স্বপ্ন 3
মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী 17.6.11 দুপুর পৌনে একটা- ছাতাটা দাও তো বুলবুল, এখুনি বৃষ্টি এল বলে...
দরজার কাছে আমের থলিটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শ্বশুর চাইলেন। আমি বারান্দায় বেরিয়ে আকাশে তাকিয়ে দেখি সত্যিই বেশ সাজগোজ করে মেঘ ধেয়ে আসছে।
- ওসব পরে দেখো, তাড়াতাড়ি ছাতাটা দাও, বসিরহাট থেকে ইরফান এসেছে কাঁদি-কাঁদি তাল নিয়ে। কতদিন যে কচি তালশাঁস পাইনা.... বৃষ্টি নামলেই মিঞা সব গুটিয়ে-ফুটিয়ে পালাবে। টুকলু বাড়ি আছে তো?
শ্বশুর বলে যাচ্ছেন শুনতে-শুনতে আমি ছুট্টে গিয়ে ছাতাটা এনে দিলাম। উনি গ্যেট খুলে বেরিয়ে গেলেন। দরজা বন্ধ করে পিছু ফিরতেই আমার মনে হল- আচ্ছা শ্বশুর কেমন অন্যরকম না? দেখতে এ’রকম কি? মনে করবার চেষ্টা করলাম যখন মারা গেছেন তখন কেমন দেখতে ছিলেন? এই তো পেয়েছি। আমার পরিচিত সেই কোঁকড়া চুলের, ফোকলা দাঁতের.... আমিই তো কপালে চন্দনের ফোঁটা এঁকে দিয়েছিলাম।
এর সবটাই চলছে স্বপ্নের মধ্যে। এমন কি এই ঘরোয়া মানুষটাকেও আমি কখনো দেখিনি কিন্তু!!!! ছেলে বাড়ি আছে কিনা বা আমি জল, ছাতা, শাল এগিয়ে দেব, এমন অবস্থাই কখনো আসতে দেননি জীবনে। অসম্ভব স্বাবলম্বী, গেরেম্ভারী, অহংকারী মানুষটা শুধু মৃত্যুর আগের মাস দুয়েকই....
স্বপ্নের মধ্যেই এ’সব ভাবনা আমার... বেল বাজল স্বপ্নেই। দরজা খুলতেই শ্বশুর হাঁড়ি নিয়ে ঢুকলেন। তা’তে কিলবিল করছে দেখি কুচোকাঁচা মাছের পোনা। বসে পড়ে উনি মেছুয়াদের মতন এবার জল থাবড়াতে লাগলেন।
- বুঝলে বুলবুল, এ’ভাবে অক্সিজেন সাপ্লাই করতে হবে, নাহলে সব ক’টা মরবে।
আমার মনে হল না যে তালশাঁস আনতে গিয়ে এটা কোত্থেকে, ছাতাটা কই বা উনি দেখতে এমন বদলে গেলেন কি’ভাবে? বরং দেখলাম মানুষটাকে আমি শ্বশুর বলে দিব্যি গ্রহণ করছি। ইনি এঁনার ছেলের চেয়েও বয়সে ছোট, গায়ের রং মাজা, মুখে গ্রাম্য সারল্য। যা আমার শ্বশুরের ব্যাক্তিত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত।
অথচ প্রশ্নবিহীন ভাল লাগা নিয়েই তো দেখি ঘুম ভাঙল। মনে না কোনো ভীতি, না কোন অন্য উচাটন। কি যে সব স্বপ্ন বুঝিনা। শুধু বুঝি ভাল লাগলেই হল। ভয়ের স্বপ্ন, উঁচু থেকে পড়ে যাবার স্বপ্ন, সাপের স্বপ্ন আমার একদম ভাল লাগে না....
যাই দেখি না কেন যেন আনন্দ পাই এমন ইচ্ছে থাকে বলেই কি? কিজানি....
2 comments:
আচ্ছা স্বপ্ন কাকে বলে? ঘুমের মধ্যে অবচেতনে মাথায় যে সিম্যুলেশন হয় তাকেই কি স্বপ্ন বলে? তাই যদি হয়, তাহলে সেই ঘটনার ছাপ যখন চেতন মস্তিষ্ক গ্রহণ করে তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেটি মস্তিষ্কের নিজস্ব যুক্তিজাল মাফিক পরিবর্তিত হয়। সেকারণে কখনো কখনো স্বপ্ন আমরা মনে রাখতে পারি না। চেতন মস্তিষ্ক গ্রহণ করতে না চাইলে সেটি তৎক্ষনাৎ উবে যায়। তাই
সাধারণভাবে স্বপ্ন বলতে যা বলা হচ্ছে সেটি আদৌ কি স্বপ্ন, না কি স্রেফ একটা প্রোজেকশন। আমার মনে হয় স্বপ্নকে ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। বড়জোড় বলা যেতে পারে স্বপ্নের রূপকল্পনা।
এই তো এসেছ তিতাস। তুমি না এলে এই তুখোড় মন্তব্যগুলো ভীষণ মিস করি.... সত্যি বলছি। সোজাসুজির ভাল আর কালোর মাঝেও যে কত কথা আছে, সেড আছে তার খবর দেয় তোমার মন্তব্য। অথচ তুমি এখন আনমনা পথিক, বৃষ্টিতে ভিজতেও পারো অথবা এড়িয়ে ছাতার আড়ালে গা বাঁচাতেও পারো। ব্যস্ত? কিজানি....
এবার আসি উত্তরে- আমিও স্বপ্ন ভুলে যাই। তবে ভাল লাগা যদি থাকে, তাকে না লিখে ফেলা পর্যন্ত মনের মধ্যে নিয়ে কচরকচর কথা বলি, উঠিবসি। ভাল স্বপ্নকে আমার হারাতে ভাল লাগেনা তিতাস। লিখে ফেলার পর আমার মুক্তি... আগামী স্বপ্নের প্রস্তুতি।
Post a Comment