এই ইনকমপ্লিট শিরোনাম ইচ্ছে করেই। নিজের মনোভঙ্গী সম্পর্কে আগাম জানান দেব না। কেননা আমি যা ভাবি আর সমাজ যা ভাবে সেখানে আমার অবস্থানটা ঠিক কোথায়- কাছে না দূরে, তা জানতে চাই। তাবলে একেবারেই বলব না এমন নয়, তবে বাকীদের ভাবনাপথের হদিশ চাই আগে। কথা দিলাম অভিমতের অভিমুখ দেখে বদল করবো না নিজের প্রত্যয়। কেননা আমি কী ভাবি তা একশো শতাংশ স্পষ্ট আমার কাছে। তাই এই লেখার সঙ্গেই সেই বিশ্বাস-কথাও এখুনি লিখে ফেললাম.... খালি জানালাম না। কথোপথনের আঙ্গিকে যা লিখছি, তা টিভির একটি চ্যানেলে দেখা- মন, নীতিবোধ, শরীর, সমাজ ইত্যাদি ভাল রাখার উপায় হিসাবে বিভিন্ন মনস্তত্ববিদ ও আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে ফোনে লাইভ ইন্টারাক্সনের একটা অনুষ্ঠান। দেখতে-দেখতে মনে নানান কথা উঠছিল, নানান উত্তরও খুঁজছিলাম। পার্টিকুলার এই ব্লগঘরে যেহেতু বিভিন্ন বয়সের মানুষজনের আসা-যাওয়া, তাই এখানেই লেখাটা রাখলাম। যে কথাটা মনে উঠেছে ও বাকীরা যা মনে করছে তার মধ্যের সমতা-বিষমতার আন্দাজ পেতে চাই ঠিকঠাক।
টিভি চ্যানেলে মতামত বাঁটোয়ারা করতে থাকা বিশেষজ্ঞদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা সমাধান দিতে চাওয়ার অনেস্ট ইচ্ছে নিয়ে বলবার কিছু নেই, কেননা তাঁরা সত্যিই অনবদ্য। কিন্তু যে সব ফোনপত্র আসে, তা থেকে কিছুটা হলেও তো আন্দাজ পাওয়া যায়, যে সমাজ কোন পথে চলেছে? উদাহরণ- 1.
আমি ‘অমুক’ বলছি। জানেন দিদি, আমার স্বামী একেবারেই ভাল না। বিয়ের প্রথম দিনই বুঝেছিলাম এর সঙ্গে আমার জমবে না। আমার বয়স 26, একটি সন্তান আছে। ও এত খারাপ ব্যবহার করে.. বাড়িতে কেউ এলেই ওর রাগ বেড়ে যায়। তারা চলে গেলে কখনো- কখনো রেগে উনি জিনিসপত্রও ছোড়াছুড়ি করেন। আমি খুব প্রবলেমে দিদি।
মনস্তত্ববিদ- উনি কেন রাগারাগি করেন, বোঝার চেষ্টা করেছেন? ওঁনার কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো বা আপনার সঙ্গে উনি একটু বেশী সময় কাটাতে চাইছেন এমন নয়তো?
‘অমুক’ - না, না তা নয়। কাজের জায়গাটা ওর ব্যাপার- আমায় বলে না, আমি জানতেও চাই না। আসলে সবসময় খ্যাচখ্যাচ চলে, আমাকে বাড়িতে আটকে রাখার চেষ্টা করে, ওর সঙ্গে কেন গল্প করিনা, কথা বলিনা, এইসব....
মনস্তত্ববিদ- তা গল্প করেন না কেন? আপনি বিয়েটা কী নিজে করেছেন?
‘অমুক’ - হ্যাঁ দিদি নিজেই, কিন্তু তখন তো আর..... অস্থির আছি দিদি, সমস্যাটা খুব গভীর- বেড়োবার রাস্তা পাচ্ছিনা.....
মনস্তত্ববিদ- কিচ্ছু অসুবিধে নেই, এটা কোনো সমস্যাই না। আপনি ফোনটা রাখুন
ও শুনতে থাকুন....
‘অমুক’ - না দিদি লাইনটা ছাড়বেন না। আসলে ছেলেটা তো আমার স্বামীর না,
নীচের তলার ফ্ল্যাটে থাকে অখিলেশ, তার। জানেন দিদি, অখিলেশ না, ছেলের কোনো দায়িত্ব নেয় না। কখনো দুটো চকলেট, একটা খেলনা, ড্রইংবুক এইসব দিয়ে চালাচ্ছে আর স্বামী না থাকলে..... আমিও দিদি ওকেই ভালবাসে ফেলেছি জানেন।
মনস্তত্ববিদ- কী করে জানলেন যে ছেলেটি অখিলেশের? আপনি স্বামীসঙ্গ করেন
না?
‘অমুক’ - হ্যাঁ দিদি, তা ঠিক আছে। কিন্তু বিয়ের তিন বছর অবধি ছেলেমেয়ে
না হওয়ায় ডঃ দেখিয়েছিলাম, তখনই জেনেছিলাম ওর স্পার্ম কাউন্ট...
মনস্তত্ববিদ- ও বুঝেছি, তা স্বামীকে কী বুঝিয়েছেন? ছেলেটা কোথা থেকে?
‘অমুক’ - ঐ যে তখন ডঃ দেখাচ্ছিলাম না, তো স্বামী ভেবেছেন তা’তেই....
মনস্তত্ববিদ- বেশ, এখন আপনি কী চাইছেন?
‘অমুক’ - ছেলেটা যে অখিলেশের তা অখিলেশ জানে। এখন সেটা ও ভালমত
বুঝুক, ছেলেকে বাবার মত ভালবাসুক। তাছাড়া আমি চাই
অখিলেশকেই আমার ছেলে বাবা বলে ডাকুক। কিন্তু অখিলেশ শুধু
আমাকেই...... আপনি দিদি বুঝতে পারছেন?
মনস্তত্ববিদ- এ’ ব্যাপারে আপনার স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন। এ’ভাবে তো হবে না
ভাই…. আপনাকে সেক্ষেত্রে ডিভোর্স নিতে হবে ও অখিলেশের সঙ্গে নতুন করে....
‘অমুক’ - না না না...... ডিভোর্স চাই না দিদি। অখিলেশের তো তেমন কিছু
রোজগার পাতি নেই, আমার স্বামী এমনিতে খুব ভাল। তাছাড়া
নীচেরই ফ্ল্যাটে.....
মনস্তত্ববিদ- বাঃ, আপনি তো খুব সাহসী মহিলা। সন্তান কামনায়.....
তা বেশ। আপনার শরীরের ওপর সর্ব প্রথম আপনারই অধিকার। তাই তা নিয়ে আপনি কী করবেন তা আপনি জানেন ও সেইমত
চলেছেন। ঠিকই তো আছে, সমস্যা কোথায়?
‘অমুক’ - সমস্যা হচ্ছে আমার ছেলেটাকে নিয়ে। সে কখনো আমার স্বামীকে বাবা বলছে কথনো অখিলেশকে। জানেন দিদি, অখিলেশ সব জেনে বুঝেও
কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেনা, কেমন যেন সরে থাকছে। অথচ......
দিদি আমার রাতের ঘুম চলে গেছে। আপনি আমার অবস্থায় পড়লে
কী করতেন যদি সেটা বলেন, আমি এখন তাই করবো। আমায়
বাঁচান।
মনস্তত্ববিদ- আমি মানুষটা যেহেতু আলাদা, তাই আমি কী করতাম তা এখানের
আলোচনায় না এলেও চলে। একজন মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আপনার সুস্থতার চেষ্টা করতে পারি শুধু।
‘অমুক’ - হ্যাঁ দিদি, তা বললেও হবে।
মনস্তত্ববিদ- আপনি ইমিডিয়েটলী গোপনীয় সম্পর্কটা বন্ধ করুন, স্বামীকে সবটা
খুলে বলুন। আপাতভাবে এই কাজের একটা ঝাপটা তো আসবেই।
চতুর্দিকের বদল হাওয়ায় আজকের যে সমাজ তার অস্তিত্ব নিয়ে
নিজেই সংকটে, সেই আপাত সমাজ তো সহজে আপনাকে ছাড়বে না।
যাই হোক, প্রাথমিকভাবে এই গোলোযোগ-টাকে গ্রহণ করুন ও দেখুন
কী হয়। সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে কোনটা ঠিক, কীসে
আপনার ভাল হয় বা কোথায় আপনি আনন্দ পান.... আপনি সাহসী
মহিলা, ঠিকই সামলাতে পারবেন। আশা করি বোঝাতে পারলাম।
ডিসকানেক্টেড হল লাইন ও আমি মনস্তত্ববিদের ‘সাহসী’ বলে এ্যাপ্রিসিয়েট করা কথা ও বদল সমাজের গাথা শুনে আমার মনোভূমের দিকে তাকালাম। মানুষের এই বদলে যাওয়া মুখচ্ছবি দিয়েই তো সমাজছবি তৈরী হচ্ছে- তাই না? কে কার ওপর নির্ভরশীল? মানুষ সমাজের ওপর না সমাজ মানুষের ওপর? আমি এমনিতেই একটু কল্পনাপ্রবণ। তায় তার্কিক বিষয় হলে মন হাওয়ার বেগে দৌড়তে চায়। আমি তখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছিলাম- যে যদি গল্প লিখি, আর এই চারটি চরিত্রকেই বেছে নিই (স্বামী-স্ত্রী-অখিলেশ-মনস্তত্ববিদ), তবে কাকে ধরে এগোব? ভেবে দেখলাম চারটে চরিত্রই খুব মজবুত। আমার মস্তিষ্কে এরা প্রচুর খাদ্য জোগাচ্ছে। তবে লিখতে বসলে শুরু করতাম সোজা অংক দিয়ে- মনস্তত্ববিদ। আমার গল্পের নায়িকা বা নায়ক।
মন যখন বেশ লিখতে পারার ভাবনায় তৃপ্তিস্বাদে মশগুল, তখনই সমস্ত ভাবনাকে আমার ছিঁড়েখুঁড়ে দিয়ে চ্যানেলে কলারের ফোন-
- হ্যালো, হ্যালো..... শুনতে পাচ্ছেন? আমি বাগডোগরা থেকে ঋতম বলছি। আমি প্রাইভেট ট্যুইশন করি। আমার প্রবলেমটা হচ্ছে- আমি স্নেহবশতঃ কিছু ছেলের সঙ্গে......
4 comments:
পড়তে দারুণ লাগল, তবে শেষে এসে কি বলতে চাইলে বল তো?
পড়তে ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল, কিন্তু আমি যে মতামত চেয়েছিলাম অসীম....
আর শেষে কী বলতে চেয়েছি? তা পড়ুয়াদের উত্সাহের ওপর নির্ভর করছে.... লেখা নিয়ে এগোব না থামবো।
শুনে ভাল লাগল অসীম, কিন্তু আমি যে ভাবনাপথের হদিশ পেতে চেয়েছিলাম তা কই? এটা পড়ে তোমার মনোভঙ্গী? আর শেষে এসে যা বলতে চেয়েছিলাম, তার জন্য কিছু পাঠকের মনের কথা জানা আমার জরুরী ছিল। তা মানুষজন যদি কথা না বলে, তো কত আর একা একা বলি!!!!!
গল্প লিখতে চাইলে তুমি এদের মধ্যে যাকে খুশি নিয়ে লিখতে পারো । তারপর কলমের খোঁচায় , কল্পনার জোরে জিতিয়েও দিতে পারো যাকে খুশি। যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা দিতে পারো । কিন্তু বাস্তবের মানুষগুলো যে জ্বলে পুড়ে মরে গেল...কতদিন ধরে কত যুগ ধরে। সমাজ আর ব্যক্তির লড়াই টা নিয়ে ভাবার সময় কি আজও আসেনি? কত যে প্রশ্নের কোনও উত্তর পাইনা......
কেউ যখন এই নৈতিক দ্বিধা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করে আমরা বলি, তোমার মন যা চায় তাই কর। মন কক্ষনো ভুল বলে না। কিন্তু ওই মন টাকে তো শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করেছে সমাজ । কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল , কি করা উচিত, কি অনুচিত... কত কত প্রশ্ন দিয়ে তৈরি একটা জটিল আবর্ত। অফুরন্ত বিতর্ক চলতে পারে। থামবেই না। আবেগ আর নীতির লড়াই যেমন থামবে না।
আর আমাকে যদি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করো, বলব, কাউকে না আঘাত দিয়ে, না ঠকিয়ে, নিজেকেও না ঠকিয়ে নিজের স্বাধীনতা , ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চাই। তাতে যদি কখনও বৃহত্তর স্বার্থ-র জন্যে ক্ষুদ্র স্বার্থ ছাড়তে হয় হবে। বৃহত্তর স্বার্থের নাম শান্তি। একটাই জীবন তো......
Post a Comment