ওলিম্পিক
ও আমরা… অলোক ভঞ্জ
আমাদের অর্থাৎ ভারতীয়দের ওলিম্পিক রেকর্ড যে খুবই খারাপ সেতো দুধের বাচ্চাও জানে। ক্লাসের
সব চেয়ে খারাপ ছেলেটির রিপোর্ট কার্ড যেমন তার মা-বাবা অন্যদেরকে দেখাতে চায় না বা লুকিয়ে
রাখত চায়, আমাদের
সরকারেরও সেই অবস্থা। এমনিতে মানুষ ওলিম্পিক নিয়ে
বড় একটা মাথা ঘামায় না, কিন্তু
৪ বছর পর পর ওলিম্পিকের আসর চলাকালীন
টিভির লাইভ কমেন্ট্রি আর পত্র পত্রিকায় লেখা-লেখি, তর্ক-বিতর্ক
সেই পুরনো ঘাকে খুঁচিয়ে আবার রক্ত বার করে দেয়। আর যতদিন ওলিম্পিকের এই প্রথা চালু থাকবে ততদিন
ভারতীয়দেরকে এই অসস্থিকর অবস্থার
সম্মুখীন হতেই হবে - কিছু করার নেই।
তবে এটা নিয়ে এতো চিন্তিত হওয়ার কোন মানে হয়
না, কারণ
আমাদেরকে ছোট থেকই শেখানো হয় - খেলাতে
হার-জিৎ বড় কথা নয় অংশ-গ্রহন করাটাই বড় কথা। তাহলে হারলে ক্ষতি কি, জিতলেই
বা কি এমন লাভ - দুটোইতো সমান, আমাদের না হয় পদক গ্রহনের
সুযোগ আসে না, কিন্তু অংশ-গ্রহনতো আমরা করি, সেটাইতো বড় কথা - তাহলে এ নিয়ে এতো গেল গেল রব কেনো।
সত্যি কথা বলতে কি ভারতীয়রা এই ওলিম্পিক, বিশ্ব-রেকর্ড কিম্বা নানান
বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা নিয়ে বড় একটা মাথা ঘামায় না। আসলে ভারতীয়দের জ্ঞানবুদ্ধি
অনন্য দেশের চেয়ে অনেক উপরের স্তরের সেটা বারবার প্রমাণিত, হাজার
হাজার বছর আগেকার বেদ, পুরান কিম্বা উপনিষাদেই তার আভাস
মেলে। যে পুষ্পক রথের কথা তাতে লেখা ছিল তা যে আধুনিক যুগের বিমান পরিষেবা,
কিম্বা সঞ্জয়ের ধৃতরাষ্ট্রকে দেওয়া কুরক্ষেত্র যুদ্ধের বর্ণনা যে
আজকের দিনের দূরদর্শন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভারতীয় মুনি-ঋষিরা এগুলো অনেক আগেই
জানতেন বিজ্ঞানীরা পরে সেটা আবিস্কার করেছেন বা প্রমাণ করেছেন। আজ থেকে কয়েক হাজার
বছর আগে আমাদের মুনি-ঋষিরা দেখিয়ে গেছেন যে যোগ ও ধ্যানের দ্বারা যৌবনকে ধরে রাখা
যায় বা নীরোগ থাকা যায়, কিন্তু উন্নত দেশেরা তা মানতে চায়নি,
কারণ তার বিজ্ঞান-সন্মত প্রমাণ আমাদের কাছে ছিল না। আজ ষা প্রমাণিত
তাই এই ভারতীয় পদ্ধতিকে সারা দুনিয়া মেনে নিচ্ছে বা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
ঠিক একই যুক্তি ওলিম্পিকের ক্ষেত্রেও খাটে, একবার
ভেবে দেখুনতো একটা মানুষ অযথা ১০০ মাইল বেগে কেনো ছুটবে, কেনো মেডেল
পাওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করবে, তার
জন্য ড্রাগ নেবে স্টেরয়েড নেবে, আর শরীর সেই চাপ নিতে না পারলে হয়তো
শেষমেষ একদিন অসময়ে মরেই যাবে। ভগবানতো মানুষকে শিকার ধরার জন্য চিতা বাঘের মতো
ছোটার ক্ষমতা দেয়নি বা সেই ক্ষমতা অর্জন করতেও বলেননি, তাই তা
করার কোন প্রয়োজনও পড়ে না নেহাৎ পাগলা কুকুর তাড়া না করলে, আর সেক্ষেত্রে ছোটার
বেগটা বড় নয়, কুকুরের কামড় থেকে নিজেকে
বাঁচানোর উপস্থিত বুদ্ধিটাই বেশী জরুরী। তাড়াতাড়ি পথ অতিক্রম করার অনেক পন্থাইতো
মানুষের জানা আছে,
সে বুদ্ধি ভগবান মানুষকে দিয়েছেন কিন্তু জন্তুদেরকে দেননি। অযথা
বাঁদরের মতো ৩০ ফুট লাফ দেওয়ার আমাদের কি দরকার, মানুষকেতো
আর জঙ্গলে গাছের উপরে বাস করতে হয় না। মানুষ উন্নত প্রাণী ভগবান মানুষকে বুদ্ধি
দিয়েছেন, চেতনা দিয়েছেন যাতে করে আমরা জন্তুদের মতো মারামারি
কামড়া-কামড়ি না করি, সেটাই মানুষের ধর্ম, তাহলে আমি কেনো শুধু-মুধু বক্সিং এ পারদর্শী
হতে যাবো - অন্যকে মারার জন্য, আর যা আমার কোন দিন কাজেও লাগবে না বা
লাগাতে চাইবোনা তাতে চ্যাম্পিয়েন হয়ে কি লাভ।
আপনারাই বলুন আদ্দিকালের ঐ বর্ষা কিম্বা তীর ছুঁড়ে
কি কাজে লাগবে আজকের এই নিউক্লিয়ার যুগে, এর কি কোন প্রয়োজন আছে, মিসাইলতো
রয়েছে। খেলার মাঠের বাইরে এ নিয়ে ঘোরাফেরা করলে পুলিশ হয়তো আবার মাওবাদী ভেবে ধরেও
নিয়ে যেতে পারে। তারপর ধরুন এই থালা ছোঁড়া অর্থাৎ ডিসকাস-থ্রো - ঘরে রাগ
করে ভাতের থালা ২ ফুট দূরে ছোঁড়ার
হিম্মত যার নেই সে কিনা মাঠের এ
প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে থালা ছুঁড়ে বীরত্ব প্রকাশ করছে - কোন মানে হয়। অনেকে হয়তো
বলবেন এটা একটা খেলা, আর এটাই খেলার নিয়ম । তা ঠিক, তবে এটাওতো
মানুষেরই বানানো,
ধরুন ঐ থালার বদলে যদি কাদা ছোঁড়া-ছুড়ির কম্পিটিশন হোত তাহলে হয়তো
কোন বাঙালি সেই প্রাইজ
পেতো, ওলিম্পিককে
সোনা জিততো। কাল হয়তো নতুন কোন ইভেন্ট চালু হতে পারে - উল্টো দিকে ছোটার, কিম্বা সাপের মতো বুক ঘষে ঘষে দৌড়ানোর তখন মানুষ তাই করবে, জান লড়িয়ে দেবে মেডেল
পাবার লোভে। এই কামনা বাসনার কোন শেষ নেই সুতরাং এ নিয়ে বেশি মাথা না
ঘামানোই ভালো।
আমি খেলাধুলোর না করার কথা বলছি না, খেলাধুলার
প্রয়োজন নিশ্চই আছে, তবে যা করতে মন প্রাণ চায় এবং শরীরে সহ্য হয় তাই
করা উচিৎ,
মেডিকাল সায়েন্সও তাই বলে। আমি ছুটবো, দৌড়াবো,
সাঁতার কাটবো, লাফাবো ঝাঁপাবো সবই
করবো তবে নিজের খুশি মতো এবং আমার ক্ষমতা অনুযায়ী, জোর করে বা পদকের আশায় নয়।
তাছাড়া পৃথিবীর সব দেশের মানুষেরই কিছু প্লাস
বা মাইনাস পয়েন্ট থাকে - যার কিছু দৈহিক, আর কিছু
পরিবেশগত – আমরা আমাদের দৈহিক ক্ষমতা দিয়ে
ওলিম্পিকে ভুরিভুরি পদক জিততে না পারি, কিন্তু
অনন্য নানান বিষয়ে আমাদের
বুদ্ধিমত্তা, যোগ্যতা এবং ক্ষমতা দিয়ে বিশ্বের
মন জিতে নিতেই পারি, মানব
কল্যানে ব্রতী হতে পারি।
ভারতীয় মুনি ঋষিরা এই সহজ সত্যটা অনেক আগেই
উপলব্ধি করেছেন তাই অলিম্পিক পদক পাওয়ার জন্য আমরা খুব
একটা লালায়িত নই। আসলে যা করে "প্রানের আরাম, মানের আনন্দ
আর আত্মার শান্তি" পাওয়া ষায় এবং যা মানব কল্যানে কাজে লাগে আমরা
তাই করতেই ভালবাসি, সেটাই
বেশি জরুরী - মানুষ হিসেবে সেটাইতো কাম্য
।
4 comments:
রসিয়ে পরে লিখছি দাদা, আছি বাড়ি বদলের ব্যস্ততায়। আমার কম্প্যু খোলা হচ্ছে।
আবার বাড়ি বদল...আগের বাড়িটাতো খুব সুন্দরই ছিল..
আসলে এই বস্তু সামগ্রী ছাড়া আর কিছু বদলের সুযোগতো অমাদের বড় একটা নেয়, তাই একঘেয়েমী কাটানোর জন্য বাড়ির আসবাব বদল, বাড়ি বদল, গাড়ি বাদল ছাড়া আর কিইবা করার আছে....
না, না দাদা, বিস্তারিত পরে লিখব, কাল জিনিসপত্র সরছে, পরশু আমি মানে আমরা। যে বাড়ির ছবি দেখেছেন তা আমি বানিয়েছি, নাম 'নির্জনে' কিন্তু মাঝেসাঝে ছাড়া আজ অবধি সেখানে টানা থাকা হয়নি। কি করব, কপালে সে সুখ ছিলনা। আমি সে বাড়ির থেকে আট/ন কিলোমিটার দুরের বাড়িতে থাকি, মনে-মনে যার নাম দেওয়া আছে 'বিপর্যয়'। এ বাড়িকেই 'ঊষাদীপ'-এ বদলে ফেলার পণ রেখেছিলাম অনেকদিন আগেই, তাই একটু সুবিধে পেতেই বাড়ি ছেড়ে কাছেই যাচ্ছি,'বিপর্যয়'-কে ভাঙছি ও 'ঊষাদীপ'-এ বদলাবার প্রয়াস করছি। তবে এখনো জানিনা এই 'ঊষাদীপ' আমার মনোভুমে ঊষাকাল আনবে কিনা। সবই লির্দ্ধারিত দাদা...জানিনা অলক্ষ্যে কেউ আমার 'নির্জনে'-র মতই ভবিতব্য সাজিয়ে রেখেছেন কিনা। সেও আমায় পায়না, আমিও মিস করি তাকে।
লেখা পড়ার পর-
বাহ্, এদিক থেকে তো ভাবিনি। আপনি একজন সদা জাগ্রত নাগরিক, যার মস্তিষ্ক অহরহই কাজ করে চলেছে। এই ভিন্ন দৃষ্টিকোণের মধ্যে দিয়ে কথাগুলো ভিন্নভাবে বুঝলাম ও কিছুটা অলীক হলেও বোঝাবার গুণে সহমতও হলাম। যে কোন বিষয়ের ওপর এই অন্য দৃষ্টিভঙ্গী, এই ধাঁচ আমার বরাবরই খুব প্রিয়।
Post a Comment