Saturday 16 July 2011

দলছুট

পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া অনেক নীচের কলকাতা শহরটাকে দেখে মনে হল এক্ষুনি এই ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে গেলে কেমন হয়? ভাবতেই পায়ের নীচটায় কেমন শিরশিরিয়ে উঠল।
মৃত্যু আমি আমার জীবনে কম দেখিনি। পাড়া পড়শি, আত্মীয় স্বজন, রাস্তায় অচেনা কেউ এসব মিলিয়ে জনা দশেক তো হবেই। তবু রাত্রিদিন চোখের সামনে ঝিলমিলিয়ে ওঠা জীবনের মাঝে সহসা এই শূন্যতাকে এখনো গ্রহণ করে উঠতে শিখিনি। এখনো জীবনের সার্বিক অনুপস্থিতি, নিজের অস্তিত্বের গোড়া ধরে টান মারে, তুমি কি ভাব কোথা যাও, কিছু যায় আসে না – শুধু দিনের শেষে ঘরে ফিরো মৃত হয়ে, এই তোমার নিয়তি।
যাঃ কি সব আজে বাজে ভাবছি, দাদা হলে বলত নেগেটিভ মেন্টালিটি। আর আমার মন তুমি কি বলবে? কি যুক্তি দেখাবে সাততলার ফ্ল্যাটের এই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়ায় এসব ভাবার? চার পেগের পর বিস্বাদযুক্ত পঞ্চম পেগ ভদকার এফেক্ট নাকি নিচে বয়ে যাওয়া এই অচেনা শহরটার গ্র্যাভিটি কেটে ওর কাছে ফিরে যাবার হাতছানি? আরেকবার প্লীজ আরেকবার খুব চেঁচিয়ে বলব শালা সব ফালতু কিছু হল না এ জীবনে।
কি হবে তাতে? কাল সকালে ফোন আসবে বসের? ও মিঃ লাহিড়ি উই হ্যাভ আ মিটিং ইয়েসটারডে, উই হ্যাভ ডিসাইডেড দ্যাট দেয়ার উইল বি নো জব টার্মিনেশন। কিচ্ছু হবে না, এ জীবনে আর কিচ্ছু হবে না, কালকে ও সূর্য উঠবে, অফিস যেতে হবে, জব টার্মিনেশনের পিঙ্ক স্লিপ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। দাদা ঠিক বলত, লাইফ ইস আ বিচ। সব তো দিয়েছি, ডিগ্রী, জব, টু বেডরুম ফ্ল্যাট, পাসপোর্টে ইউ এস এ এর ছাপ, দুটো ক্রেডিট কার্ড, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, সুন্দরী বউ, সে ঘরে না থাকলে সেক্সি অফিস কলিগ আজকের মত। তবে, তবে কি পেলে কুক্কুরীটা চুপ করে থাকবে কিচ্ছুক্ষনের জন্য?
বসার ঘরের সোফায় পরে আছে সুমির শরীরটা, সবুজ সালোয়ারে ঢাকা যেটাকে ঘন্টাখানেক আগে স্বচ্ছ সরোবরের মত মনে হচ্ছিল এখন এতক্ষন ধরে ঘাঁটার পর নিসুতো সেই শরীরটাকে পাঁকের মত বিশ্রী লাগছে, এই সুমির নগ্নতা, এর জন্য এতো দিন ধরে লুকিয়ে চুরিয়ে এক্সট্রা ম্যারিটাল, নিজের উপর ঘেন্নায় কেমন বমি পেল।বেসিনের দিকে এগোতেই খোলা বেডরুমের দরজা বেয়ে চোখে পড়ল জারটা। পিছনে একটা হাল্কা আলো লাগিয়েছে আমার বউ, জারটাতে ঘুরে যাচ্ছে নটা গোল্ডফিশ, আটটা লাল আর একটা – কালো।
সকালে অফিসে ফোন করেছিল প্রিয়া, “এই শোন না, আজকে একটা জারে অনেকগুলো গোল্ডফিশ কিনেছি, আমি তো চলে যাব, রাতের বেলা ওদেরকে একটু খেতে দেবে সোনা”। হাতের মুঠোয় তখন সুমির নরম কোমরটা (এই এত্ত সরু, আর তখনো সবুজ সালোয়ারের নীচে)। ভালো করে শুনিওনি, রাতে তুমি থাকবে না এই সব, গোল্ডফিশ কেন আমি ব্ল্যাক প্যান্থারকে খেতে দিতেও রাজি।
পায়ে পায়ে জারটার সামনে এসে দাঁড়াতেই কালো গোল্ডফিশটা আমার সামনে এসে স্থির হয়ে দাঁড়াল, ইস খেতে দেওয়া হয়নি যে, মাছেরা কি খায়? দু ফোঁটা ভদকা ঢেলে দেব নাকি? মাছটা সামান্য এদিক ওদিক হেললো, এটা আবার আলাদা বাকিরা যখন সাঁতার কাটছে এটা চুপ কেন? আমি মনে মনে ওর নামকরন করলাম দলছুট।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স, পার্থ, সায়ন্তন, অরিত্রা সবাই পেয়েছে, আমিও পেয়েছি, কিন্তু পরবো ফিল্ম ডিরেকশন, বার্গম্যান, কুরোশাওয়া, সত্যজিত, ঋত্বিক ছেড়ে ইলেকট্রিকাল কি যে বল – আমি না দলছুট? তাই? যাদবপুর ইলেক্ট্রিক্যাল রোল নাম্বার ১৮৪ – অনার্য লাহিড়ি।
আমি চাকরি করবো না, অনেক পরেছি এবার ব্যাণ্ড – বিটলস, পিঙ্ক ফ্লয়েড বা মহীনের ঘোড়াগুলি, আবার দলছুটের স্বপ্ন। তাই? ইনফির লিস্ট বেরিয়েছে – অনার্য খাওয়া, পাঁচে তুই।
কালো মাছটা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, নড়লো না চড়লো না, মদের খেওয়ালে মনে হল দলছুট অনার্য, একবারো মনে পড়ে শ্যামলা একটু মোটা মেয়েটার কথা, কি নাম ছিলো তার? ইনফির ট্রেনিং এ যাবার আগের সন্ধ্যায় কালভার্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, সামান্য একটু ফুঁপিয়ে বলেছিল “একবার বাবাকে বলে যা, আমি আর ওদের ছমাস ধরে রাখতে পারবো না, আর কেউ হলে আমি বলতাম না, তুই তো সবার মত নস, তুই তো... তুই তো আমার দলছুট”
আজ আর মনে করতে পার তাকে? প্রিয়া, সুমি এদের পাশে সে? গোলপার্কে গিয়েও ভালো ইংলিশ বলে পারে না, স্মার্ট না, ট্যাটু নেই, ধুস নামটাই মনে আসে না। মরলে হয়তো আসত।
এই আমার ব্ল্যাকফিশ, এই আমার দলছুট, মরবি না, মরাটা হল এসকেপিসম, পালানো, আমি যদি এভাবে বাঁচি, তবে আমার বেডরুমে নীল আলোতে এত বড় জারে আরো আটজনের সাথে তুইও বাঁচবি, প্লীজ বাঁচবি, আজ বড্ড ঘুম পাচ্ছে, কাল অন্তত তোকে আমি খেতে দেব তুই দেখিস।
গুডনাইট দলছুট।
* * *
অনি অনি ওঠ, ইস কি করেছিস ঘরটাকে বমি করে তার উপরেই শুয়ে আছিস? ছিঃ যা গিয়ে পরিষ্কার হ।
ঘুম ভাঙে সুমির ডাকে, কালকের সবুজ সালোয়ারটা আবার চড়ে বসেছে, কাল রাতের আমার দেওয়া আবর্জনা ধুয়ে গেছে শাওয়ারে, চুলে ফিরে এসেছে শ্যাম্পুর ডাক, ঠোটে লিপস্টিকের কৃত্রিমতা। আবার সেই গন্ধটা মোহময়ী করে তুলেছে সুমিকে। আবার ফিরে এসেছে আমার অফিস কলিগ সুমি, কালকের সোফার উপর শুয়ে থাকা সুমিটা হারিয়েছে সালোয়ারের ভিতরে।
সুমি জারটার দিকে দেখে। “ এটা কি গোল্ডফিশ। ও ফেংসুই, তোর বৌ তো হোম মেকার রে, আটটা লাল একটা কালো। ও কালো টা মরে গেছে কাল রাতে, সেই জন্য তোর সুখবর আজ সকালে, তোর বৌকে একটা কিছু কিনে দিস”
জারের দিকে তাকাতেই বুকের মধ্যে নিঃসীম শুন্যতাকে আবার টের পাই।জলের উপরে এখনো নিস্পন্দ ভাবে ভেসে আছে আমার দলছুট। মৃদু জলের স্পন্দনে জীবনের অনুপস্থিতি। নিচে আটটা লাল গোল্ডফিস নিজেদের মত করে জীবনের সুরে নৃত্যরত।
“শোন, বস ফোন করেছিল, আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে টার্মিনেশন লিস্ট বানানোর, সুইটহার্ট ইউ আর অন”
কিছু কানে আসে না, শব্দ, বর্ন, গন্ধ মিলিয়ে গিয়ে ফুটে ওঠে ব্ল্যাক গোল্ডফিসটার মত শরীর। সুমি হাসে অকারনে গায়ে হেলে পড়ে “তুই কি জানিস, কালো গোল্ডফিস মরার মানে হল তোর ব্যাডলাকটাকে শুষে নিয়ে ওটা মরে গেল”।
দলছুট মারা গেল, বেঁচে রইল সাধারন আর সাধারনত্বের চাপে ফসিল হয়ে যাওয়া আমিটা। সে উঠে আসবে, সুমিকে গভীর ভাবে চুমু খাবে, চাকরী করবে, আরো হারিয়ে যাবে জীবনের চোরাবালিতে।
আর সেই দলছুটটাকে ছেড়ে যাব জারের জলে, মৃতদেহের খোলসে।

22 comments:

Unknown said...

দলছুট, দলছুট.... তুমি নিজে পাক্কা দলছুট নেমো। একজন দলছুটের মনোজগত্, তার ফিলজফি, সঙ্গে পাশাপাশি বইয়ে নিয়ে চলা গোল্ডফিশ, গল্পে তার পারম্পর্য্য বা টোটালিটি... আমি বহুদিন বাদে এমন মৌলিক একটা গল্প পেলাম। কত বয়স রে ভাই তোমার? যে দৃঢ বাঁধুনি দিয়ে লেখায় এমন পরিণত ও মনস্ক ছাপ রেখেছ তা'তে আগামী সাহিত্য-দিনে গনগনে সূর্য্য তোমার উঠল বলে।

Asim said...

এক কথায় দারুণ। ছোটর ওপরে এমন লেখা বেশ কঠিন।

nilakash said...

খুব ভাল।

Unknown said...

আচ্ছা নেমো, কি করে এমন মহত্বতা অর্জন করেছ আমায় শেখাবে? তিন-তিনখানা ভাল শুনেও তুমি বুদ্ধের বোধিতে নিরাসক্ত-নিশ্চল্। আমি তো বাপু মন্তব্য পেলে বলার জন্য উসখুস করি, তা সে ভালই হোক্ আর মন্দ।
সত্যি বলছি, অনেক কিছু শেখার আছে তোমাদের কাছে।

চিরঞ্জিত said...

অনেকদিন পরে এলাম, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, তবে শুকনো ভালো হয়েছে এই সাইটটা এত ভর্তি, যে আর নতুন কিছু লাগে না। সমালোচনার অভাব পরিলক্ষিত হয়

Unknown said...

নেমো- আমার মনে হয় ব্যতিক্রম সব ক্ষেত্রেই হয়। কিছু-কিছু পাঠক থাকাটা খুব জরুরী। এই যারা পড়ছে, বলছে... খেয়াল করে দেখ, তারা কিন্তু শুধু পড়ার জন্যই পড়ছে। মৃণালকান্তি, সুচেতনা, আবেশ, অসীম, নীলাকাশ... এরা কোনো পোস্টই দেয়নি, যেখানে নীলাকাশের প্রোফেশনই অথচ লেখা। এটা একটা ভাল লক্ষণ বলে আমার মনে হয়। সেই হিসেবে আমার কাছে বরং যারা পোস্ট দিচ্ছে অথচ পড়ছে না বা পড়লেও বলছে না.... তাদের প্রতি একটা স্পষ্ট অভিব্যক্তি তৈরী হচ্ছে। তার মানে 'মনফসল' পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা ফেলা-ছড়ানো জায়গা নাকি যে লেখা ফেলে চলে যাচ্ছে সব দু-দশদিনের জন্য!!!! নিজের লেখার প্রতিই যদি না আমাদের মায়া থাকে, ভালবাসা থাকে তো অন্যে কেন তাকে ভালবাসবে বল? লেখকের নিজের মনফসলের প্রতি একটা বাসনার ছাপ ঠিকই খুঁজে পাওয়া যায়... যা এখানে খুব কম জনের মধ্যেই আছে। যে নিজের প্রতিই অমোনযোগী, সে যে অন্যের লেখায় আরো অমনোযোগী হবে, বলবে না... এটা জানা হিসেব, এটা আন্ডারস্টুড। আর কিছু না, ঐ 'ভাল হয়েছে' বা 'ঠিক জমল না' লিখলেও অন্ততঃ লেখাটা 'কেউ পড়েছে' এটুকুও ঢের প্রাপ্তি। কেউ কারু সঙ্গে কোনো ইন্টারাকশনেও খুব একটা উত্সুক নন। তা তিনি ভাল মন্তব্য পাক বা না পাক। সুতরাং....

আমি কিন্তু ও'টুকুতেও ধন্য হয়ে যাই রে ভাই। পরবর্তীতে লেখবার মত তাগিদকে অন্তরে অনুভব করি।

আসলে প্রশ্নটা ভাল-মন্দের নয়, প্রশ্নটা সমমনস্ক সবাই মিলে নিজেদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরী করার। সেখানেই মূল সমস্যাটা, সেখানেই কেউ নেই। যে যার মনখেয়ালে আসে, যায়, ইচ্ছে হলে পড়ে, খুব কম বলে। এভাবে অন্ততঃ সমালোচনা করার মতন নিজেদের মধ্যে বাঁধন তৈরী হয়না। সবকিছুর জন্যই সময় দিতে লাগে, সাহচর্য্য নিতে গেলে অপরপক্ষের অনুভবে সাহচর্য্যের বোধকে দিতে লাগে- তাই না? তুমি কি বল? এটার অন্ততঃ উত্তর দিও।

অধরামাধুরী said...

দুরন্ত লেখা !! শেষটা বড় ভাল টেনেছেন!!

চিরঞ্জিত said...

মঞ্জুশ্রীদি
মতবাদের পার্থক্যের অধিকার আমার জন্মগত। আপনার লেখা পরে ‘ভালো হয়েছে’ বা অকারনে ‘অসাধারন’ বললে আপনি লেখার তাগিদ পান আর আমি একটা বিশ্লেষনাত্মক মন্তব্য পেলে ধন্য হয়ে যাই। কেউ কি লেখাটা পরে বলল আপনি গল্পের মাঝে একবার লিখেছেন ব্ল্যাকফিশ, ওটা হবে ব্ল্যাক গোল্ডফিশ।
দ্বিতীয়ত আমি সবার লেখায় মন্তব্য করি না, কেননা আমার মনে হয় ওগুলো ওসবের জন্য না, যেগুলো মনে হয় সেগুলো অবশ্যি করি, তবে নিছক করার জন্য করি না, সেটা বোধ হয় আপনার অনুমেয়।
তৃতীয়ত আমি কতদিন পরে মনফসলে আসব সেটা আমার কাজের চাপের উপর নির্ভরশীল। তার সাথে নিজের লেখার প্রতি অথবা অন্যের লেখার প্রতি আমার মনোযোগের সম্পর্ক অবান্তর।
পরিশেষে বলি আমার কাছে প্রশ্নটা ভালো মন্দেরই – সম্পর্ক তৈরীর নয়। আমি এখানে আসি সাহিত্যের টানে, সম্পর্কের নয়। আর কারো লেখা বোঝার জন্য আমার মনে হয় না তার সাহচর্যের আমার কোন প্রয়োজন আছে। যদি কখনো তার প্রয়োজন পরে তবে জানতে হবে তা প্রশংসা না, পৃষ্ঠপোষকতা।

Unknown said...

নেমো- অবাক লাগল। যে এত সুন্দর লিখতে পারে, সে সুন্দরভাবে সম্পর্ক তৈরীর আবেদনে এ’ভাবে রিএ্যাক্ট করল দেখে। আমার ধারণায় ছিল ভাল তারাই লেখে ভাল মন পড়তে পারে যারা। কিন্তু.....

এনি ওয়ে, আমি মনে হয় কোন দোষারোপ করিনি নেমো যে উত্তর দিতে গিয়ে তোমায় এত সিরিয়াস হতে হল। আর কেন ‘ভাল হয়েছে’ বা ‘জমল না’ শুনেও ধন্য হই, তা’তো আগের মন্তব্যে বলেইছি। এখন সেই মন্তব্য কতটা কারণে কতটা অকারণে, এই বোধটা বোধহয় লেখকমাত্রেই নিজে কিছুটা বোঝে। বিশ্লেষনাত্মক মন্তব্য পাবার বাসনা সবারই, কিন্তু তা দেবার ক্ষমতা ক’জনের আছে? তুমিই বা কোথায়-কাকে করেছ বল? হয়তো বলবে ‘যোগ্য লাগেনি’ তাই..... কিন্তু এখানেই আমার বিপুল আপত্তি, এ’ কথাটা মানতে পারলাম না বলে। ব্যক্তিগতভাবে তুমি সম্পর্ক তৈরীতে অনিচ্ছুক থাকতেই পারো, তা’বলে সাহিত্য ভালবাসা সমমনস্ক মানুষজনের মধ্যে আদানপ্রদানটা কার্যকরী নয়, এটা বোধহয় ঠিক নয়।

যতক্ষণ না ছোট পরিসর থেকে আমরা বড়র পরিধিতে যেতে পারছি, ততক্ষণ অবধি একে অন্যের পৃষ্ঠপোষকতাটা অসম্ভব জরুরী। অনেকের মধ্যেই ছাইচাপা আগুনকে দেখতে পাচ্ছি নেমো্। তার সেই পজিটিভ দিকটার প্রতি নজর দেওয়া ভাল রাদার তার না পারা। তুমি জানবে, অনেকখানি প্রশংসা যদি তাকে একটুখানি এগোতে দেয়, তবে ক্ষুদ্রতম নস্যাত্ভাব তাকে কিন্তু অনেকখানি পিছনে টেনে নেবে- যেটা আমি চাইনা। মানুষের ধর্মই হল প্রশস্তির প্রতি কাঙালপনা। এখন যার লেখায় আমরা মন্তব্য করছি, তার কোথাও কিছু ভাল পাচ্ছি বলেই তো করছি.... আমি চাই সেই জোরের জায়গাটা হাইলাইটেড হোক্ আর মন্দ দিকটা মোলায়েম ও অ-ধ্বংসাত্মক পথে জানানো হোক। খুঁজতে গেলে ক’জনকে পাবে স্পটলেস, নামী থেকে অনামী? চাইলে ক্ষমতা ও ইচ্ছের সহাবস্থানে নস্যাত্ করা কথায় প্রতিটা লেখাকে ডিসকার্ড করা যায়। কিন্তু তাইবলে তা করতে হবে নাকি? কেননা বুঝে গেছি, এতে কিছু প্রাপ্তি নেই বরং প্রাপ্তি জুটবে তাকে মূল্য দিলে। যে পিতলকে সে সোনা ভেবে রোজ যত্ন করে, তা দিনের দিন পালিশ পেতে-পেতে জেল্লাদার হবেই। আর ফেলে রাখলে? কালো- কিষ্টি- কষ্টিপাথর। সুতরাং....

এই এক দোষ আমার্, বলতে বসে থামতে পারিনা। যাই হোক্, তোমার গল্পের মন্তব্যে ভুল করিনি নেমো। আরেকবার পড়ে দেখ, বলেছি গোল্ডফিশ, ব্ল্যাকফিশ নয়। আমি আমার লেখার ব্যাপারে যত্নবান- এটা জানি.... তা মন্তব্য হোক্ বা কবিতা।

আর যদি তোমার লেখা পড়ে কেউ গোল্ডফিশ, ব্ল্যাকফিশ-এর অসামঞ্জস্য খেয়াল না করে থাকে. তার জন্য আমি বাহবা দিই সেই মানুষকে যে ঐ ক্ষুদ্রতার চেয়েও তোমার টোটালিটিকে মূল্য দিল। গল্পের দম তোমার পেশ করার ভঙ্গীমায়, তার সুচারু বুনোটে। ঐ সামান্যতায় তোমার নজর টেনে থুব কি সে বাহবা পেতে পারত?

nilakash said...

মঞ্জুদি- আমি আপনার সঙ্গে একমত। সফলতার দিকে মানুষ যত এগোতে থাকে, ততই সে একা হতে থাকে। লেখক হিসেবে সেই একাকীত্বের সুখ (কিংবা অসুখও হতে পারে) যতক্ষণ না আসছে ততক্ষণ একজন অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগটা পরস্পরের স্বার্থে জরুরী। এতে করে বিভিন্ন মতের দেওয়া নেওয়া হয়, তর্ক বিতর্কের অবকাশ তৈরি হয়, সেইসঙ্গে নিজেদের যাচিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাওযা যায়।
তবে আপনি লিখেছেন- ‘ভাল তারাই লেখে ভাল মন পড়তে পারে যারা।‘ এই জায়গায় আমার সংশয় আছে। যারা সত্যিকারের লেখক, তারা কলম ধরলে চরিত্ররা ঠিকঠাক আচরণ করে। লেখকের ব্যক্তিগত ধারণার তোয়াক্কা করেনা বলেই মনে হয়।

তিতাস বেরা said...

মঞ্জুদি,আমার মনে হয় কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ব্যক্তিগত ভাবে নিমোকে যেহেতু আমি চিনি,এবং সমমনস্ক হওয়ার সুযোগে যতটুকু জানি তার ভিত্তিতে বলি, আমরা কেউ সাহিত্যে নাম যশ প্রার্থী নই,স্রেফ অন্যরকমভাবে লিখতে চাওয়া ও নানান এক্সপেরিমেন্টের জন্যই ব্লগে লেখালেখি। কন্সট্রাক্টিভ ক্রিটিসিজ্‌ম ভীষণ রকম গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে। স্রেফ 'ভালো লাগল'এই শব্দবন্ধটুকু ছাড়িয়ে যদি কেউ আরো একধাপ এগিয়ে বলে,তাহলে আমাদের খুব সুবিধা হয়। সেটি সর্বক্ষেত্রে পাচ্ছি না,তাই বোধহয় একটু হতাশ।
এখন মুশকিল হচ্ছে তুমি ভাবছ যে,মন্দ দিকটা মোলায়েম করে বললে বোধহয় ভালো। কিন্তু আমার আর নিমোর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। কেউ লেখা পড়ে তিক্ত (কিন্তু যথার্থ) মন্তব্য করলে আমরা সেটিকে আমাদের এক্সপেরিমেন্টের গলদ হিসেবেই দেখি। অন্যরকম করে ভাবি। এ বলতে পারো,'নিজেকে সরিয়ে রেখে নিজেকে দেখা'।
ব্যক্তিগত ভালো মন্দ বোধ এখানে অপ্রাসঙ্গিক, তাই খারাপ সমালোচনা (কিন্তু যথাযথ)মোস্ট ওয়েলকাম। আমরা সাংঘাতিক রকম লেখক হতে চাই না,বরং নতুন ধরণের লেখা লিখতে চাই। লেখা পড়ে পাঠক নতুন রকম করে ভাবছে,তর্ক বিতর্ক তৈরী হচ্ছে,এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে।

Unknown said...

এটা একটা ভাল ব্যাপার হল কিন্তু। এই নেমো, তিতাসের মনে সাহিত্য ও বিজ্ঞান নিয়ে তর্কের উদয় ও অধরামাধুরীর প্রতিক্রিয়া বুঝতে গত সাতদিনের নিরিখে ওর পোস্ট জনপ্রিয়তায় সেরার তালিকায়। এর থেকে বাঙালীর চির পরিচিত চেনা ছকের চেহারা ঘোর অস্পষ্ট। তারমানে তর্ক-বিতর্কের আঁচ পোয়াতে, প্রচুর মানুষজন একে পড়ে-পড়ে শীর্ষে নিয়ে তুলল অথচ কারুরই স্বপক্ষে বা বিপক্ষে এককাঁচ্চা শব্দ খরচ করল না। মানে এটাই দাঁড়াল, যে আমরা সবাই চেটেপুটে ‘মতান্তর’-কে খেলাম নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে। বাঙালীর এই ব্যাপারটা কিন্তু আগে ছিলনা। এই বদল মানসিকতার দুনিয়ায় তিতাস বা নেমো, হারানো বাঙালীর ভূমিকাভিনয়ে তোমরা ‘বুঁদির গড়’ রক্ষার শেষ সৈনিক। আসলে কি জান, বাঙালী এখন প্রযুক্তির দৌলতে আন্তর্জাতিক। সামন্যতে তার আর মায়া নেই। আমি জানি, একটা লেখাকে কেন্দ্র করে তর্ক ওঠাটা তার মেরিটের লক্ষণ। অথচ আজকের জন-মানস অনেক বড় ক্যানভাসে নিজের মুখ দেখে। এবার তুমি বল, শুধু দু’জনে চাপানউতোর করে কি কিছু পাওয়া গেল, যাতে করে তুমি বা নেমো বুঝবে হাওয়া মোরগ কি দিক নির্দেশ করছে? কেন বোকার মত জোর করে মরছ? আদানপ্রদান ও সাহচর্য্য এই ব্লগ-বিলাসের একটা অপরিহার্য্য ও অবশ্যম্ভাবী নেচার। তাকে দাঁওতে তুলে সম্পর্ককে কেন নষ্টতে নেওয়া? বিশেষতঃ তোমরা যথন জানই ‘আমরা সাংঘাতিক রকম লেখক হতে চাই না, বরং নতুন ধরণের লেখা লিখতে চাই।‘ ঠিক তোমার নেচারের আমাকে হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আমার চাহিদা হয়তো প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হবার, হয়তো অধরামাধুরীর বা অলোকদার বা অন্য অনেকেরই। তাই শেষ কথা তুমিও বলবে না আমিও না। সবাই আমরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান, তাই বুদ্ধির পাঞ্জা লড়া শুধু অন্যের কাছে মজা জোটানোর জোগানদার হওয়া। তাই হবে? তুমি বিজ্ঞান বোঝ, আমি নাচ, অধরামাধুরী সৃষ্টিশীল বয়ন, এমনি অনেকেই অনেককিছু। তা’বলে তুমি নাচ সংক্রান্ত একটি বাক্যও লিখতে পারবে না বা আমি প্রচুর ভয়ে-ভয়ে বিজ্ঞানের কোন উপমা দেব, এ’ কোন কাজের কথা নয়। জেনে বলাটা জরুরী মেনেও এ’কথা লিখলাম। যার যেটা সাবজেক্ট, তার মত তুখোড় তো হতেই পারবে না আমার পরিবেশনা। শুধু ছুঁয়ে যেতে গিয়েও যদি মনে একশো দ্বিধা চলে, তবে সাহিত্য ছেড়েছুড়ে পালাই মনে হবে।
শেষে আবার বলি, তর্ক ভাল, কিন্তু তা কখনোই নেগেটিভ এ্যাটিচ্যুডের হাত ধরে বা নিজেকে জাহির করার ছদ্মবেশে আসা উচিত্ নয়। ভুল-ঠিক বলায় তোমার সদিচ্ছার ছাপ তোমার আন্তরিক মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠতেই হবে। নয়তো ঐ ‘যতখুশি দাঁড়ি কমা দিন, দশটা ডট, পাঁচটা দাড়ি, চোদ্দটা কমা’... র মত শ্লেষের স্বরই বাজবে সারাক্ষণ। তা’তে করে কি হবে? তুমি ভাল লেখক হয়েও সজ্জন হিসেবে মান্যতা হারাবে, লেখায় পাঠক পেলেও মন্তব্যে পাবে না। কারণ অলরেডী তোমাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি চালু হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং...
আরেকটা কথা, তোমাদের ঐ তিনটে ফুটকির বেড়াজালে আমি ইতিমধ্যেই আটকা পড়েছি। এই মন্তব্য দু’বার মুছে, ঠিকঠাক ফুটকি সেরে- এটা তৃতীয়বারের প্রচেষ্টা।

তিতাস বেরা said...

@মঞ্জুদি,আমার মনে হয় আমি যে বিষয়ে জানি না,সে বিষয়ে লিখতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে পড়াশোনা করে নেওয়া উচিত। নানান ধরণের উপমা নিয়ে লিখতে তো কেউ কাউকে বারণ করেনি,শুধু সে বিষয়ে কেউ ত্রুটি ধরিয়ে দিলে,তা সংশোধনও করে নেওয়া উচিত। লিখতে গিয়ে যদি ভুল হয়, তাহলে সে ভুল সংশোধনের মধ্যে কোন অগৌরবের তো কিছু নেই। আফটার অল, এটা না হলে আর অন্যকে নিজের লেখা পড়ানোর কী মানে?
ধর, যদি আমি নাচ নিয়ে চাট্টি আজেবাজে লিখে তোমার সাথে সমানে তর্ক চালাতুম, তাহলে তুমি কী করতে? এই 'ব্লগ-বিলাস' যদি স্রেফ বিলাসই হয় তাহলে কিছু বলার থাকে না, কিন্তু পারস্পরিক মন্তব্যের আদানপ্রদানের ভিত্তিতে যদি সামগ্রিক সাহিত্যের মানই উঁচু না হল, তাহলে আর কী হল?
খামোখা নিজেকে জাহির করতে যাব কেন মঞ্জুদি? আমার কখানা ল্যাজ গজাবে তাতে? সহজ বাংলা ভাষায় ভুল ঠিক বলে করে যা যা লিখেছি, তাতে যদি আন্তরিকতার ছাপ খুঁজে না পাও তাহলে আমি বলব সেই নির্দিষ্ট পোস্টের মন্তব্য প্রতিমন্তব্যের ধারাটা ভালো করে দেখলেই তো হয়। কোথাও শ্লেষের ধারা খুঁজে পাও যদি তবে তার উৎসমুখটিও দেখো।
ভুল ভুলই মঞ্জুদি। সেটা বলতে বা স্বীকার করতে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। এবং আমার মনে হয় সেই তুলে ধরতে পারাটা 'সজ্জন' হওয়ার অন্যতম মাপকাঠি। 'শনিবারের চিঠি'র মানুষটি সজ্জনই ছিলেন কিন্তু। (স্রেফ উদাহরণ, সমগোত্রীয় হওয়ার বাসনা নয় )
'মানুষের মধ্যে ভীতি'র ব্যাপারটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং। মন্তব্যবিরত পাঠক আরো ইন্টারেস্টিং। তবে আমার কাছে একদমই ইন্টারেস্টিং নয় জনপ্রিয় হওয়ার বাসনা।
যেহেতু স্বভাবসিদ্ধ ডিপ্লোম্যাট নই, তাই নিশ্চিন্ত থাকি যে একটা স্বাভাবিক রেগুলেশন প্রসেস আছে, ফলে আর যাই হোক 'জনপ্রিয়' হতে হবে না।

যাই হোক, তিনটি ডটের জগতে স্বাগতম।

Unknown said...

এই যে হরিহর আত্মারা... জগাই-এর হয়ে মাধাই বলছে, জগাই গেল কোথা? এবার জগাই আসুক। যদিও তাকেই আমার ভয়। একটুতেই এত সিরিয়াস হয়ে যায়...
আরে সম্পর্ক তৈরী করতে দশক চলে যায় আর খোয়াতে? মূহর্ত। আমি এ'কথা বলেছি তা জগাকে জানিও আর জগাই-মাধাই ডাকলাম বলে রেগে যেও না ফ্লীজজজজজজজজজ্।

অধরামাধুরী said...

মঞ্জুশ্রী তোমার অনুরোধে আরেকবার এলাম কিন্তু একবারেই মন থেকে বলছি আমার এখন কাজে ভীষণ চাপ। এতদিন অনুবাদের কাজে ছিলাম এখন Z টিভি থেকে একটা স্ক্রিপ্ট লেখার অফার এসেছে। হয়ত ব্লগে আরো অনিয়মিত হয়ে পড়ব। এখানে তর্ক বিতর্ক প্রচুর হচ্ছে ...হোক......এটা ভাল, এতে জনপ্রিয়তা বাড়ে। অবশেষে একটাই কথা বলে যাই......আমার উপমা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন ভুল নেই। আর এই কথাটা আমি দশটা লোকের কাছ থেকে জেনেই বলছি। তাতে তর্কবাগীশরা মানুক না মানুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।

তিতাস বেরা said...

@দেখো মঞ্জুদি,এটা কার হয়ে কে বলছে তার ব্যাপার নয়। পরিষ্কার ঠিক ভুলের হিসেব,যে কেউ একজন মেলালেই হল। তাই এই সমস্ত কথায় তুমুল বিরক্ত বোধ করছি।

আমি অন্য 'দশ' জনের কথা বলতে পারব না, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নব নব সাহিত্যপ্রতিভার 'উন্মেষশালিনী ধী' দেখে আমি অন্তত চমৎকৃত হচ্ছি। মুশকিল হচ্ছে 'তর্কবাগীশ'/লজিক্যাল লোকেদের আবার পছন্দ গুলো সব উল্টোমতন কী না, তাই কোথাও নাপসন্দ ঘটনা দেখলেই চটপট আসরে নেমে পড়ি।

আসলে ব্যাপারটা কী জানো? পৃথিবীতে 'তর্কবাগীশরা' যেমন আছে, তেমনি উল্টোদিকের লোকজনও তো কম নয়, বরং বেশী। এদিকে সময় কম, তাই 'তর্কবাগীশ' দের হয়ে ফাইটটা যখন যে কেউ লড়তে পারে। অলিখিত চুক্তি বলতে পারো। এখন যদি জানতে চাও এত জোর পাচ্ছ কী করে? উত্তরে বলব, 'দশটা' লোক নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের এই মূহুর্তে সেরা দশজনের একজন, যিনি আমার দীক্ষাগুরু, তাঁর কাছ থেকেই তো কলম শানাতে শিখলুম। ত্রুটিহীন,সোজাসাপটা অথচ খোলনলচে বদলে দেওয়া বাংলার উপর তাই বড় বেশী প্রীতি।

এই উপরের অনুচ্ছেদটি আমার 'মনফসলে' 'জনপ্রিয়' হওয়ার প্রথম ও শেষ প্রয়াস। এরপর শীতঘুমে গেলুম। তোমার মনফসল দীর্ঘজীবী হোক। (জগাই এর ও একই মত

চিরঞ্জিত said...

মঞ্জুশ্রীদি
দু দিন এর মধ্যে বেশ কিছু আলাপ আলোচনা,,,,,(বিঃ দ্রঃ এই কমার প্রয়োগটি এখানে স্বেচ্ছাকৃত ভুল) তর্ক বিতর্ক দেখে খুব খারাপ লাগলো। তিতাসদার কথার সূত্র ধরে বলতে পারি চিরকালই সাহিত্যচর্চার উদ্দেশ্য কিন্তু আপনার/আপনাদের মত প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়া না (হয়তো বলতে পারেন আঙুর ফল টক), বরং লেখা নিয়ে নতুন কিছু ভাবনা, সাহিত্যকে নতুন ভাবে উপস্থাপনার। কিন্তু আপনার এই সাইটে এসে আমি বেশ ধাক্কা খেলাম।
প্রথমত এখানে দেখলাম লোকজনের মতামত হল আগে সম্পর্ক স্থাপিত হোক, পারস্পরিক সাহচর্য বিনিময় হোক, তারপর না হয় সাহিত্য করা যাবে, কিন্তু বিশ্বাস করুন এই ব্যাপারটা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারলাম না, এই নীলাকাশ, অলোকদা, মাধুরী (অধরা), না আমি এদের চিনি, না আমি এদের সাথে কোনরকম সাহচর্যে উন্মুখ। এরা আমার কাছে স্রেফ কিছু ইউসার নেম, যারা মাঝে মাঝে সাহিত্যচর্চা করে। আমি তাদের লেখা পড়বো, ভালোলাগা এবং বিচারের কষ্ঠিপাথরে ঘষে বার করব ভেজালটুকু। যদি ভালো লাগে মুক্ত কন্ঠে চেঁচাব (যেমন করতাম লোটাকম্বলে কিছু কিছু পোষ্টে), না ভালো লাগলে আমার ডাষ্টবিনেও রাখব না – এটুকুই।।।।( বিঃ দ্রঃ এভাবে অনেক দাঁড়ি বাক্যের শেষে বসানো যায় না।)
দ্বিতীয়ত বিজ্ঞানটা আমার চেতনে এবং অবচেতনেও। সুতরাং লেখার মধ্যে যুক্তির ফাঁক আমার সর্বাগ্রে চোখে পড়ে। যেমন আমি যদি বলি “প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে নর্তকীরা কথাকলি নৃত্য করত” সেটা যেমন আপনার কানে আলপিন ফোঁটায় (যদি আপনার মনে হয় আহা নেমো নাচ জানে না বলে নাচের উপমা দেবে না তাহলে আর আমার কিছু বলার নেই, আপনার নর্তকী সত্ত্বার উপর প্রশ্ন তোলা ছাড়া) সেরকম অর্বাচীনের মত জটিলতম পদার্থবিদ্যার উপমা আমায় বড় বিব্রত করে তোলে। তদুপরি সংশোধনের চেষ্টা করতে গিয়ে শুনি আগে আপনি পদার্থবিদ্যাটা আরেকবার ঝালিয়ে নিন। আমার তো জানতে ইচ্ছে করে কে কবে পদার্থবিদ্যা শেষ অধ্যয়ন করেছে? কেননা এই অধম শেষ পড়েছে এই পোষ্টটা লেখার আগে। (আমি অবিশ্যি আমার মত নৃত্যকলায় ক অক্ষর গোমাংস এগারোজন কে কথাকলি সর্ম্পকিত লাইনটা দেখিয়েছি, যদিও প্রত্যেকে বলেছে ঠিক আছে, তাতে এটা প্রমান হয় না আমার উপমা ঠিক। কিন্তু আমার এই ভুলটাতে অনেক যায় আসে কেননা এখনো আমি ভুল তথ্য দেবার আগে তিনবার ভাবি (তিনবারের বেশিও ভাবা যেতে পারে, এটা কমার মত না), পড়াশোনা করে দেখি)।
সুতরাং এখানকার জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে বলব যা জানি না তা এক লাইন ও লিখব না, কিন্তু লেখার মধ্যে একটাও যুক্তির গলদ থাকবে না। কোন উপমা ঠিক হয়েছে কিনা বোঝার জন্য দশজনের কাছে যেতেও হবে না। (ও একটা কথা, পৃথিবীবিখ্যাত এক পদার্থবিদ যিনি কিনা পপুলার সাইন্সেরও একজন বিখ্যাত লেখক এক সেমিনারে আমাদের বলেছিলেন তার জীবনের লক্ষ্য হল লোকের মনে জমে থাকা বিজ্ঞানের ভুল ধারনাগুলো শুধরে দেওয়া। সুতরাং আমি এই কাজের জন্য লজ্জিত নই)
যাই হোক মোদ্দা কথা হলো সাইট আপনার, সংবিধানও তোমার। যেহেতু এই সাইটের উদ্দেশ্য হল সমমনষ্ক মানুষদের মধ্যে সম্পর্কস্থাপন এবং বৃহত্তর পরিসরে না পৌঁছনো অবধি অকারন প্রশংসার মধ্যে দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শন, আমার মনে হয় আমার/আমাদের মত ‘তর্কবাগীশ’ দের এখানে স্থান নেই। সুতরাং আজ বিদায় নিক বিজ্ঞান, হোক সৃষ্টিশীল বয়নের জয়গান।
আপনার মনফসল দীর্ঘজীবি হোক, প্রতি পিক্সেলে পড়ে থাক ফোটনের ভাঙা টুকরো (বিঃ দ্রঃ এই উপমাটি ভুল), আমরা জগাই মাধাই আমাদের ল্যাবের সাদা বোর্ডেই চিত্রিত করি নিজেদের, কেননা এখনো আমাদের বিশ্বাস ভুল বলার চেয়ে নীরবতাই শ্রেয়। অতঃপর নেমে আসুক হিমঘরে শীতঘুম...(দেখুন তিনটে কিন্তু)

Unknown said...

তিতাস, নেমো-
ঠিক হল না, একদমই ঠিক হলো না। কথা বাড়াব না, বুঝলাম... আমি ব্যর্থ।

আল ইমরান said...

এতো গভীর কথার সাথে কোন মন্তব্য করা কি খুব সহজ দিদি??

Unknown said...

কোরনা ইমরান, বোলনা। তুমি তোমার মতন সরল থাক।
জটিলতার পাশাপাশি এমন আহ্লাদি কিছু সরলতা আছে বলেই বোধহয় পৃথিবীটা সুন্দর- ভারসাম্য বজায় থাকে, মনে,ঘরের-কোণে,সমাজে... সর্বত্র।

Asim said...

কদিন আসতে পারিনি, এসে আমি অবাক। এতো একদম ধামাল মাচিয়ে তুলেছ। বিজ্ঞান, ডট, ফোটন, জগাই-মাধাই--- গল্পের আলোচনা কই?

আর নিমোভাইকে বলি, আমি ভাল মন্দের বাইরে খুব একটা আলাদা বলতে পারিনা। ওটা জানালেই হবে মনে হয়েছিল, তাই লিখেছিলাম ভাল লেগেছে। কি করবো, পড়তে ভালবাসি কিন্তু লিখতে পারিনা।

যাক বাবা, আমার মাথা ঘুরছে এখন, গেলাম।

nilakash said...

এত তর্কাতর্কির পরেও আপনার সঙ্গে আমি সহমত মঞ্জুদি। এই ব্লগ মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করার ভূমিকা অনস্বীকার্য্য। প্রথমে আমরা সবাই সম্পর্ক তৈরি করে নিই। সম্পর্ক থাকে বলেই আমরা একে অন্যের লেখা পড়ি, কমেন্ট করি। কেউ তো আর তেমন নামী নয় যে তারটা না পড়লে জীবন ব্যর্থ হবে, বরং সেইসময়টা আমরা জীবনানন্দ, গোর্কি, মঁপাসা, রবীন্দ্রনাথ পড়লে মনে হয় বেশি সাহিত্য পথে থাকতাম। সেসব না করে এই ব্লগে ঘুরে ঘুরে পড়া খানিকটা সাহিত্য কারণে হলেও কিছুটা সম্পর্ক কারণেও।