'লেপাচা খা'- থেকে দেখা সূর্যাস্ত
লেখাটি 'সকালবেলা' পত্রিকার 'ঘুরে আসি' বিভাগে পাবলিশ হয়েছে 26-শে জুলাই। তখন অমরনাথ গিয়েছিলাম বলে পাইনি। অবশেষে কিছু দিগদারী সামলে আজ হাতে পেলাম। শিরোনাম ছিল- 'সেখানে রূপের সেখানে ভয়ের বাসা।' দপ্তর সেটি বদলে রেখেছে-
জীবন নিয়ে লোফালুফি
মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী
কী খেয়ালে গিয়েছিলাম ইস্ট ডুয়ার্স? জয়ন্তীর জল-জঙ্গল, চা-বাগানে বেড়াবার খেয়াল এক আর ‘মহাকাল’-এর পাকদন্ডী পথে বিপদের সঙ্গে
যোঝা আরেক। সুস্থ দেহে এসেছি যে, এই ঢের। আমাদের
দলের নাম
‘ইচ্ছেডানার উড়াল’- তা’বলে যেখানে-সেখানে উড়তে চাইলেই
হল? আসলে সবার মনমর্জি
মোটামুটি একইরকম বলেই বোধহয়...
ইন্দ্রবাহাদুর থাপার গেস্টহাউস
এই
‘...উড়াল’ সদস্যরা মাঝেসাঝেই গেয়ে ওঠে- ‘চল না, কোথাও যাই।’ ‘যাই-যাই’ ডাক অহরহ শুনি ভিতরে, তা’তে যেই ওদের ইচ্ছের রং লাগে, বুক জুড়ে কাঁইনানা-কাঁইনানা... তখন ঢাকি-কাঁসী নিয়ে শুধু
বেরোবার অপেক্ষা।
জানুয়ারীর লাল দাগানো দিনগুলোকে হিসেবে তুলতে মিটিং ডাকলাম।
মিটিং প্র্যাকটিক্যালি ইটিং-এই শেষ হয়ে চলল গত হয়ে যাওয়া ভ্রমণগুলোর স্মৃতিযাপন।
কোথায় যাবে, কিভাবে- ও’সব দায় আমার, ওদের মন নেই। ওরা খোলা ডানায় সবুজ রঙ মাখতে পেলেই হল। আমি আসলে সেই সাপুড়ে যার বাঁশীর
সুরে সাপগুলো অমনি ধরা দেয়। শুধু ‘কদ্দিনের জন্য’-র হিসেবটুকু সবার। অফিস-কলেজের সেই
অঙ্ক কষেটষে বাইশ তারিখ দুপুরে বেরনো গেল, পরদিন
ভোরে পৌঁছলাম নিউ-আলিপুরদুয়ার। পরিপাটী সুন্দর স্টেশনে- কুয়াশা জড়ানো ওড়না-আড়ালের
ছায়া-ছায়া মায়ার খেলা। বোলেরো গাড়ী নিয়ে হাজির হলেন ড্রাইভার রতন শর্মা। চোখে আমাদের
জমাট কৌতুহল- শিশুর মত দশা। যা দেখছি তা’তেই উদ্বেল। আধা মফস্বলী জায়গাটিও ভাল লাগার ভোরবেলা দিয়ে ধোয়া, ঊষ্ণ,
উদাস।
রুখাশুখা জয়ন্তীর নুড়িপাথুরে পথ... ডানদিকে ভুটান
এবার
চলা শুরু। দু’ধারে বন, সুপারীবাগান, সেনা-ছাউনী,
দূরে-দূরে পাহাড়ের আবছায়া আবেশে মেতে তিরিশ কিলোমিটার দূরের বক্সাদুয়ারে পৌঁছলাম
যখন তখনও রোদ আলতো, নরম। ভাগ্যিস্ গাড়ীর ইঞ্জিন শক্তিশালী ছিল, সেই জোরেতে
ঘাটরাস্তা পেরিয়ে দিব্যি টং-এ উঠে এলাম। নামলাম যেখানে, সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার
হাঁটাপথে পৌঁছতে হবে হোটেল। এতক্ষণ বেশ প্রকৃতিলীন ছিলাম, এবার কাঁধের বোঝা তার
উপস্থিতির জানান দিতে লাগল। দু’ পা এগোতেই হোটেলের পাঠানো পোর্টারের
সঙ্গে দেখা। বোঝা চালান করলাম ও ঝাড়া হাত পায়ে পৌঁছে গেলাম ঘন্টাখানেকেই।
পাহাড়ের গায়ে ঠেসান দেওয়া প্রায় ঝুলন্ত ঘরে ক’জন বসলাম
জাঁকিয়ে। বসলাম মানে ঐ আর কী... চাযে ঠোঁট ভিজিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম। যা দেখছি,
যেদিকে তাকাচ্ছি, সবটাই মনে জগঝপ্ম বাজানো অভূতপূর্ব- অধরাকে ধরতে চাইছি চোখের ফ্রেমে-
তক্ষুণি।
প্রত্যেকের
হাতেই এখন ডিজিটাল ক্যামেরা, ঝপাঝপ ছবি উঠছে, সঙ্গে অনুযোগও। ‘যা দেখছি, তার এক কণাও ধরা যাচ্ছেনা।’ কেউ বলল- ‘ক্যামেরা কোম্পানীগুলো বেকার। এত পিক্সেল
তত এক্স-র গপ্প শোনায় অথচ ফ্রেমে কিচ্ছু আঁটছে না। সব বেচার ধান্দা, বুঝলে!’ ওদের আর কী বলি, আমারও তো সেই দশা। দৃষ্টি পরিধির সমগ্রকে বাক্সবন্দী
করতে চাইছি আর ঠকছি সারাক্ষণ।
মহাকালের পথে
পৌঁছলাম
যেদিন, সেদিন 23-শে জানুয়ারী- স্পোর্টস চলছে। সমতল অংশটি বক্সাফোর্টের কোলে, যেন চরণ
ছুঁয়ে হিসেবহীনের মাঠ। তিনদিকটায় জঙ্গুলে পাহাড় ধাপে-ধাপে উঠে গেছে আর অন্যদিকটায়
ফোর্ট। বেলা পর্যন্ত খেলাধূলো দেখে, ফোর্টের ভগ্নতা ও দৈনতার আলোচনা করতে-করতে ফিরলাম
যখন, তখন দেড়টা বাজে। দেখি নেপালী মালিক ইন্দ্র থাপা খেতে দিতে গিয়ে হিমসিম
খাচ্ছে, সব বোর্ডারের পেটে একসঙ্গে আগুন লেগেছে- অথচ এ্যামেচার স্টাইলে গড়ে ওঠা
নেটওয়ার্ক ওদের পল্কা। বৌ রাঁধছে, মেয়ে কুটছে, ছেলে জ্বালানীর যোগান দিচ্ছে।
সহকারী দুই/তিনজন লেপ্চা সঙ্গে আছে, কিন্তু রাবণের চিতার কাছে নস্যির মত সব উড়ে
যাচ্ছে। তাড়া আমাদেরও। বক্সাদুয়ারে থাকব মোটে একদিন, তাই শুষে নিতে চাই মায়াপুরীর
সবটুকু বৈভব। শুনেছি ‘লেপ্চা খা’ বলে পাঁচ কিলোমিটার ওপরে যে পাহাড়, তা অসাধারণ। যেতে হবেই। সঙ্গে যদিও
গাইড থাকবে- তবু ফেরার পথে অন্ধকার নামলে উপায়? অতঃপর রান্নাঘরে হানা দিলাম। নিজেরাই
বেড়ে নিলাম আতপচালের ভাত, জলজ ডাল, বাঁধাকপির তরকারী, এগকারী। তারপর কাঠকুটোর ধোঁয়ায়
কাশতে-কাশতে আর কাঁদতে-কাঁদতে খাওয়া শেষ। আমাদের সেল্ফহেল্প সাহায্যটুকুতেও বর্তে
গেল ইন্দ্রবাহাদুর। তারপর ওর ব্যবস্থা করে দেওয়া গাইড নিয়ে- পাহাড় থেকে পাহাড়
পেরিয়ে, ঝর্ণার জল ছুঁয়ে হাঁপাতে-হাঁপাতে পৌঁছে গেলাম ‘লেপ্চা
খা’। অত উঁচুতে অনেকটা সমতল ভূমি- এ্যাঙ্গেলে উঠতে-উঠতে
পাহাড় হঠাত্ই মাথাভাঙা। যেন নৈবেদ্যর চূড়াটুকু কোনো দুষ্টু ছেলের হাতে পড়ে থ্যেবড়ে
গেছে। হু-হু হাওয়া জানান দিচ্ছে- ‘তোমরা এখন বিলকুল একা...
উঠেছ টঙে।‘ পাহাড়ের খাঁজে-ভাঁজে আটকে আছে তূলো-তূলো মেঘ। কি
অপরূপ, পাহাড় আর মেঘ যেন সখ্যতার আলিঙ্গনে বাঁধা। ওপর থেকে নীচে দেখছি ক্ষীণস্রোতা
জয়ন্তীর আল্পনাপথ, সাদা নুড়িময় বালা নদী আর আকাশে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছি অস্তগামী
লাল সূর্য্যের সন্ধাযাপনের তোড়জোড়। বাক্যহারা আমরা নিজের সঙ্গে বসে থাকলাম
কিছুক্ষণ। সজাগ হলাম গাইডের ডাকে- ‘ফিরতে হবে দিদিরা...’
পুকুরিয়ার পথে
অবতরণ
চির কালই সহজ উত্তরণের চেয়ে। ফিরব মনে করে নামতে শুরু করলাম ও ঘন্টা দেড়েকেই
পৌঁছে গেলাম হোটেল। তারপর আড্ডা দিয়ে, মুর্গীর ঝোল-ভাত খেয়ে দেখতে গেলাম ইন্দ্রর
শিল্পকলা। আমরা মুভড্। বাচিক ও আঙ্গিক অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেরই লেখা কিছু গল্প বলছে।
পাহাড়, নদী, ঝর্ণাকে চরিত্র করে প্রকৃতির বেঁচে থাকার আর্তি ও মানুষের মঙ্গল-বাসনাই গল্পের উপজীব্য। ইন্দ্র ডেমনেস্ট্রেশন
দিতে গিয়ে কখনো কাছিম হচ্ছে, কখনো হাওয়া, বাঘ, কাঠুরে বা গুলি খাওয়া পড়ন্ত পাখীর
নকলনবিশী নিয়ে টোটাল থিয়েট্রিক্যাল প্রেজেন্টেশন। এই ইনোভেটিভ কাজের যে রেঞ্জ তার
যোগ্য না ছিল দর্শক না পরিবেশ। বারান্দার চারফুটি পরিসর, টিমটিমে হ্যাজাগের আলো, অভিনয়
চলাকালীন উঠে যাওয়া বেরসিক পাবলিক... কিছুই ওর মনোযোগ টলাতে পারেনি- যতক্ষণ না ও নিজে
তা চেয়েছে। বেচারী কারুবাসনা চরিতার্থতার যথার্থ মানুষ পায়না, তাই শহুরে বোর্ডারই
ভরসা। প্রায় ভিক্ষা চাওয়ার মত করে শোনায় অন্তরগান- বিনা পয়সায়। সঙ্গে একটা
ট্রাইসাকোড আছে, তা বাজিয়ে আবহ তৈরী করে আর গল্পের ভাবানুসারে দেখায় কাঠের কচ্ছপ,
তীর বেঁধা পাখী, শুকনো জলাশয়ে মৃত প্রাণী ইত্যাদি। অফ সিজনে ও সারাদিন ধরে
আঠা-বাটালী-তুরপুন সহযোগে এ’সব বানায়। এ’ যেন এক অন্য ভ্রমণ- মানুষটার অচেনা চেতনপথের।
জয়ন্তী নদীর ওপর বাঁশের সেতুতে
পরদিন
সকাল-সকাল ইন্দ্রকে পয়সা মিটিয়ে চললাম জয়ন্তীর ‘বনলতা’য়। নদীর কাছেই সাজানো বাংলোয় সবাই এক ঘরে উঠলাম।
সকাল হতেই ‘ইচ্ছেডানার উড়াল’ বেড়লাম জঙ্গল
চষতে। একজনের ভিডিওয় দেখেছিলাম- ‘পুকুরিয়া’-য় গোটা চৌদ্দ হাতির জলকেলী। দেখে থেকে অস্থির- তক্ষুনি যেতে চাই। যেন ‘পুকুরিযা‘ হাতীকুলের দাঁত মাজার, ঘরকন্নার, রোজকার স্নানের
স্থান- গিয়ে দাঁড়ালেই শুঁড় দুলিয়ে লেজ মুড়িয়ে পোজ দেবে। তর সইছেনা, দুপুরেই ছুটলাম।
বেশ খানিকটা চড়াই ভেঙে ওঠার পর ওপরে পান্নাসবুজ পুকুর, পাথুরে
পাহাড় আর থমধরা জঙ্গলে পৌঁছলাম। শুধু একঘেয়ে ঝিঁঝিঁর ডাক জানান দিচ্ছে পৃথিবীতে
শব্দ বলে এখনো কিছু আছে। কিন্তু তারা কোথায়? কাচকামিনী জলে
শুধু গাছেদেরই মুখোচ্ছবি। গাইডকে বললাম-
-
হাতি কই? এই যে শুনলাম একটা দল নাকি এ’পথেই...
-
হ্যাঁ এ’পথেই...
-
তো কই তারা?
-
আসবে হয়তো... বিকেলে।
-
বিকেলে কেন?
-
ভোরে আর সন্ধ্যাবেলায় জল খেতে আসে কিনা....
- তা আমরা আগে কেন?
- সে তো আপনারাই চাইলেন।
উঃ,
কী রাগ ধরল। সেই কাটা ঘায়ে আবার নুনের ছিটে পড়ল যখন শুনলাম ছানাপোনা নিয়ে হাতির পাল
নাকি দাপিয়ে গেছে পুকুরিয়া- বিকেলবেলায়। ও’সময় আমরা বনের অন্যপথে আশায় ছুটে মরছি। কি আর করার, মনকে প্রবোধ দিলাম- আরণ্যক
ধাঁধাটাই আসল মজা, গেছে যা যাক্। পুকুরিয়ার জলে যে বোম্বাই সাইজের মাগুরমাছ আর
লিলিপুট ক্চ্ছপ দেখেছি, তা কি ফেলনার? হঠাত্ই ঝুপঝুপ সন্ধ্যা নামলো, আমরা ফেরার পথ
ধরলাম। বরাদ্দ যে তিনদিনের হিসেব ছিল, তারমধ্যে ফুড়ুত্ দুটো দিন, পরদিন যাব
মহাকাল। রাত বাড়তে থাকল, তবু ক’জন কথোপকথনে জেগে আছি... আড্ডার
আড়ে কিছু মলিন দিন যদি মোছা যায়। ফিরে তো সেই একই বৃত্ত যাপন, অথৈ চাপের কাছে
নিত্য নতজানু।
গাছের নাচের সাথে ছন্দ মিলিয়ে কন্যা
মনে
মহাকালের ডাক ছিল তাই ভোরেই ঘুম ভাঙল। সবাই বারণ করেছিল, বলেছিল রাস্তা খাড়াই- অর্দ্ধেক
মানুষই মাঝপথ থেকে ফেরত্ আসে- অন্য কোথাও যাও। কিন্তু চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জন না
করে পিছব না। নটা বাজতেই তাই গাইড টোটনকে নিয়ে বেড়লাম। গাড়ি মোটে দু’তিন কিলোমিটার গিয়েই নামিয়ে দিল- এবার হাঁটতে
হবে। যেখানে নেমেছি, সেই শুকনো নদীটাই পথ্। ধুধু কাঁকড়ময় বালী আর সাদা নুড়ির
প্রান্তর। এই দু’দিন যে পাহাড় দেখেছি আর আজকের যে ছবি তার
মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। বড়-বড় বোল্ডার পেরতে হচ্ছে কখনো নদীকে ডানে কখনো বাঁয়ে
নিয়ে। হঠাত্ই জল পড়ার শব্দ শুনে দেখি পাহাড়ের ফাঁক গলে প্রপাতের মত বেগে নামছে
জয়ন্তী নদী। এই অবধি জায়গাটির নাম ছোট-মহাকাল, আমরা যাব মহা-মহাকাল। কিছু ফিরতি
পথের মানুষকে জি়জ্ঞেস করলাম- ‘কেমন দেখলেন?’ প্রতিক্রিয়া- ‘ওফ, অসম্ভব... ।’ অসম্ভব? কৌতুহল বেড়ে গেল- অল্প এগিয়েই মালুম পেলাম। দেখি একতলা সমান
উঁচুতে একটা কাঠ পাহাড়ের গায়ে এ্যাঙ্গল করে রাখা, তা খাঁজে-খাঁজে কাটা, ওটা বেয়ে
উঠতে হবে ওপরে। এই প্রথম আমার আত্মবিশ্বাস টাল খেল। ‘উঠব এ’ভাবে তো নামবো কীভাবে?’ নির্লিপ্ত টোটোন বলল- ‘কেন এ’ভাবেই।‘ ভাবতে-ভাবতেই
দেখি দলের ক’জন ল্যাকপ্যাক্ করে উঠে গেল- অবশেষে কী জানি কী
করে- আমিও। ভাবলাম শক্তপথ পেরিয়ে এসেছি- এবার বোধহয়... হঠাত্ই পথজুড়ে দেখি বিশাল
বোল্ডার স্ল্যান্টিঙ, ওপরে কাঠের পাটাতন সেই কৌণিকতার হিসেব মেনেই পাতা। হৃদপিন্ড
প্রায় হাতে নিয়ে এগোলাম, মনোযোগের একটু এদিক-ওদিক হলেই নীচে ফুঁসতে থাকা জয়ন্তীর
আশ্রয়-নিকেতনে সোজা। এই পর্ব ছিল পুরো চার হাতেপায়ে হামাগুড়ির মামলা। তাও পেরিয়ে
এলাম ও এসেই পড়লাম সরু একরত্তি ফাটলের ফাঁকে বাঁশের আরেক খেলবাজীতে। এটা এবার
উঁচু থেকে নীচেয় নামার। প্রতিবারই আমরা নতুন অভিজ্ঞতার সামনে পড়ছি আর বলছি ‘না, না আর না...’ কিন্তু কী অদ্ভুত, কেউ কেউ যেই এরিয়াটা
পেরিয়ে যাচ্ছে, সেই অন্যেরা কাঁদাকাঁটি করলেও পেরোচ্ছে... পেরতে হচ্ছেই। বাকী ছিল পিচ্ছিল
কেঠোসেতু ধরে নদী পেরনো- হয়ে গেল সেটাও। এ’ যেন কম্প্যুটারে
গেম খেলছি। একটা এ্যচিভমেন্টের পরেই খুলে যাচ্ছে আরেকটা লেবেল আরো শক্ত খেলা
সাজিয়ে। তফাত্ শুধু ওখানে খেলা তো খেলাই আর এখানে জীবনকে নিজেরই মুঠোয় নিয়ে
লোফালুফি খেলতে-খেলতে চলা। এবার রাস্তা আবার বোল্ডারময়। ভাবছি অনেক হল, এবার বোধহয়
পৌঁচেছি। কিন্তু টোটন বলল- ‘এটা বেস ক্যাম্প, আসল পথ এইবার...
চলুন।‘
বক্সাফোর্টের মাঠে, লেপ্চা মে'-দের সাথে...
তারপরের
দুর্গমতা বোঝানো আমার সাধ্যের অতীত। এই চড়াইপথে এমন একরত্তি জায়গা ছিল না যেখানে একটু
দাঁড়াই- হাঁপ ছাড়ি। উঠেই গেলাম, উঠেই গেলাম... প্রকৃতির দিকে তাকাবার মত অবস্থা
নেই। দেহ থেকে প্রাণ মুক্তি চাইছে, ‘ইচ্ছেডানার...’ ইচ্ছেপত্র উধাও- সব্বার। পৌঁছবো কিনা
আর পৌঁছলেও ফিরতে পারবো কিনা জিজ্ঞাসায় মন ব্যস্ত। টেপ আটকে যাওয়ার মত নিউরোনে তখন
একই কথার ঘুরপাক। শেষে ঝর্ণা-পিছল পথ ও ধ্বসতে থাকা ছাইমাটি সামলে চূড়ায় উঠতে
পেরেছিলাম ও ফিরেছিলাম সকলেই।
লেপচা খা-য় গোধূলী
যে
গুহার মধ্যে মন্দির, তার সর্বত্র দিয়ে ফোঁটা-ফোঁটা জল পড়ছে... সেই খনিজ জল থেকেই
তৈরী হচ্ছে নানা আকৃতি। ঐ অপরিসর জায়গাতে আগুন জ্বেলে এক সন্নাসী বসে আছেন। তিনিই
দেখালেন গুহার প্রাকৃতিক ভাস্কর্য্য্। কোনজন পার্বতী, কোনটা দক্ষযজ্ঞের সভাস্থল আর
কোন রাজকীয় জন মহাকাল তা দেখলাম খুঁটিয়ে। তারপর পিছল পথ ধরে কীভাবে নেমেছি জানিনা।
শুধু জানি এই অভিযান অন্তরে রাজ্য জয়ের তৃপ্তি জোগাল। ঘরে ফিরে যখন এই নাগরিক
স্পন্দন আর প্রযুক্তি-প্রাণের পাশে ঐ দিনগুলোকে রাখি, তখন স্বপ্ন বলে মনে হয়, যে
স্বপ্নের কাছে ফিরতে ইচ্ছে করে বারবার।
জেনে
রাখুন ট্রেন-
তিস্তা-তোর্সা, কাঞ্চনকন্যা, গরীবরথ। যোগাযোগঃ
বক্সাদুয়ারের জন্য- ইন্দ্রবাহাদুর থাপা, 09475249138. জয়ন্তীর জন্য- বাপী ব্যানার্জী, 09434607393, গাড়ীর
জন্য- রতন শর্মা, 09434607730 .
4 comments:
গপাগপ গিলিলাম ! আর সাথে যোগাযোগকারীদের নম্বর পাইয়া আরো খুশি হইল পরাণ! অমন লালদাগি উইকএন্ড আসিলেই পালাইব !
তোমাকে পাইয়া বড়ই প্রীত হইলাম ইন্দিরা। পত্রিকাটি শেষমেষ আমায় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইল। আশা করি তুমি বুঝিবে...
পায়ের তলায় সরষে। আমিও মাঝখানে ব্যাঙ্গালোরে গেছিলাম। সেখান থেকে হাম্পি। যদি লিখি,তো তোমায় পাঠাবো ভাবছি। অবশ্য যদি পারমিশান পাই।
কি যে বলো ভাই, তোমায় কিনা পারমিশান দেব আমি, যে সবার লেখার জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে থাকে... অপেক্ষায় রইলাম, ইমিডিয়েটলী হাম্পি সম্পর্কে জানতে চাই- লেখা দাও।
Post a Comment