Wednesday 13 July 2011

অলোকদা ও তিতাসের দৃষ্টিতে আমার কবিতা

মঞ্জুশ্রী রাযচৌধুরী

আমি প্রথমেই এই লেখায় অলোকদার লেখা মানুষ বনসাই থেকে একটা লাইন তুলে শুরু করি- " বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর' – এখন মানুষ মেলাতে চায় না, বরং তর্ক জিইয়ে রাখতে চায়, তাই অগাধ বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন নেই, বনসাইয়ের মত শো-পিস হিসাবে একটু-আধটু থাকলেই চলবে"

এই কথাটার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণতঃ সহমত। লিখতে জানলে বা বলতে পারার ক্ষমতাটা দুর্দান্ত থাকলে নয়কে হয় বা হয়কে নয় করাটা বাঁয়া হাতকা খেল। যুক্তিও সেক্ষেত্রে পারস্পরিক বাঁধন নিয়ে এমন সেজেগুজে আসে, যে মনে হাজার প্রশ্ন তৈরী হয়, নিজেকে বিভ্রান্ত লাগে। আমার কাছে (অলোকদা ও তিতাস) দুজনের লেখাই খুব মজবুত, প্রাসঙ্গিক ও খুবই বাঁধনপটু লেগেছে। মানে যখন যাকে পড়ছি, তখন তার বলাটা একদম যথার্থ ও গ্রহণযোগ্যতায় যেন 100 শতাংশ। কিন্তু ব্যক্তিগত বিচারে বুঝতে বললে মন অন্য কথা বলছে, যা আমি মোটেই তুলে ধরবো না বা খুলে বলব না। কেননা অন্তরস্থিত কিছু বিশ্বাসকথা আমার এতই সেনসিটিভ যে তাকে আদর করে কারুর কোলে দিলে হয়তো তার্কিক ঝাঁঝে মরবে অথবা ফিরে কেউ না তাকালে সেই মাড়ানোয় মরবে। তাই তর্কের রাস্তায় না গিয়ে সোজাসুজি নিজের কবিতাটার কথায় আসি।

* অলোকদাকে বলি- কবিতাটি মাঝখান থেকে তুলে দেওয়ায় এ'টির মর্মোদ্ধার হয়নি, তাই সম্পূর্ণটা উল্লেখ করই মনে হয় শ্রেয় ছিল। আপনার হয়ে আমি গোটা লেখাটা নীচে দিলাম্।

* আর তিতাসকে বলার, যে কবিতাটি সম্পর্কে একটা ভুল তথ্য পৌঁছে আছে তোমার কাছে। তুমি বলেছ এটি মূলত ব্যক্তিজীবনের নিজস্ব সংসারকেন্দ্রিক ভাবনা। না ব্যাপারটা তা নয়। বরং এটি একটি মানসিক অবসাদের কথা বলছে যা সমষ্টির মধ্যেও অহরহ প্রতিভাত হয়। কষ্ট, হাসি, আনন্দ, ক্রোধ এমনি যা কিছু অনুভবকে নিজের করে নিয়ে অন্যের করে তুলতে পারাটাই সার্থকতা এবং ওটাই কলাকৃতি। সেই অর্থে এটি ব্যর্থ বলতে পারোনা, বলতে পারো সৌকর্য্যে বা কৃতিত্বে খাটো। কেননা এর বিন্যাসের মধ্যে সমষ্টির অনুভবকে সামিল করানো আছে। লেখার মধ্যে বাবাআর আমি পাচ্ছো বলে এটা একান্তই আমার এই ভাবনাটা বরং বড়ই সমাপাতন। তিতাস, ব্যক্তি অনুভব সমষ্টিকে ছুঁতে পারলে তখনই তার হয়ে ওঠাটা হয়ে ওঠা। তাবলে এই দাবী করছি না যে আমার এটিও হয়ে ওঠা। শুধু এটুকু জানাই, এটি আত্মকেন্দ্রিকতার হাত ধরে ডানা মেললেও উড়ালে দিতে চেয়েছিল সামগ্রিকতার আমেজ। এখন যদি তা খর্বতা প্রাপ্ত হয়, হতেই পারে.... তাবলে তার একজিসটেন্সই নেই, এটা ঠিক নয়।  

ভেবেছিলাম এসব কথা নিয়ে নাড়াঘাঁটা করবো না.... কেননা নিজের লেখাকে ছেনেবেনে দেখা ও দেখানো বেশ ডিফিকাল্ট। তবু পালাতে পারলাম না, কেননা অবস্থা পরিপ্রেক্ষিত খানিকটা চাপের সিচ্যুয়েশনে ফেলল। তাই ভাঙতে হল নিজেরই লজ্জা, কবিতার আড়, নিজেরই লেখার স্বপক্ষে যেতে হল বিস্তৃত আলোচনায়, যা একজন কথাকারকে এমব্যারাস করার পক্ষে যথেষ্ট।

তবু বলি, এই ধরণের আলোচনার দরকার আছে। কিছু ভুল যেমন ভাঙে, কিছু ভাবনা তেমনি গড়েও ওঠে।

সবের কৃতিত্ব সম্পূর্ণ তিতাসের। সহজে সবকিছু মেনে নেওয়ার মত এ ছেলে মোটেই সাধারণ নয়্, এটা বলতেই হল।

যা নিয়ে নাড়াঘাঁটা, এবার সেই কবিতাটা-

বাবা বলেছিল
-----------
বাবা বলেছিল ছাতা হয়ো মেয়ে
ছড়িয়ে যেও বটগাছের মত ডালপালায়।
বাবা বলেছিল ছায়া দিও মেয়ে
ছায়াকামী মানুষের স্নিগ্ধ ব্যজন।

আমি বটগাছ আজ
আমি ছড়িয়েছি ডালপালা।
কিন্তু ছায়া কই,
আমি ছাতা হতেও পারিনি গো।
সোনালী কারুকাজের সেন্টার টেবিলে
একবুক যত্ন-জনের ঘরের
শোভা হতে গিয়ে
আমি বনসাই হয়ে গেছি বাবা।
*****************

3 comments:

তিতাস বেরা said...

আরে কী মুশকিল 'এটি মূলত ব্যক্তিজীবনের নিজস্ব সংসারকেন্দ্রিক ভাবনা' বলতে তোমার কথা বলেছি নাকি? সেরকম হলে তো তোমার নাম দিয়েই লিখতে পারতাম। তোমার কি করে মনে হল, লেখার মধ্যে 'বাবা'/'আমি'পাচ্ছি বলে সেটাকে তোমার সাথে জুড়ে দেবো। আমি কী ক্লাশ টু এ পড়ি নাকি?
কবিতাটা কোন এক মেয়ের তার বাবাকে উদ্দেশ্যকে করে কিছু আত্মকথন,এটাতো ঠিক। সেই হিসেবেই বলেছি 'এটি মূলত ব্যক্তিজীবনের নিজস্ব ...'

Unknown said...

তার মানে বুঝিয়াছ, এক কথার একশো মানে হয়। একটু এইদিক হইতে ওইদিক হইলেই 'ঘ্যাচাং ফু' করিবার আগে দুইবার ভাবিতে হইবে, তাহা না হইলে তুমিও উড়িবে।

ঠিকই ধরিয়াছ, 'ক্লাশ টু....

হ্যাঁ,মধ্যেমধ্যে তুমি ক্লাশ টু-এর বষসকালে পৌঁছিয়া জেদ করো আবার কখনো অতি বিজ্ঞজনোচিত অসামান্য লেখনীর দ্বারা পাঠককে সমৃদ্ধ করো।

যাহা হউক, আপাততঃ তোমার সর্ব শ্রীবৃদ্ধির কামনা মনে রাখিয়া ইতি করি।

Asim said...

আমি পড়লুম---- কিন্তু তিতাস বলেছে, অলোকদা কই? তারপরে বলব্।