Wednesday, 22 June 2011

মন-কবুতর


 লেখাটা কিছুতেই মনঃপূত হচ্ছেনা দীপঙ্করের দীপঙ্কর অর্থা  দীপুসমাজ সেবার জেরে এ পাড়ার দীপুদা টেনিদাকে ক্ষাণিকটা কাটছাঁট করে কপি-পেষ্টকরলে দীপুর চরিত্রে বেশ মানানসই সবে বি.এ ফার্স্ট ইয়ারপড়াশোনাটা অনেকটা তার কাছে মাছি তাড়ানোর মতএ হেন দীপু আজকাল এক মারণ রোগের শিকার
পেনটাকে সিগারেট ফোঁকার স্টাইলে দুঠোঁটের মাঝে চেপে ওয়ার্ম-আপ করাতে করাতে ভাবতে বসে দীপুনাহ্‌ মেয়েটার এলেম আছে!শালা! কত নোটঙ্কী এল গেল এ পাড়ায়! কিন্তু দীপঙ্কর স্যান্যালের পাথরের মত বুকে ফাটল ধরানোর সাধ্যি কারো হয় নি! আর এই হরিদাসী কিনা দু-চারবার মুচকি হেসে স্রেফ পাত্তা না দিয়ে ব্রম্ভচর্যের ঘেঁটি ধরে একবারে নেড়ে দিয়ে গেল  মাইরি! আজকাল শুতে,বসতে,হাঁটতে এবং বলাই বাহুল্য পড়তে গেলে সংসারময় শুধুপোলকা-ডটেডসালোয়ার কামিজ শুধুই কি তাই!নবাব কেনার সাথে আরাম ফ্রি তাই বাড়তি হিসেবে চোরা চোখের তাচ্ছিল্যের হাসি
নাহ্‌ চিঠিটা লিখতেই হবে কি দিয়ে শুরু করা যায়? ‘প্রিয়তমাসু’? এহেঃ বড্ড সেকেলে শোনাচ্ছে চড়চড় করে একটা আওয়াজ এ পৃষ্ঠাটাও বেকার গেল! প্রিয়দিয়ে শুরু করাই ভাল কিন্তু প্রিয়টা আজকাল যেন সার্বজনীন দূর্গোসবপাড়ার বল্টুদা থেকে হরির ঠাকুমা অবধি সবাই প্রায় মাই ডিয়ারকাজেই এই শব্দও বাতিল কিন্তু শুরুটা হবে কি দিয়ে পাড়ার টিঙ্কু,বুল্টি এরা তো মন্টিবলে ডাকছিলকিন্তু   পাড়াতুতো নামে  চিঠি দেওয়াটা কি ঠিক হবে! হিসেব করে   ‘পা’  না ফেললে কেস কিচাইনহয়ে যেতে পারে
পাশে রাখা গোলাপী খামটা খিদে পেটে অপেক্ষা করতে করতে নেতিয়ে পড়েছে ঘরের কোনে একের পর এক চিঠির বোল্ডার জমা হচ্ছে নাহ্‌ ব্যাপারটা ক্রমশ ঘোরালো হয়ে পড়ছে একটা প্রবহমান স্রোত  স্রেফ শব্দের চক্রব্যুহে ফেঁসে যাবে! কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায়না ! ঢক্‌ ঢক্‌ করে এক নিঃশ্বাসে ক্ষাণিকটা জল খেয়ে একটা ব্রেক নিয়ে নেয় দীপুসন্তর্পণে চারিদিক মেপে ফস্‌ করে দেশলাইটা ধরায়  বারান্দায় একটু পায়চারি করা যাক্‌ চাঁদের আলোর সাথে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁওয়া ! আজ চিঠি লেখা  কে থামায়! আচ্ছা কে যেন বলেছিল না  “পুর্নিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”......ধুসস্‌ একদম ফালতু কথা! আসলে ওটা পুর্নিমা-চাঁদ  যেন ধারালো মন্টিহবে তাকালে মনে হয় ভেতর অবধি দেখে ফেলল উফ্‌ ! কি চাহনি মাইরি! কোথায় লাগে বিপাশা বসু! কি লেখা যায় তাহলে, ‘ ওগো সুনয়না’ ...ধুর্‌  মনে হচ্ছে ন্যাকা স্বামী বাড়ী এসে পাপস্খালন করছে
রাস্তায় দুটো দেশী কুকুর কাঁ করু সজনীর সুর তুলেছে নারকেল গাছের  পাতার সর্‌সর্‌  শব্দে উড়ে গেল একটা রাতচরা পাখিআহা!যেন মন্টিডানা মেলে উড়ে গেল!  মিনিট দুয়েক পায়চারি করতেই  দীপুর চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলআধপোড়া সিগারেটটা ছুঁড়ে দিল একেবারে নীচে    ব্যস্ত পায়ে ঘরে ঢুকে পেন হাতে তুলে নেয়

মন্টেশ্বরী ওরফে মন্টি,
এই চিঠিকে প্রেমপত্র বলে ভয়ঙ্কর ভুল করে বোসো না যেনকয়েকটা কথা না বললেই  নয়...তাই এই চিঠিগত কয়েকদিন ধরে তুমি যেভাবে আমাকে বিদ্যুপিষ্ট  করেছ তা ক্ষমার অযোগ্য কি ভাবো তুমি নিজেকে? বিপাশা বসু নাকি পুর্নিমার চাঁদ ? ঠোঁটের ঐ তাচ্ছিল্যমাখা হাসির অপসারণ না হওয়া অবধি তোমার ভবিষ্যত সংকটময় কিছুক্ষণ আগেই একটা আধপোড়া সিগারেটের সাথে আমি সবটাই ফেলে এসেছি
দীপঙ্কর

চিঠিটা গোলাপী খামে ঢুকিয়ে  ভালো করে সেঁটে হাতে তুলে নেয় বারান্দায় এসে দাঁড়ায়চিঠিটা এক্ষুণি পোস্ট করা দরকার......ভীষন দরকার  ভাবতে ভাবতে আলতো করে বন্ধ খামটা হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয় উড়তে উড়তে খামটা কাঠগোলাপ গাছের ফাঁকে আটকে  পড়ে  দীপু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘরে  যায়   গত কয়েকদিনের জমানো ঘুম মিনিট খানেকের মধ্যেই নেমে আসে

8 comments:

Unknown said...

দুর্দান্ত বললেও কম বলা হয় সুতপা, তোমার মত করেই তোমাকে উত্তর দেবার চেষ্টা করেও পারলাম না। অ-সা-ধা-র-ণ এক পীস নামিয়েছ। এত ছোটর মধ্যে এত স্পষ্ট... এই স্টাইলটার প্রতি আমার লোভ রয়ে গেল। তোমার এই রকম লেখার অপেক্ষায় ফের রইলাম। কবিতা পড়েছি কিন্তু গদ্যতেও তুমি এমন মারকাটারি.... ধারণা ছিলনা।

অধরামাধুরী said...

অনেক চেষ্টায় শেষমেষ পোষ্ট করতে পারলাম। মঞ্জুশ্রী আমি এখন গল্পই লিখি।কবিতা আর আসেনা আমার কাছে। তোমার ভাল লেগেছে দেখে আমার হেব্বি আনন্দ হচ্ছে।

nilakash said...

আরে.... দারুণ, দারুণ। দুবার পরে ফেললাম। সত্যি,প্যাটার্নটাই আলাদা।

তিতাস বেরা said...

ভালো লাগল।

আল ইমরান said...

যা লিখেছেন মাইরি,.........
এক্কেবারে আমার প্রেমের প্রথম চিঠি লেখার কথা মনে করিয়ে দিলেন।

অধরামাধুরী said...

সব্বার কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি।

Asim said...

আপনার বাড়ি কি হাওড়ার? এমনিই মনে হল। ভাল লেখা।

অধরামাধুরী said...

আমার বাড়ি যাদবপুরে, দক্ষিণ কোলকাতা