“বর্ষণ মুখর সন্ধ্যা” কথাটি শুনলেই মনের ভেতর কেমন একটা ভেজা ভেজা অনুভূতি হয়। স্কুল কলেজে প্রায়ই দেখতাম বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা মুখস্থ করতে বলা হয়। আচ্ছা, আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, বর্ষণ মুখর সন্ধ্যা কি মুখস্ত করে লেখার মত কোন বিষয়?
সাধারনত বৈশাখের শুরুতে এবং আষাঢ়, শ্রাবন দুই মাসে প্রায়শই বর্ষণমুখর সন্ধ্যার দেখা মিলে। অন্যান্য সময় যে বর্ষণ মুখর সন্ধ্যা পাওয়া যায় না, তা নয়। তবে একটু কম পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে বৃষ্টি খুব ভালো লাগে। কবি হয়ে যেতে চায় মন। আর মাঝে মাঝে বর্ষণমুখর সন্ধ্যা সামনে পড়লে মনে হয়, “যা শালা!! বৃষ্টিটা এসেই গেল...........!!!”
এক গ্রীষ্মের ছুটিতে কাউকে না জানিয়ে তল্পিতল্পা গুঁটিয়ে দুপুরের একটু পরে রওয়ানা দিলাম বাড়ির দিকে। আমার বাড়িটা কোন শহুরে এলাকায় নয়। একেবারেই অজ পাড়া গাঁ। এই আধুনিক ডিজিটাল যুগেও আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। বাসস্টপে নেমে রিক্সা নিয়ে গ্রামের সীমানায় যখন পৌছুলাম তখন সবে সন্ধ্যা নেমেছে। প্রচণ্ড ভ্যাঁপসা গরম চারপাশে। গ্রীষ্মে যা হয়, ঐ যে, কাল বৈশাখীর কথা বলছি!! সেটা শুরু হবে হবে করে। আকাশ থমথমে, কোথা থেকে যেন এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগল। বুঝে উঠার আগেই প্রচণ্ড বেগে বাতাস ছেড়ে দিল। ধূলায় চোখে কিছু দেখছি না। সিদ্ধান্ত নিলাম রাস্তা ছেড়ে জমির আইল ধরে যাব। যেই ভাবা, সেই কাজ, জুতো প্যান্ট সহই নেমে পড়লাম জমির আইলে। আস্তে আস্তে খুব সাবধানে হেঁটে যাচ্ছি যেন পিছলে না পড়ি। আর মনে মনে ভাবছি, এবার বৃষ্টি না এলেই হয়। বলা নেই কওয়া নেই। ঝুপ করেই বৃষ্টি নামল। অজান্তেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো, যা শালা, বৃষ্টিটা এসেই গেল।
শত সাবধানতা সত্ত্বেও বৃষ্টি শুরু হওয়ার প্রথম মিনিটেই প্রথম আছাড় খেলাম, উঠতে গিয়ে আবার। এর পর আবার। প্রথম ধাক্কা কাঁটিয়ে ১০ কদম সামনে যাওয়ার পর পা হড়কে একেবারে কর্দমাক্ত জমিতে। সারা শরীরের কোথাও কাঁদা লাগা বাকি রইল না। ঝড়ে, জলে, কাঁদায় মাখামাখি হয়ে যখন বাড়ি পৌঁছুলাম, দরজা খুলে মা তখন প্রথমে আমাকে চিনতে পারেননি। ১০ সেকেন্ড পর যখন চিনলেন, তখন উনার চিৎকার দেখে কে। গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে মাথায় ভালো করে খাঁটি সরিষার তেল মেখে, এক কাপ চা নিয়ে যখন আমার রুমের জানালার পাশে বসলাম.... একটু দৃশ্যটি কল্পনা করুন, টিনের চালে কখনও ঝমঝম কখনও টাপুর টাপুর করে বৃষ্টির ঝরে পড়া। আপনি জানালার পাশে গরম চা এর কাপ হাতে এক নিবিষ্ট মনে দেখছেন রাতের ভিজে যাওয়া। সামনে কেরোসিন বাতির টিমটিমে আলো হালকা শীত শীত আমেজ। একটা পাতলা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে আয়েশ করে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছেন, আর সামনে কাগজ কলম। বলুন, এমন পরিবেশে কি দু’লাইন কবিতা বের হয়ে আসে না.........
আমি জানি, আসে.........
আমার এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা এসেছিল। সবাই দেখি মুখস্ত লেখে। আমি ঠিক এমন কিছুই লিখেছিলাম। একটু পরিমার্জন হয়েছে। তবে “যা শালা! বৃষ্টিটা এসেই গেল” এই লাইনটা লিখেছিলাম........


3 comments:
প্রথম পড়তে শুরু করেই আমার মনে হচ্ছিল মন্তব্যে লিখব- তুমি কি রচনা লিখেছ? ওমা, শেষে এসে দেখি তুমি নিজেই তা জানিয়েছ। তবে পড়তে ভারী লেগেছে যতই তা পরীক্ষার খাতায় রচনার স্টাইলে লেখ। আমিও যেন তোমার সঙ্গেই আলপথ ধরে হাঁটছিলাম, এক কাপ কফি, মায়ের উষ্ণ অভ্যর্থনার প্রত্যাশাতেই ছিলাম। বেশ ভাল আল-ইমরান। তবে অন্য লেখাপত্র না পড়া বা পড়লেও না বলা একদম ভাল না।
আমার ইন্টারনেট লাইনটা খুব সমস্যা করছে গত ১ মাস ধরে। এজন্য নিয়মিত ব্লগে বসতে পারছি না।
অন্য লেখাপত্র পড়া হয় কিন্তু লাইন সমস্যার কারনে কিছু বলা হয় না। বলব ইনশাল্লাহ।
উফ বোলোনা, এই নেট নিয়ে পাগল আমিও। কি যে এক সমস্যা এই কখনো থাকা অধাকাংশই না থাকা...
Post a Comment