাপ হয়ে গেছে। আজ একটু আগেই ফিরেছি। আর ফিরেই মঞ্জুদির জন্যে জবাব লিখতে বসে গেছি। দেশের লেখা আমার সত্যিই পড়া হয় নি। পড়েই জানাবো। লেনা দেনার জন্যে নয়, পড়লে তো জানাবোই। দেখা যাক, কি হয়। কালকে সেকেন্ড পার্ট-টা দিতে পারবো।
Post a Comment