Thursday 10 November 2011

আমার প্রিয় তাল গাছ



এক পায়ে দাঁড়িয়ে-
আবহমান কাল ধরে যত রাজ্যের খুনসুটির মুল্যবান সাক্ষী ইনি। শৈশবের ঘুম মাখা চোখ ওর মটকে যাওয়ার আকুল প্রতীক্ষা করে। নির্মম ভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে মনে করিয়ে দেয় পিঠে পায়েসের দিন গুলির স্মৃতি। রোজ রোজ ও নিজের মাথায় মেঘ দিয়ে তেল মাখে।শালিক দম্পতির অশান্তির ওম দিয়ে শীত কালে রোদ পোহায়। ও কিন্তু ছোট্ট অপুর নীল কুঠির মাঠের ঘুড়ির খবর রাখে। গোধূলি বেলায় ইস্পাত রঙের স্বপ্নের সাথে তার অভিসার কারো অলক্ষ্যে থাকে না। তিন সমুদ্র সাতাশ নদী পার না হতে পারলেও, অচিন দেশের রূপকথা ওর পাতার আঙ্গুলের ফাঁকে ঝিকমিক করে ওঠে। পেশীল মুঠির স্পর্শ ওর স্নেহরস নিংরে নিলেও আমাদের ভালবাসতে ভোলে না। ঝড়ের দাপট ওকে ভেঙ্গে দিতে চেষ্টা করে, তবু নুইয়ে পরে না। নতুন ভাবে বাঁচার ভরসা দেয়, স্বপ্ন ভরে দেয় দুই চোখে । তাই আমার এত ভালোলাগার, এত ভালোবাসার। আক্ষেপ একটাই, কোনোদিন ওর শিখরের পরশ পেলাম না । ও কোনোদিন ধরা দিল না। এক মাথা ভরতি দেমাক নিয়ে আকাশে মুখ ডুবিয়ে রেখে দেয়। একা থাকে, সবার চেয়ে আলাদা, সবার আড়ালে, অভিযোগহীন ভাবে। জানিনা কারো প্রতীক্ষায় ওর সোনালী দিন কাজলঘন রাতে পর্যবসিত হয় কিনা। শুধু এটুকু জানি যে লাল হলুদ মেঘের গুঁড়ো মেখে ও যখন আমার দিকে তাকায়, আমি ওকে ঠিক চিনতে পারিনা। মনে হয় রুশ দেশের উপকথার ভিড় ঠেলে উঠে আসা কোন একলা দ্বীপে বন্দী রাজকন্যের কথা। কুঁচবরন কন্যা, মেঘের মত চুল আর হরিণের মত টলটলে চোখে লেগে থাকা এক রাশ না বলা অভিমান। ওই শোন, মেঘ কে এত ভালবাসিস না, ও উড়ে-উড়ে যায় ছুটির মত। মাটিকে ভালবাস, মাটিকে নিয়ে থাক, মাটির গন্ধ তোর শিরা উপশিরায় । ওকে চিনতে শেখ । অনেক ভাল থাকবি রে পাগলি , ও তোকে কোনোদিন ছেড়ে যাবে না । 
ভাল থাকিস।

2 comments:

Unknown said...

বাহ্, বাহ্, তৃষিতা... মুগ্ধ হয়ে গেলাম প্রিয় তালগাছের সঙ্গে তোমার জুড়ে থাকা মনের হদিশ পেয়ে। তোমার বয়ানে ভর করে তালগাছ আত্মতায় গেলে ঠিক এমনই যেন হতো তার অভিব্যক্তি। বেশ তো লিখছ মুক্তছন্দে 'না গদ্য না কবিতা'-র ট্যাগ লাগানো মুক্তগদ্য।

TRISHITA BANERJEE said...

ধন্যবাদ মঞ্জুদি