'সাপ্তাহিক বর্তমান' পত্রিকায় প্রকাশিত ০৬.০৩.২০১০
পূর্ণপ্রজ্ঞা
মঞ্জুশ্রী
রায়চৌধুরী (1)
গরমে বেশ
হাঁসফাঁস দশা। এই শেষ বোশেখের আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালী ধরণে অস্বস্তি বাড়ছে। ধূলোমেঘের
লালচে আভাস নিযে থমকে আছে আকাশ। কখনো হাওয়া চলছে জোরে অথচ বৃষ্টির দেখা নেই। পূর্ণা
বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। রাত এখন দুটো। সদ্য
কেনা এই ফ্ল্যাটটা ওর ভারী পছন্দের। নাম দিয়েছে ‘অবশেষে।’
খুঁজে-খুঁজে দেখাশোনা চালাতে-চালাতে হযরান ওরা যখন আশা ছেড়ে
দিযেছে, প্রায় তখনই এটা পেল। আর রেজিস্ট্রী হল যেদিন, সেইদিন সৌভিক ঘরে ঢুকেই ধপাস
করে বসে পড়ে লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললো- ‘উঃ, অ-ব-শে-ষে...’ ব্যস্, পূর্ণার মনে
বাড়ীর নাম স্থির হয়ে গেল-‘অবশেষে।’ কত
দিন ধরে ওরা বাড়ী-বাড়ী করে যে পাগলের মত ঘুরেছে। যদিও এই ফ্ল্যাট কিনতে গিযে
পেরোতে হল টালবাহনার অনেক এঁদো গলি, তবু তো হল। আসলে সৌভিক চেয়েছিল খরচা করছি যদি,
তবে শহরের হার্টের কাছে না হলেও লান্সের কাছে থাকি এ্যাটলিস্ট। আবার পূর্ণারও
সেই একই যুক্তি। এত পয়সা যাচ্ছেই যদি তবে সারাদিনের শেষে কেন না একটু প্রকৃতির
কাছে এসে দাঁড়াই। নাগরিক সুবিধেও থাকবে আবার গাছ, পাখী, নির্জনতা... যদিও এ
জাযগাটা খুব তেমন নয়, তবুও এখানে একটা অন্যধাঁচের ভালো লাগায় পূর্ণা
মুগ্ধ হযেছিল। মনের ওপর ভাস্কর্য
উপভোগের তৃপ্তি একদম জড়িয়ে-মড়িয়ে সাপ্টে নিযেছিল ওকে। শিল্পীর আঁকা তুলিতে সেজে
একটা ফ্লাইওভার, অসম্ভব এ্যাট্রাকটিভ ওয়েতে হাল্কা
লিফ্ট নিয়ে উধাও হয়েছে বাঁদিক থেকে ডানদিকে, কমপ্লেক্সের
মাত্র শ-দুয়েক ফুট দূর দিযে। আর ওটাই
প্রতিপার্শ্বকে একটা এলিগ্যান্ট লুক দিয়ে দিযেছে এমন ষেন
ওটা কংক্রিটের নয়, নমনীয মোম বা মাটীর কোনো আর্টওয়ার্ক। কত সুন্দর এর
খাঁজ-ভাঁজ-বাঁক। আবার রাতে যখন স্ট্রীটল্যম্পগুলো জ্বলে
বা দূর থেকে আলোজ্বলা মুখে গুনগুন গানে গাড়ীগুলো ছুটে যায়, তখন ঐ গতির সঙ্গে পূর্ণাও
কিভাবে যেন জুড়ে যায়। একটা গাড়ী গেল, তারপর পরের গাড়ী, পরের
গাড়ী... এমনি একটা অপেক্ষা-অপেক্ষা খেলা চলে আনমনে। এ খেলার মজায় ওর
গড়িয়ে যায় সময়। ভাবে আসবে না, এখানে বসবে না, তবু এক অন্য মুখরতা, অন্য এই পাওয়া
থেকে সরাতেও পারেনা নিজেকে। সারাদিনের অফিসক্লান্ত দিনের শেষে এই বারান্দা, এই পুল
কত কথা নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে ওর জন্য। বাড়ী ফিরেই
ঢোলকা হাইসকোটটা গায়ে গলিয়ে পূর্ণা সোজা এখানে এসে আগে দু-দন্ড দাঁড়ায়, তারপর
অন্যকাজ, তারপর চা-পেপার-সৌভিক...
কিন্তু আজকের
দিনটা আলাদা। সৌভিক ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরেছে। ও যে
হাল্কাফুল্কা আছে তা জানান দিচ্ছে রেকর্ডারে বাজতে থাকা গান। ওর ঘরে গান চলছে জোর।
এখনকার সিচ্যুয়েশনটার সঙ্গে একটু আগের সময়টার কত তফাত্। কোনো ব্যাখ্যা নেই এর।
সন্ধ্যেয় সৌভিক যখন ফিরলো, পূর্ণা দরজা খুলে হাত বাড়িয়েছিল ব্যাগটা নিতে। কিন্তু
পাশ কাটিয়ে সৌভিক ঢুকতে-ঢুকতে বললো- ‘না, না, ঠিক
আছে... আজ রাতে পার্টী আছে না?
একষ্ট্রা চাবীটা সঙ্গে নিয়ে বেড়োলে ভাল। আমি থাকছি
না। So…’
কি সাবলীল
ভঙ্গীমায় অবহেলার উচ্চারণ সৌভিকের। পূর্ণা তাকিযে থাকলো কিছুক্ষণ। মনে করার চেষ্টা
করলো এই ভাববাচ্যে বলাটা ও কন্টিন্যু করছে কদ্দিন। হ্যাঁ,
তা প্রায় মাস সাতেক হল বোধহয়। যে ‘অবশেষে’
পূর্ণার সুখ, স্বপ্ন, আগামী দিন, সেখানে ঢোকার মাস পাঁচেক পর থেকেই এমনি করে
সম্পর্কের অবশেষে এসে ঠেকতে হবে তা বোঝেনি ও।
পার্টীতে আজ
ইনভিটেশন পূর্ণার। নিকি-র পোস্ট হাই হয়েছে, তাই একটা
পার্টী দিচ্ছে হায়াত-এ। ভেবেছিল আজ সৌভিক
আসছে.....যাবে না। সেইমত জোরদার মিথ্যে সাজিয়ে ভিনিত-কে ফোনও করে দিযেছিল। যে
শাড়ী-সাজে পূর্ণাকে দেখতে চেয়ে সৌভিক আবদার করতো প্রায়ই, সেই ওর দেওয়া শাড়ীটাই
আজ পরেছিল পূর্ণা, অথচ...
নাঃ,
আর ভাববে না, ভাবার দরকার নেই। যা যাচ্ছে তা যাক।
এই মূহুর্তেই স্থির করে নিল- ও যাবেই। পূর্ণা ঘরে ঢুকে দরজা দিল, আলমারী থেকে
লাইক্রা মেটিরিযালের ফ্লোযিং লং স্কার্টটা বার করল। ম্যাচিং জুতোই এর সঙ্গে
একমাত্র খাপ খায় ভেবে 16 জোড়ার থেকে বাছাই করে এক সেট পরলো ও দরজা খুলে বাইরে এলো
যখন, তখন পাশের ঘরে গানের আওয়াজ আর নেই। ঘরের
হাল্কা সবুজ আলোটা জ্বলছে। সৌভিককে দেখা যাচ্ছে না, হয়তো শুয়েছে। যা খুশী হোক।
ভাববে না, আর ভাববে না ও। সৌভিকমুক্ত মন চাই পূর্ণার। না
হলে আর যোঝা যাচ্ছে না। হ্যাঙ্গার থেকে ডুপ্লিকেট চাবীটা নিয়ে পূর্ণা বাইরের দরজার
ল্যাচে হাত রাখলো।
(2)
পূর্ণা। কি
সুন্দর নাম আনুর। মাঝেমাঝে মনে হয, নামের প্রতি জাস্টিফিকেশনকে মজবুত করতেই কি ও
এমন? সৌভিক বলত-‘এত
তুমি মনে রাখো কি করে? এটা রাখছো, সেটা গোছাচ্ছো, কি নেই তা আনাচ্ছো... আনু,
আনু, একলা আমার কাছে একলা তুমি আনু। পূর্ণা থাকো তুমি অন্য সকলের কাছে।’
সৌভিকের আজও
মনে পড়ে, যখন আনুর সঙ্গে আলাপ হল কলেজে, তখন ১০ জনের মধ্যে থেকে কি অসামান্য
দক্ষতায় ও মন কেড়েছিল। সবাই কলকল করে কথা বলছে, ব্যস্ত নিজেকে
জাহির করছে, অথচ আনু সোবার, ইন্টেলীজেন্ট, হাস্যোজ্বল... একদম পরী যেন। যা
বলত, যা করত, তাই ওর চেতনা-বুদ্ধির রাস্তা পেরিয়ে নামত। উচ্ছ্বলতাকে ডিগনিটির সাথে
হ্যান্ডল করতে কতবার যে দেখেছে ওকে। তেমনি
কেয়ারীং-ও। একবার তো ছ-সাতজন বন্ধু মিলে ওরা হাঁটছিল, রূপম্-এর জামায় দিল কাকে পটী
করে। ছিল
সবাই, কিন্তু আনুই সঙ্গেসঙ্গে নিজের রুমাল ভিজিয়ে এনে ওর জামা খুলে মুছে দিয়ে তবে
শান্তি। কোনো বন্ধুর ম্যাগাজিনে ছবি বেড়িযেছে, আনু পয়সা খরচ করে কিনে এনে হৈ-চৈ
জুড়ে দিল। য়েন ওটা ওর নিজের এ্যাচিভমেন্ট, নিজের ছবি। পিকনিকে
গিযে কোমর বেঁধে রাঁধতে বসল একাই। সবাই ওর রান্নায়
মুগ্ধ, আর সৌভিকের তো কথাই নেই, কতবার যে একথা বলেছে ওকে। ‘কিন্তু
এখানে কেন আনু? বাকীরা কেমন এনজয় করছে দেখ... হাল্কা-ফুল্কা
ভাসছে...’।‘আমিও
তো ভাসছি, তুমি যে আছ...’ সৌভিকের প্রশ্নের
উত্তরে আনুর যুক্তিতে কথা থেমেছিল ওর। সারাক্ষণ একটা গোধুলীর আলোর মতন ঠোঁটজুড়ে
হাসি ওর ঝুলেই থাকতো। কি যে মন ভাল করে দেওয়া গেছে সে’সব
দিন। বাড়ী
ছেড়ে, মাযের মনোযোগ ছেড়ে, মফস্বলের শান্ত জীবন ছেড়ে এখানের পেয়িংগেস্ট-জীবনকে
বওয়া যাচ্ছিল শুধু আনু ছিল বলে। বালিশের ওয়্যার
তেলচিটে? একদিন দেখল বিছানার চাদর, ওয়্যার, মায় কুশনকভার সুদ্ধু একই ডিজাইনে
সাজুগুজু করে বসে আছে, যেন ব্যাচেলার্স রুম নয় কোন তিন তারা
হোটেলের ঘর। ভাঁড়ারে কী নেই কী আছে, ওয়ার্ড্রোবে কত কী জামা-প্যান্ট তার ম্যাচিং
টাই, তা ধীর-ধীরে ভুলে যেতে থাকলো সৌভিক। ওকে ভাল দেখতে চাওযার ইচ্ছেগুলো নিয়ে
অন্তরীক্ষ থেকে কোনো এক পরী ভরে রাখতো সবকিছু। নিশ্চুপে, মমতায়।
ঠিক... মমতায়,
ভালবাসায় নয় বোধহয়। তা যদি হত তবে এভাবে ওকে পারতো অগ্রাহ্য
করতে, কথা না শুনতে? বিশালদের পার্টীতে কি সুচারু দক্ষতায় সেদিন নাচলো আনু ভ্রমরের
সঙ্গে। আনু জানে ও এসব পছন্দ করে না। তবু...
যে আনু
অভাবগুলো বুঝতে না দিয়ে নিশ্চুপে গুছিয়ে দিত
সব, আজ সে তীব্র মুখর। প্রতিটা কাজ ও আজ জানান দিয়ে করে। সঙ্গে আবার প্রচ্ছন্নভাবে
জড়িয়ে থাকে তাচ্ছিল্য-কাঁটার বিষ। তা ভয়ানক, তা অসহ্য। ওর জোর, জেদ, বুদ্ধি সবই
সৌভিকের চেযে যেন কয়েক যোজন এগিযে নিয়ে ও জন্মেছে। আনু বোঝেইনি- যা সৌভিক মেনেছে,
মানিয়েছে, ছেড়েছে, তার সবটা ওকে ভালবেসে, প্রশ্রয়ে। সৌভিক কি-কি পারে না তাই ধীরে
মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, কি পারে তা ছেড়ে। অথচ সৌভিকের ভালবাসায তো কোনো শর্ত
ছিলনা। বিয়ের পর থেকে খুব দ্রুততার সঙ্গে আনু বিয়েটাকেই চ্যালেঞ্জ করতে-করতে
চলেছে। অফিসের কাছাকাছি থাকলে সময় বাঁচবে, অর্থ বাঁচবে ও সবচেয়ে বড় ড্রাইভিং করার
ঝক্কি বাঁচবে ভেবে যখন লেকগার্ডেন্সের ফ্ল্যাটটা কিনতে মনস্থ করলো, তখন আনুর তা
পছন্দ হল না। ওর পছন্দের গাড়ীর রং আনুর পছন্দ নয়, লাল রং নাকি চাইল্ডিস। আনুকে
প্রেজেন্ট করা ওর শাড়ী আউটডেটেড। ওর ইনট্রোভার্ট ধরণ, ওর অগোছালো ইনোসেন্সী, ওর
পছন্দের খাদ্যতালিকা- সব নিয়ে আনু ভীষণ রকম সরব। মানুষের চেহারায় যেন প্রাণী একটা
ও। অফিস ফেরত্ দূর সাউথ ক্যালকাটা থেকে উল্টোডাঙার মোড়, বাগুইআটী, কেষ্টপুরের
মোড়ের জ্যাম পেরিয়ে গাড়ী চালিয়ে আসা যে কি
অপরিমেয যন্ত্রণার তার আন্দাজটুকুও আনুকে দিতে পারলো না কখনো। হাসিখুশী আনুর পরী-পানা
মুখ আজকাল বাদল মেঘে ছাওয়া- সারাক্ষণ।
সেই আনুকে আজ
সত্যিই পরীর মত লাগছিল। দরজা খুলে যখন হাত বাড়ালো, তখন দেখেছিল
আনু ওর দেওয়া সেই শাড়ীটা পরে আছে। ঘরোয়া, মিষ্টি, শান্ত, কেয়ারিং সেই পুরনো,
হারানো মেয়েটা- আবার। অথচ কি যে হল ওর নিজের...। পুরনো
দিনের মন উবজে উঠতেই যত রাজ্যের অভিমান ফের উজিযে এলো কোত্থেকে। ওর হাত সরিয়ে
নিজেই ঢুকল ঘরে, আহ্লাদের বদলে আঘাত দিল। অথচ এতদিনের চেনার পরেও আনু কেন বুঝল না?
আনুর কথা ভাবে বলেই না ওর মনে ছিল আজ আনুর পার্টী, আনু ভালবাসে হাসতে, মজা করতে,
নাচতে। ওকে ধাক্কা দিয়ে সৌভিক যা কিছু করে, তা চতুর্গুণ ধাক্কা হযে ওর নিজের কাছে
ফেরে।
বাইরের আচরণের নীচে চুপিসাড়ে কাঁদা ওর এই কষ্ট তো দেখতে পায়না
আনু। কেন? কারণ ভালবাসবার একটা সেটপীস্ ও সাজিয়ে রেখেছে মনে এবং সেইমত আনু চলে,
চালাতে চায়। এ আরেক অসম্ভবের গান, আরেক অন্য তিতকুটে স্বাদ- জীবনের। হার, হার।
সবক্ষেত্রে গো-হারান হারই এখন নিয়তির মত পিছু নিয়েছে ওর। অন্তরে
নিরন্তর কান্নার শব্দ আজ মুখর হতে চায়। তাও কী পারে, তাও কী পারলো সৌভিক- সেইভাবে?
(3)
বাইরে
বেড়িয়েই একটা অটো নিল পূর্ণা। চলে গেল সোজা বাস
টার্মিনাস। ওখানে য়ে বাসটা গড়িয়া হয়ে বারুইপুর
যাবে তার একটা মনমত সীটে বসলো। ফাঁকা বাস। সবে
দু’একজন
করে উঠছে, কেউ এদিক-ওদিক দেখে আবার নেমেও যাচ্ছে। অতিরিক্ত ফাঁকায় অতিরিক্ত
দিশাহারা আর কি। এই বাস না অন্য বাস না ঐ সীট এই
টানাপোড়েনের সব মানুষজন। শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে ও- আলগোছে ঘটনার
স্রোত বয়ে যায়। মন শুধু সাপ্টেজাপ্টে এখন ছুঁয়ে আছে
নিজেকে। মিনিট 10 বাদে গাড়ী ছাড়লো যখন, তখন এতই আনমনা ছিল, যে হুঁস ফিরলো
কন্ডাক্টরের ডাকে। গাড়ীর লাস্ট স্টপেজ অবধি একটা টিকিট কাটল পূর্ণা। ব্যস্, কেটে
গেল রেশ। অতলান্ত শূন্যতাবোধের মজায আর থাকা গেল না। বেরসিক কন্ডাকটর দিল ধ্যানীর
ধ্যান ভাঙিয়ে। বাসের ভিতরের এই য়ে নির্দিষ্ট ডেস্টিনেশনে যাবার মানুষজন, এ’সবের
দিকে মন যেতেই ওর উথলে, উপছে গেল আবেগ- কান্নায়, যন্ত্রণায়, ধিক্কারে। এতগুলো
মানুষের মধ্যে একমাত্র ওই দিশাহীন, উপায়হীন, গন্তব্যহীন নৌক? যাকে ভালবেসে পড়াশোনা
ছাড়ল, সহয়োগ দেবার তীব্র চাওয়া নিয়ে চাকরীতে ঢুকলো সে আজ এমন? সৌভিকের
উচ্চাকাঙ্খাকে উচ্চাসন দেবে বলে লোন নিযেছিল অফিস থেকে, আজও যা শুধছে পূর্ণা।
সৌভিককে খুশী করতে পূর্ণা ছেড়েছে বেঁচে থাকবার নিজস্ব ছন্দ। আনন্দমাখা
হাসিখুশী ঢঙে ও যেভাবে ছিল এতকাল, তা সৌভিকের অন্তর্মুখী স্বভাবের কাছে অতি
প্রগলভ, হাল্কা, অপছন্দের। তাই হাসি ছেড়ে দেঁতোহাসি শিখেছে, নাচ ছেড়ে ভান
শিখেছে। অথচ এই সেদিনের পার্টীর পরেও সৌভিক...।
আজকাল ও নাচেনা, হাই-হ্যালো-তেই
থেমে যায়, কিন্তু ‘বিশাল’তো
আলাদা। বিশাল সৌভিকের খুড়তুতো ভাই, তাছাড়া পার্টীটাও পারিবারিক। সে জানে পূর্ণা
ভাল নাচে। তাই পার্টীতে যখন হাত ধরে ওকে ডান্সফ্লোরে নিয়ে গেল, তখন বহুদিনের
অবদমনের পরে পূর্ণা মনপ্রাণ খুলে নেচেছিল। বিশাল, ভ্রমর, সেঁজুতি, অনন্য- সব্বার
সঙ্গে... চুটিয়ে। কিন্তু বাড়ী ফিরে সৌভিকের অফ মুড আর
অনুয়োগের সামনে পড়ে হতচকিত পূর্ণা খুঁজেছিল- এ কোনজন? এই নাচের জন্যেই ওকে যে
প্রশংসায় ভরিয়ে রাখতো- সে? এ কি সৌভিকের
কন্ফিউশন, জেলাসী না ওনসেল্ফ-এর ওপর থেকে উঠে যাওয়া বিশ্বাস? জানেনা। আজ
কিচ্ছুর উত্তর খুঁজে পায় না পূর্ণা। ও প্রিয কতকিছু ছাড়ল কারণ সৌভিক ছাড়া সারা
বিশ্ব ওর শূন্য ছিল বলে। অথচ সৌভিক? নিজের কাজ, পড়াশোনা,
চাহিদা, স্বার্থ ও তৃপ্তির বাইরে কি একবারও তাকালো চোখ তুলে? জানতে কি চাইলো কখনো-
এই ত্যাগ পূর্ণার জীবন থেকে কত কী মণিমুক্তো গড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। অবশ্য
কেন জানবে?
সে বোধের জাযগাটা তো পূর্ণাই তৈরী হতে দেয়নি কখনো। অভাববোধের আগেই সাপ্লাই নিয়ে ও
হুজুরে হাজির থেকেছে সমস্তক্ষণ। চাইবার আগেই ও
পেতে-পেতে ভুলেই গেল দিতেও কিছু হয় বলে। সৌভিক চায়নি বলে আজও পূর্ণা সন্তানহীন।
সৌভিকের সারাটা সময শুধু হিসেব কষেকষে জীবনকে যাপন। এই
বয়সে গাড়ী, ঐ বয়সে বাড়ী, তার ই.এম.আই, তারপর সিঙ্গাপুর, তারপর...
জীবনের
প্রতি বাঁকে য়ে আর্ট, বাঁধনের মধ্যেও যে বিপুল সম্ভাবনার ইঙ্গিত, তাকে ছোট্ কক্ষে
ভরতে চেয়েছে হরদম। জীবন ছাড়বে কেন? শোধ তাই এমনি করে সে তুলছে। ক্ষুদ্রতার
গন্ডীতে আচমন সেরে বিশালত্বকে বরণ করা যায়না। এত তাড়াতাড়ি তাই ক্যানভাসে উল্টে
গেল রং।
একা পূর্ণার সাধ্য কি য়ে সবটা মোছে?
: দিদি,
আপনি কি নামবেন?
ফের
কন্ডাক্টরের ডাক মনস্ক করলো ওকে।
:
হ্যাঁ ভাই, এসে গেছে?
: অনেকক্ষণ। আপনি
ঘুমিয়ে পড়েননি অথচ নামছেন না দেখে ভাবলাম কি জানি...।
: না,
আসলে শরীরটা হঠাত্ খারাপ লাগছিল।
:
আপনি বসুন না, সুস্থ হলে নামবেন।
:
না, না ঠিক আছে।
অচেনা
বারুইপুরের আধা মফস্বলী জায়গায় নেমে পড়লো পূর্ণা।
নাঃ। এ
ভাল লাগছে না। বোকার মত এদিক-ওদিক তাকানো আর উদ্দেশ্যহীন ঘুরঘুর...
একটা
কুকুরও বুঝতে পারে অসহায় এই অবস্থাটা। তাছাড়া রাস্তার
মানুষজন ওকে দেখছে তা ও বুঝতে পারল বেশ। এই রাত দুপুরে পয়েন্টেড হিল জুতো, পার্টী
ওয়্যার, সফিস্টিকেটেড লুক... না না, ঠিক হচ্ছে না। এই প্রথম ও ফিল করল চেনা
দুঃখ, চেনা বারান্দা, চেনা ঘর, মানুষ এ’সব অনেক বেটার এই
অজানা-অচেনা অনুষঙ্গের চেয়ে। ও তাড়াতাড়ি ফিরে এল বাসে। কন্ডাকটারকে উপযাচক হয়ে
বললো-
:
শরীরটা আবার খারপ লাগছে ভাই, আমি ফিরবো।
:
আমি তখনই বুঝেছিলাম, বসুন দিদি বসুন।
ইতিমধ্যে
ওর সীটে একজন বসে গেছে। কন্ডাক্টর তাকে অন্য জায়গায় বসিয়ে ওকে সেই পুরনো সীটেই
ব্যবস্থা করে দিল। অকারণ এই মিথ্যে বাহানার ব্যাপারটা পূর্ণার খারাপ লাগলো খুব। কিন্তু
উপায়ও নেই। ধরা দেওয়া যাবে না যে।
(4)
রাত
দুটো এখন। পূর্ণা ১২ টার মধ্যেই ফিরতে পেরেছিল। ওটা লাস্ট বাস ছিল
বলে লোকজন কম, তায় আবার উল্টোডাঙার পর ফাঁকা রাস্তা পেযে গাড়ী হ1ওয়ার বেগে
দৌড়েছে। সারাদিনের না খাওয়া বেশ জানান দিচ্ছিল মাথা টালমাটাল করে। বাস থেকে নেমেই
তাই ব্যাগে রাখা বিস্কুট খেতেখেতে লিফ্টে উঠে যখন ল্যাচের হাতল ঘোরালো, তখন ফের
মনে ধোঁয়ার উদয় হতে দেরী লাগলো না। এই রাত অবধি ও বাড়ীতে নেই, অথচ এতই নির্বিকার
সৌভিক? একটা ফোনও তো করেনি। মিউজিক রুম এখন শান্ত। না ক্লাসিকাল না কমার্শিয়াল সাড়া।
গুনগুন করে শুধু এসির শব্দ জানান দিচ্ছে ওর উপস্থিতি। এমন অনভিপ্রেত হয়ে ঘরে
ঢোকায়, রাজ্যের অসম্মান যেন জড়িয়ে গেল গায়। বাথটাবটা জলে ভরে প্রায ঘন্টাখানেক
শুয়ে থাকল, মন তবু অশান্ত। কিছু চায়, কারুকে চায়, কারুর জন্য বাঁচে মানুষ। সেইটা
নেই? সত্যি নেই? ও নিজে তো এমন করে শুন্যতায় য়েতে পারেনি? ফিরে এসে তাই আগেই
দেখেছিল সৌভিক খেয়েছে কিনা। আজ সৌভিক ফিরবে বলে ওর পছন্দসই রান্না করেছিল,শাড়ী
পরেছিল, পার্টী ক্যানসেল করে ভেবেছিল... ভেবেছিল অনেককিছুই যা এখন ভাবতে ভাল
লাগছে না। নিজেকে বোকা মনে হচ্ছে। বারান্দার আলোটা নেভালো পূর্ণা,
মোড়া নিয়ে এসে বসলো থামের পাশঘেঁষে, রাস্তা থেকে আসা তেরছা আলোকে আড়াল করে।
নাহলে পরের দিন আবার কৌতুহলী কোনো প্রতিবেশীর নাক গলানোর কৈফিয়ত দিতে গিয়ে হয়তো
ভদ্র থাকা যাবে না। দরকার কি? তার চেয়ে...
(5)
রাত
11-টা পেরোতেই অস্থির লাগলো সৌভিকের। ঝড়ো হাওযার দাপটে নানান কিছু পড়ছে এদিক-ওদিক... তার শব্দ আসছে মাঝেমাঝে। খুব
অবাক লাগছে এবার। এতটাই কেয়ারফ্রী, এতটাই অবহেলার এ্যাটিচ্যুড্, য়ে এখনো একটা ফোন
নেই? ও বিরক্ত ছিল, ভুল করেছে এটা ঠিক, তা’বলে আনু বুঝবে
না? বিয়ের আগের বছরগুলো আর বিযের পরের এই পাঁচটা বছর তো কম নয়! ওকে তো আজ নতুন
চিনছে না। তবে? কেন বুঝবে না?
মনে
পড়ে একবার সিনেমার টিকিট কেটে ‘89’-এ অপেক্ষা করছিল আনু। সৌভিকের
দেরী হচ্ছিল পৌঁছতে। ফোনে যোগাযোগ রাখছিল, জানাচ্ছিল রাস্তায় জ্যামের কথা...।
তবু এসে পৌঁছনোর পর, আনুর শরীরীবিভঙ্গ উচ্চরবে ক্ষোভের যে বিবরণ দিচ্ছিল, তা ভাল
লাগেনি ওর। তাও হুড়োতাড়া করে ভেতরে যাচ্ছিল ওরা। আনু বলল, ‘আধঘন্টা আগে শুরু হযে যাওয়া ছবি... কি হবে আর... কিই বা বুঝবো...
একটু আগে বেড়লেই যদি...’ সৌভিক শেষ হতে দেয়নি কথা। ওর
হাত থেকে টিকিট দুটো নিয়ে ছিঁড়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল ’সত্যি তো কি হবে দেখে? আমার প্রবলেমের চেযে সিনেমাটা তো বেশী
ইম্পর্টান্ট... কি দরকার... এভাবে?’ বলেই উল্টোদিকের
বাস ধরে সোজা নিজের বাড়ী। কীহোলে চাবী ঢুকিযে তখনো তালাটা খোলা হয়নি, দেখলো আনু
ট্যাক্সি থেকে নেমে ছুটতে-ছুটতে ওপরে আসছে। সৌভিকের আজও কানে বাজে আনুর সেদিনের
অনুতাপের স্বর, আনুর ক্ষমা চাওয়া, আনুর কান্না। অথচ পরে চিন্তা করতে গিয়ে সৌভিক এই
সিচ্যুয়েশনের জন্য কিন্তু নিজেরই দোষ খুঁজে পায়, যা আজও জানায়নি কারুকে, আনুকেও
না। আসলে আনুর মনোযোগ, আনুর তীব্র অনুরাগ, আনুর পৃথিবীতে শুধুমাত্র নিজের থাকতে
চাওযার ইচ্ছেগুলো মাঝেমাঝে এমন কত য়ে অন্যায় কাজ ওকে দিয়ে করিয়ে
নিচ্ছে... সেকথা কেন বোঝেনা আনু- আর?
হায়াতে
পার্টির কথা শুনেছিল সৌভিক। এত রাত হল, আসবে কিভাবে? একবার
আনুর এক কলিগ ওকে ছাডতে এসেছিল এ’রমই রাত করে। সেদিন সৌভিক
স্পষ্ট বলে দিয়েছিল যেন অন্য কারুর গাড়ীতে এভাবে আর কখনো না আসে। বরং ফোন করে
দিলে ও নিজেই পৌঁছে যাবে আনতে। গ্যারাজ থেকে গাড়ীটা বার করল সৌভিক। চিন্তার পারদ
ওপরে উঠছে অথচ সারা মন জুড়ে অভিমানের চোরাস্রোত দিব্যি বহমান। সাতপাঁচ
ভাবতে-ভাবতে সৌভিক পৌঁছে গেল হায়াত। নজরে না পড়ে এমন দূরত্বে গাড়ী পার্ক করে বসে
রইলো সৌভিক, বসে রইলো, বসেই রইলো। কোথায় কি? সময এগোয়, মশার অত্যাচারে অস্থির
সৌভিকের হাত বারবার মোবাইলের দিকে যায়, আবার রাখে...। হঠাত্ ওর মনে পড়ল ঘরের
এসিটা তো বন্ধ করেনি। তাছাড়া সৌভিক যেসময় বেড়িযেছে, তখন এ্যাদ্দুর আসার হিসেবে
অনেক দেরী হয়ে গিযেছিল। হয়তো আনু তখন ফিরতি পথে, হয়তো এতক্ষণে
বাড়ীতে...
একথা মনে হতেই ফের গাড়ী ঘুরিয়ে রাতের নিঝুমে মাত্র ১৫ মিনিটেই ও পৌঁছে গেল বাড়ী। যতটা নিশ্চুপে সম্ভব ততটা শান্ত, অতল অন্ধকারকে সঙ্গী করে সৌভিক ভেতরে ঢুকলো। আলো না জ্বেলে বেডরুমে গিয়ে কিছুই আন্দাজ করতে পারলো না। রাত দুটো বেজে গেছে। বারান্দার কাছে গিযে কাচের এপার থেকে দেখলো নিঃসাড় প্রতিমার মত বসে আছে আনু, ঘুমন্ত পৃথিবীর ধাত্রী য়েন। আর এই নিরিবিলি পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে যে পুলটা কখনো তেমনভাবে নজরেই পড়েনি ওর, তা এক অদ্ভুত তন্ময়তা নিয়ে ধরা দিল সৌভিকের চোখে। মনে হল ওটা আছে বলেই এখানে থাকাটা অর্থবহ। চারতলার এই উঁচু থেকে ফ্লাইওভার একটা কল্কা আঁকা সাড়ীর পাড়ের মত লাগছে আজ। মনে হল একস্ট্রা পয়সা না দিয়েও এই য়ে শিল্পিত সমৃদ্ধি অমনি পেয়েছে, তা ও ভাগ্যবান বলেই। ভাস্কর্যের ভারে, প্রাচুর্য্যে আর ডানা মেলা উড়াল নিযে পুলের এই প্রোভোকেটিং এ্যাপ্রোচে বারান্দাটা যে সবচেযে ধনী, তা আজই বুঝলো সৌভিক। ওর ইচ্ছে হল আনুর কাছে গিয়ে পাশে বসতে, মাথায় হাত রেখে বলতে- ‘আজ থেকে তুমি আনু নও; প্রজ্ঞা, প্রজ্ঞা, একলা আমার কাছে একলা তুমি আমার পূর্ণপ্রজ্ঞা।’ কিন্তু কিছুই বললো না সৌভিক, কিছুই করলো না। স্থানুর মত দাঁড়িয়ে থাকলো পর্দার খুঁটকে মুঠিতে ভরে, আবছায়াকে সঙ্গী করে- ঘরের ভিতরে। কে য়েন মাটীর সঙ্গে আঁকড়ে রেখে দিল পা।
পুলের
ওপর দিযে এই রাতেও বিন্দু-বিন্দু আলো মুখে ছুটে যাচ্ছে ট্রাক। ছড়ানো হ্যালোজেন
আলোয় রাস্তা মায়াময় লাগার কথা ছিল কিন্তু লাগছে না। সন্ধ্যে থেকে ঝোড়ো
হাওয়ায় ঝরাপাতা, ধূলো-বালী মেখে পুল
ধোঁয়া-ধোঁয়া, চিপচিপে। আঁধির মত ধাঁধানো রাস্তা দিয়ে ছোট গাড়ীগুলো তীরবেগে ছুটছে।
কোনো ডেফিনিট ডেস্টিনেশনে পৌঁছতে চায়।
দূর
থেকে এবার যে গাড়ীটা এল, সেটা ভিজে-ভিজে লাগছে না। চকচক করছে, গাড়ীর সাইড
লাইটগুলোও জ্বলছে। খুশীর জল ছড়িয়ে একদম মাথা উঁচু করে ছুটছে গাড়ী। তার মানে
বৃষ্টি হচ্ছে কাছেই। আসছে, আসছে, এতক্ষণে আসছে তাহলে...।
ঝুপ্পুস বৃষ্টিতে আপ্রাণ
ভিজবার আকাঙ্খা নিয়ে পুল আকাশের দিকে হাত বাড়ালো। বাড়ালো না? তেমনই তো যেন মনে
হল পূর্ণার।
*********************************************
7 comments:
গল্পের নামটা পূর্ণপ্রজ্ঞা না দিয়ে ফ্লাইওভারের নামেই রাখতে পারতে। তোমার গল্পের হিরো দেখছি এই ফ্লাইওভার। আমার কিছু কিছু অনুভব দারুণভাবে মিলে গেল। দুর্দান্ত লিখেছ।
অসীমবাবুর সাথে একমত! আর খাসা তো তুমি লেখই ...এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই!! :)
* অসীম, মন দিয়ে পড়ার জন্য ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
* অধরামাধুরী, তুমি তো খাসা বলেই কাটলে, একটু কি খোসা ছাড়িয়ে বলা যেত না কন্যে?
বেশ ভালো লিখেছ কিন্তু দিদি। আমি ভাষার প্রয়োগ শিখি তোমার লেখা পড়ে।
এটা কার জীবনকথা? আমার চেনা লাগল... অবশ্য লিখতে পারলে সব সার্থক লেখাই চেনাপরিচিত লাগে, সেটা কথা নয়....... লেখা ভাল, শেষটা কাব্যিক।
পূর্ণপ্রজ্ঞা গল্পটি পড়লাম । বেশ বড়ো গল্প । খুবই ভালো লাগলো । আরও ভালো লেগেছে এই জন্য যে এটা একটা নামী সাপ্তাহিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে ।
তোমার একান্ত শুভাকাঙ্খী
মৃণাল
ওফ, দে-ড় বচ্ছর বাদে অবশেষে পড়েছ দাদা। আমি খুব খুশী। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকায় প্রকাশের কথা সদি বল, তবে সাম্প্রতিক 'দেশ'-এর লেখাটা তোমায় পড়তে বলব। এখানেই আছে, এই ব্লগের ডানদিকে যে popular post লিস্ট আছে, সেখানে ওপরেই আছে 'স্বপ্নপথ বেয়ে'। ওটা তোমাকে পড়তেই হবে। দাবী, এটা মঞ্জুর মৃণালদাদার কাছে দাবী। তবে একটাই ভয়, এ'লেখাটাই বড় লেগেছে, ওটা কিনা আরেকটু বড়। হোক্ গে, তবু তুমি পড়বে... বলবে... অপেক্ষায় রইলাম।
মাঝেমাঝে সংযোগহারা হয়ে গিয়ে কেন যে মন খারাপ করে দাও...
Post a Comment