Saturday, 17 September 2011

মাকে নিয়ে দ্বি-কাব্য

মগ্ন চৈতন্যের সমুদ্র উচ্ছ্বাস

কিভাবে যে বিচূর্ণ হয়েছি আমি মা আমার জানতেন না।
উনি জানতেন এক সত্য: যা ঘরে বসে কর লেখাপড়া।
আমি শামুকের চলা দেখেছি, জানালা গড়িয়ে প্রায় পুকুর দুপুর
নাহার আপার স্নিগ্ধতা মেখেছি ভরা বৃষ্টিতে স্নাত কুয়োর অদূর


মাকে কিছু বলিনি কখনো
দিব্যি ভোরে বিছানা ছেড়ে ছুটে গিয়ে কুড়িয়েছি ফুল
প্রিয় শিউলি অথবা বকুল।
প্রথম যেদিন পাহাড়ে উঠেছি
নিয়েছি ফুসফুসে বাতাস, শৈশব প্রাণে প্রদীপ্ত প্রবাল
দর্পভরে তাকিয়ে চারপাশ
পাহাড় শীর্ষ চূড়ে দাঁড়িয়ে
প্রতিজ্ঞায় শাণিত হয়েছি
দৃষ্টিসীমায় থাকা বাড়িঘর সব হয়ে গেছে ছোট খুব।
ছোট হয়ে গেছে আমার দূরের দোতলা স্কুল স্বরুপ।
আমি আদিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র গর্জনে
পাহাড় ছেড়ে এসে দাঁড়াই
ঢেউ উচ্ছ্বাসে নিমগ্ন হই
ভেসে আসা মার ভৎর্সনায়
সম্বিত ফিরে এলে শুনি
মা ডাকছেন আমায়
স্কুল ঘরের খুব কাছে বসে থেকে ঝিমধরা দাওয়ায়
মগ্ন চৈতন্যের সমুদ্র উচ্ছ্বাস দূরের হাওয়াতে মিলায়।

মাকে আমার
['৭১-র স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরাঙ্গনা জননীদের প্রতি উৎসর্গকৃত
]

মাকে দেখিনি আমি
ভেজা রাস্তার পাড়ে
সদ্য চলে যায় ট্রেন
রেললাইনের ধারে
বুক ঠেকিয়ে তোমার স্তন্যে
অনুভব করেছি মাকে
সে যন্ত্রণায় কত কাতর ছিল
মা হতে আমার চায়নি সে
উত্থিত হয়েছি শূন্যে আমি
উড়েছি স্বপ্নের ডানা মেলে
চুম্বন যে কত করেছি তোমায় ভালবাসা
রতিসুখে উঠেছি মেতে
মাকে আটকে থাকতে দেখেছি পাশের বদ্ধঘর
সে কি সে কি
সে কি আমার আঁতুড় ঘর?
আকাশ মেঘমুক্ত হতে
বৃষ্টি নিষিক্ত হয়েছিল সেবার প্রচুর ঝড়ের পর
গোধূলি শীত বেলায় গাভীন ঘ্রাণ হারিয়েছিল নারী তার
আকাঙ্খায় আপ্লুত হয়ে ভেসে ছিল সম্ভবা
সন্তান কোলে নিতে
তারপর
তরঙ্গহীন সকাল সমুদ্রে
সে চেখে দেখেছে সূর্যরঙ
মন্দা মৃদুর বাতাস জাগিয়েছেও প্রেমভাব
কিন্তু মা আমার আসেনি
এক এক করে শীত পাখিরা উড়ে গেলে
চোখের কোণে পড়েছে গাঢ় কালো দাগ
স্বপ্নে এসে কথা বলে গেছে মা চুপচাপ:
‘একদিন সময় হলে স্নান শেষে
রোদমাখা বিকেলে বেড়িয়ে যাবো এসে’।

10 comments:

Unknown said...

ভাই শামান, লেখা দু'টি থেকে তোমার যে কাব্যিক উদ্ভাস ফুটে উঠেছে, তা'তে তোমারই শিরোনাম ধার করে বলি 'মগ্ন চৈতন্যের সমুদ্র উচ্ছ্বাস।' তবু বলার আছে। প্রথম কবিতা পড়ে মনে হল তোমার অন্তরকথা অনেক বেশী স্পষ্ট ও সাবলীল যা দ্বিতীয়টিতে অমিল। হয়তো স্পষ্ট, হয়তো অনবদ্য আন্তরিকতায়, তবু কেন জানিনা পাঠক হিসেবে মনে প্রশ্ন এল, একটু সোজা পথের চেনা ছন্দে আছো লাগল।

অবশ্য শেষকালে কোটেশনের মধ্যবর্তী অংশ, অর্থাত যেখানে লিখছ-

স্বপ্নে এসে কথা বলে গেছে মা চুপচাপ: /‘একদিন সময় হলে স্নান শেষে / রোদমাখা বিকেলে বেড়িয়ে যাবো এসে’-

বলতেই হবে- সেথানে এসে মন ভাল হয়ে গেল।

শামান সাত্ত্বিক said...

মঞ্জুদি, তোমার মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগলো। আজকাল আসলে ব্লগিং থেকে অনেকটা দূরে। তাই আসা কম হচ্ছে, পড়াও কম হচ্ছে।

তোমার এখানে মন্তব্যের শেষাংশটা আমাকে একটু ভাবালো। আরেকটু বুঝতে পারলে ভাল হতো। বিশেষ করে, এখান থেকে শুরু করে শেষ অবধি: "......তবু কেন জানিনা পাঠক হিসেবে মনে প্রশ্ন এল, একটু সোজা পথের চেনা ছন্দে আছো লাগল। ......

বলতেই হবে - সেখানে এসে মন ভাল হয়ে গেল।"

মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ইদানীং। তোমাদের লেখাও পড়বো আস্তে আস্তে। ভাল থেকো।

chandan roy choudhury said...

কবিতাগুচ্ছের দুটোই বেশ ভাল। তবে আপনার আগের কবিতাগুচ্ছের লেখাদুটো আমার কাছে বেশী মনোগ্রাহী লেগেছিল। যদিও দুটোর দুধরণের থিম, পরিবেশনার আলাদা ভঙ্গীমা, তবু বললাম শামানভাই, কিছু মনে করবেন না।

Unknown said...

আসলে তোমার দোষ নয় শামান, বোঝাতে আমি পারিনি। যেটা বলতে চেয়েছি, তা হল- যে বিমূর্তায় আগের কবিতাটি এঁকেছে, সেটি তোমার দ্বিতীয়টিতে অনুপস্থিত। না হতেও পারে, এ'টি আমার অনুভব। একটু যেন আলগোছের ছুঁয়ে থাকা বিমূর্ততার ছায়া।

আল ইমরান said...

সোজা বাংলায় বলি, ভালো লেগেছে।

Asim said...

'কিভাবে যে বিচূর্ণ হয়েছি আমি' - জানতেন, আমার মা জানতেন। ঠেকাতে পারেননি, যাই হোক্, কবিতা দুটোই ভাল লাগল।

শামান সাত্ত্বিক said...

chandan roy choudhury, কিছু মনে করার নেই একেবারে। বরং আপনাদের মন্তব্য আমাকে ঋদ্ধ করে। আগের কবিতাগুচ্ছে আমার কিন্তু তিনটি কবিতা ছিল। আপনি পড়ে খোলাখুলি মতামত জানিয়েছেন, এটাই বড় পাওয়া।

দেরীতে উত্তরের জন্য দুঃখিত। ব্যস্ততা।

শামান সাত্ত্বিক said...

ঠিক আছে মঞ্জুদি। তোমার বোঝানোর কোন সমস্যা নয়। আমি আরেকটু বুঝতে চেয়েছিলাম কি না। এমন তো হতেই পারে। তবে আবারও যে বুঝিয়ে বললে, তার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থেকো।

শামান সাত্ত্বিক said...

আল ইমরান, আপনার ভাল লাগা আমাকে অনুপ্রাণিত করুক। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

শামান সাত্ত্বিক said...

হাঁ অসীমদা, আপনার মন্তব্য ভাল লাগলো। ধন্যবাদ কবিতা পাঠের জন্য। ভাল থাকবেন।